ঢাকা, সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫,
সময়: ০৭:১৯:৫৮ PM

ভারতের ওয়াক্ফ আইন তীব্র প্রতিক্রিয়া বিএনপির

স্টাফ রিপোটার।। ঢাকাপ্রেস২৪.কম
06-04-2025 05:06:01 PM
ভারতের ওয়াক্ফ আইন তীব্র প্রতিক্রিয়া বিএনপির

কয়েক দিন আগে ভারতের পার্লামেন্টে মুসলিম ওয়াক্ফ (সংশোধন) বিল ২০২৫ নামে পাস হওয়া আইনের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিএনপি।রোববার (০৬ এপ্রিল) বিকেলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আইনটির বিভিন্ন ধারা বিশ্লেষণ করে আমরা দেখেছি যে, ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমানদের অধিকার খর্ব করা এবং বৈষম্যমূলক আচরণের চেষ্টা করা হয়েছে এই আইনে। ভারতে মুসলমানরা এবং বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন এই বিলকে অসাংবিধানিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।রাজধানীর গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাঈল জবিউল্লাহ ও আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল উপস্থিত ছিলেন।সালাহউদ্দিন আহমেদ লিখিত বক্তব্যে বলেন, ওয়াক্ফ হলো ইসলামি দানের একটি প্রাচীন ব্যবস্থা। ওয়াকফের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি স্থায়ীভাবে সাধারণত জমির মতো কোনো সম্পত্তি ধর্মীয় বা জনহিতকর কাজে ব্যবহারের জন্য দান করেন। এ ধরনের ওয়াক্ফ সম্পত্তি বিক্রি করা বা কারও নামে হস্তান্তর করা যায় না।

তিনি বলেন, ভারতের জনসংখ্যার ১৪ ভাগ অর্থাৎ প্রায় ২০ কোটি মুসলমানদের ধর্মীয় ঐতিহ্য, অধিকার, সংস্কৃতি ও স্বার্থবিরোধী এই আইনকে অপব্যবহারের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে, যা ইসলামি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যাপক বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। ভারতে ওয়াক্ফ বোর্ডগুলোর অধীনে প্রায় ১০ লাখ একর সম্পত্তির মধ্যে অধিকাংশই ব্যবহৃত হয় মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান ও এতিমখানার মতো জনকল্যাণমূলক কাজে। নতুন আইনে পরিচালনা বোর্ডে অমুসলিম সদস্যদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি বিতর্কের সৃষ্টি করেছে, যার ফলে মুসলিম নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন হতে পারে।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, মুসলমানদের ধর্মীয় অধিকারে হস্তক্ষেপে কারণে এবং বৈষম্যমূলক আচরণের ফলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে এ রকম কোনো পদক্ষেপ রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে গ্রহণ করা সমীচীন নয় বলে আমরা মনে করি।

তিনি আরও বলেন, ভারতে অন্য ধর্মাবলম্বীদের এই জাতীয় বোর্ডে অথবা কোনো আইনি সংগঠনে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের কোনো অন্তর্ভুক্তি দেখা যায় না। সেক্ষেত্রে এ আইনটি একটি বৈষম্যমূলক আইন হিসেবে বিবেচিত হবে। নতুন আইনে পরিবর্তনগুলো শত শত বছর আগে প্রতিষ্ঠিত ওয়াক্ফ জমির উপর গড়া মসজিদ এবং অন্যান্য ইসলামি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে তুলতে পারে। নতুন আইনে অমুসলিম সদস্যদের এই সম্পত্তিগুলোর ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে যে এখতিয়ার প্রদান করা হয়েছে তা মুসলিম নাগরিকদের ধর্মীয় অধিকারে সরাসরি হস্তক্ষেপের শামিল।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের মতো সংগঠনগুলোর মতে- এই আইন ইসলামি ওয়াক্ফ ব্যবস্থার মূল চেতনার পরিপন্থি। তাদের মতে, ওয়াক্ফ বোর্ডের পরিচালনা মুসলমানদের দ্বারাই হওয়া উচিত। তারা একে মুসলিম নাগরিকদের ধর্মীয় অধিকারে সরাসরি হস্তক্ষেপের শামিল বলে অভিমত দিয়েছেন। ভারত একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সব ধর্মাবলম্বী নাগরিকদের ধর্মীয় অধিকার রক্ষায় রাষ্ট্রের অভিভাবকত্বের ভূমিকাকে সমুন্নত রেখে ওই আইনটি ভারত সরকার পুনঃবিবেচনা করবে, আমরা এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আঞ্চলিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে এই পদক্ষেপ একটি ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা মনে করি।