
ছিলেন স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এবং কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কুখ্যাত শাহীন আহমেদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন। সেই সুবাদে নারী হয়েও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়।আওয়ামী লীগের লাগাতার ১৬-১৭ বছর ক্ষমতার দাপটে তিনিও নিজ এলাকা শুভাঢ্যায় তৈরি করেছিলেন আলাদা বলয়। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ক্ষমতার সঙ্গে শুভাঢ্যা ইউনিয়ন ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও তিনবারের মেম্বার বিতর্কিত সাথী আলীর ক্ষমতার দৌড় ছিল মন্ত্রণালয় পর্যন্ত।গত জুলাই বিপ্লবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হলে কিছুদিনের জন্য আত্মগোপনে চলে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নেওয়া সাথী আলী। তবে তিনি ফিরেছেন আরও ক্ষমতাধর হয়ে অর্থাৎ আওয়ামী লীগ সরকার আমলের ইউপি মেম্বার এখন স্বাধীন বাংলাদেশের চেয়ারম্যান! আন্দোলন দমাতে লাঠি হাতে অবস্থান নেওয়া সাথীর বেশ কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলেও তার কোনো প্রভাব পড়েনি রাজনীতির মাঠে, ঠেকেনি মেম্বার থেকে চেয়ারম্যান হওয়া। সচেতন মহল মনে করছে, বিশেষ সুবিধায় ছাত্র হত্যা চেষ্টা এবং বিস্ফোরণ মামলার আসামি সাথী আলীকে শুভাঢ্যা ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যা জুলাই বিপ্লবে শহীদ এবং নিপীড়িত ছাত্র-জনতার সঙ্গে বেইমানি।
স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে সরাসরি অংশগ্রহণকারী, ছাত্র-জনতার ওপর হামলাকারী, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যাচেষ্টার একাধিক মামলার আসামি সাথী আলীকে স্বাধীন বাংলাদেশে গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া শহীদের রক্তের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিনাত ফৌজিয়া স্বাক্ষরিত একটি পরিপত্র জারি করে সাথী আলীকে শুভাঢ্যা ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়। প্রশাসন বলছে, যেসব ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচিত চেয়ারম্যানরা ধারাবাহিকভাবে অনুপস্থিত সেসব স্থানে সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ মোতাবেক প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সেসব ইউনিয়ন পরিষদে জনস্বার্থে গ্রাম আদালত পরিচালনার জন্য গ্রাম আদালত আইন, ২০০৬ এর ৫(২) ধারা মোতাবেক গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের দোসর সাথী মেম্বারকে ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেরানীগঞ্জ উপজেলার প্রতিনিধিরা প্রতিবাদ জানান এবং কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিনাত ফৌজিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তার নিয়োগ বাতিলের দাবি জানান।
বিষয়টি নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে, এমনকি পালিয়ে থাকা অনেক আওয়ামী লীগ নেতাও বলছেন মামলা খেয়ে কেউ পালিয়ে থাকবে, আবার কেউ চেয়ারম্যান হবে এটা কি বৈষম্য নয়? আসলে এসব টাকার খেলা। মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নিয়োগ হচ্ছে।
সেই আওয়ামী লীগ নেত্রী এখন চেয়ারম্যান! বাড়ছে ক্ষোভ বিষয়টি নিয়ে যেকোনো সময় যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও মনে করেন বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। এ বিষয় জুলাই বিপ্লবে আহত আয়াতুল্লাহ সায়মন চৌধুরী বলেন, উপজেলা প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। বিষয়টি তাদের আরও যাচাই-বাছাই করা দরকার ছিল। আওয়ামী লীগের দোসরদের পুনর্বাসন করে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, বিষয়টি খুবই লজ্জাজনক।
এ বিষয় বৈষম্যবিরোধী কেন্দ্রীয় ছাত্র আন্দোলনের প্রচার সেলের সদস্য ইমরান হোসেন বলেন, ‘আমরা জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে এ জন্য রক্ত এবং জীবন দিয়েছি? যাদের হাতে ছাত্র-জনতা নির্যাতিত হয়েছে তারাই আবার বিচারক? এ গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান নিয়োগের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আশা করি, প্রশাসন তাদের এ ভুল সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবেন। ’
নবনির্বাচিত গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দু’টি মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিনাত ফৌজিয়ার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, কেরানীগঞ্জ উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে বর্তমানে তেঘরিয়া ইউনিয়নে নির্বাচিত চেয়ারম্যান (আ.লীগ), হযরতপুর ও তারানগর ইউনিয়নে প্যানেল চেয়ারম্যান এবং বাকি ৯টি ইউনিয়ন কোন্ডা, শুভাঢ্যা, বাস্তা, কালিন্দী, আগানগর, জিনজিরা, রুহিতপুর, শাজা ও কলাতিয়ায় প্রশাসক দায়িত্ব পালন করছেন।