ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫,
সময়: ১২:২৭:১৬ PM

গয়েশ্বর চন্দ্র রায়: দায়িত্বশীল,প্রতিশ্রুতিশীল রাজনীতিক

মান্নান মারুফ
15-12-2025 07:13:47 PM
গয়েশ্বর চন্দ্র রায়: দায়িত্বশীল,প্রতিশ্রুতিশীল রাজনীতিক

জনপ্রিয়তায় তুঙ্গে থাকা কেরানীগঞ্জের অভিভাবক হিসেবে পরিচিত গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক সুপরিচিত ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। তিনি একজন দায়িত্বশীল, প্রজ্ঞাবান ও দৃঢ়চেতা রাজনীতিক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে গণতান্ত্রিক আন্দোলন, রাজনৈতিক অধিকার এবং সাধারণ মানুষের ন্যায্য স্বার্থ রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। সততা, ত্যাগ ও রাজনৈতিক নিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি দলীয় রাজনীতি ও জাতীয় পরিসরে একটি সম্মানজনক অবস্থান গড়ে তুলেছেন।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ১৯৫১ সালের ১ নভেম্বর ঢাকার কেরানীগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা জ্ঞানেন্দ্র চন্দ্র রায় ও মাতা সুমতি রায়। শৈশবকাল থেকেই তিনি সমাজের অসংগতি, বৈষম্য ও মানুষের অধিকার নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাশীল ছিলেন। ছাত্রজীবনে তাঁর মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি, নৈতিক দৃঢ়তা এবং সমাজকল্যাণমূলক মানসিকতা বিকশিত হয়, যা পরবর্তীতে তাঁকে প্রগতিশীল ও গণমুখী রাজনৈতিক ধারার সঙ্গে যুক্ত করে।

১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল গঠিত হলে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। যুবদলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি সংগঠনকে শক্তিশালী, সুশৃঙ্খল ও গতিশীল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁর নেতৃত্বে অসংখ্য তরুণ রাজনৈতিকভাবে সচেতন হয়ে ওঠে এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সাহসী ভূমিকা রাখে। তরুণ প্রজন্মকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে তাঁর দক্ষতা দলীয় রাজনীতিতে বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়।

রাজনৈতিক জীবনে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বহুবার জেল-জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে তিনি কখনো আপস করেননি। গত বছর (২৪ সালে) পুলিশের হাতে গুরুতর নির্যাতনের শিকার হয়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন, যা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয় এবং গণতন্ত্রকামী মানুষের মনে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করে। তবুও এসব দমন-পীড়ন তাঁকে আদর্শচ্যুত করতে পারেনি; বরং তাঁর সংগ্রামী মনোভাব আরও দৃঢ় ও অটল হয়েছে।

১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি সরকার গঠন করলে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় টেকনোক্র্যাট কোটায় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ে তিনি পরিবেশ সংরক্ষণ, বন ব্যবস্থাপনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষায় বাস্তবমুখী ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। টেকসই উন্নয়নের ধারণাকে সামনে রেখে তাঁর গৃহীত পদক্ষেপগুলো পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত হিসেবে আজও বিবেচিত হয়।

পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের যুগ্ম মহাসচিব এবং বর্তমানে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম—স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দলীয় নীতি প্রণয়ন, রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণ এবং জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে তাঁর মতামত অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হয়। দল ও দেশের সংকটময় মুহূর্তে তিনি সবসময় দায়িত্বশীল ও ভারসাম্যপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় একজন দক্ষ বক্তা ও সফল সংগঠক হিসেবেও সুপরিচিত। গণতন্ত্র, মানবাধিকার, প্রেস স্বাধীনতা ও সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থার পক্ষে তাঁর বক্তব্য সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগায়। বিভিন্ন জনসভা, সমাবেশ, মানববন্ধন ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তাঁর স্পষ্ট, যুক্তিনির্ভর ও সাহসী বক্তব্য জনগণকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

তিনি দুইবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন, বিশেষ করে ঢাকা-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি কখনো জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হননি। রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা ও মানুষের আস্থার প্রতি সম্মান রেখে তিনি ধারাবাহিকভাবে মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেরানীগঞ্জের একটি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য দলীয় মনোনয়ন লাভ করেছেন, যা তাঁর জনপ্রিয়তা ও দলের আস্থার সুস্পষ্ট প্রতিফলন।

সব মিলিয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক ও আদর্শনিষ্ঠ রাজনীতিক—যিনি ক্ষমতার চেয়ে নীতি, আদর্শ ও জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দেন। দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে তিনি সাধারণ মানুষের অধিকার, গণতন্ত্র ও দেশের সার্বিক উন্নয়নের পক্ষে নির্ভীকভাবে অবস্থান নিয়েছেন। তাঁর সততা, ত্যাগ ও নেতৃত্ব বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হয় এবং ভবিষ্যতেও তিনি জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন বলে জনগণ আশাবাদী।