
অন্তর্বর্তী সরকার খুবই সরল আর নাহলে ধুরন্ধর বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও’ আন্দোলনের উদ্যোগে আয়োজিত আওয়ামী লীগের দোসরদের বিচার দাবিতে নাগরিক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আমরা জানতাম এই সরকার একটা ভালো নির্বাচন করে, নির্বাচিতদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নিবে । কিন্তু, প্রতিনিয়ত যেমন শেখ হাসিনা বলতো উন্নয়ন, তেমনি এই সরকারের কথা হচ্ছে সংস্কার। কথায় কথায় সংস্কার, কোন জায়গায় সংস্কার, কিসের সংস্কার—এটা দৃশ্যমান নয়। এজন্যই এই সরকার ইতিমধ্যে জাতির কাছে নানান প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছে। আমার কাছে মনে হয়, এসরকার খুবই সরল, আর নাহলে ধুরন্ধর। এই দুটোর একটি হবে।
তিনি বলেন, এসরকার তার নিরপেক্ষতাকে ইতিমধ্যে নিজেরাই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। নিজেরা রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য প্রধান উপদেষ্টার পাশে যে উপদেষ্টারা রয়েছে, তারা কাজ করছে এবং পত্র-পত্রিকায় সেটি আসছে। এদের মধ্যে দিয়ে কেউ না কেউ ঐ রাজনৈতিক দল নেতৃত্বের আশা নিয়ে বসে আছে। যদি তাই-ই বসে তাহলে সরকারের উচিত হচ্ছে, তার নিরপেক্ষতা হারানোর কথা বলে, পদত্যাগ করে একটি কেয়ারটেকার সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।
বিএনপির এই নেতা বলেন, যদি এ সরকার আগামীদিনে পদত্যাগের মধ্য দিয়ে একটি কেয়ারটেকার সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে তাহলে আমার মনে হয়, আগামীদিনে তারা যে নিরপেক্ষতা, ইতিমধ্যে যা প্রশ্নের মুখে ফেলেছে, আগামীদিনে সেটি আরও বড় করে দেখা দিবে। আমরা যে ভালো নির্বাচন প্রত্যাশা করছি, সেই নির্বাচন আদৌ সম্ভব হবে কি-না—এটাও জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। একটি ভালো নির্বাচনে পদক্ষেপ না নিলে আরও বিতর্ক, বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে। সেজন্য অনতিবিলম্বে এ সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে এবং জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
আয়নাঘরের বিষয় নিয়ে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ৬ মাস পরে গতকাল আমরা যে ঘটনাটি দেখলাম, যেখানে মানুষদেরকে নারকীয়ভাবে আটকে রাখা হতো, গুম করা হতো, সেই জায়গাগুলোর বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়া ও পত্র-পত্রিকায় যেসব কথা আসছে সেগুলো দুঃখজনক, ভয়ংকর এবং বিপদজনক। এখানে যাদেরকে ধরে রাখা হয়েছিল, সেখানে সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা ছিল বলে আমরা জানতাম। রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা সেখানে বন্দী এবং অমানবিক জীবন-যাপন করেছে। এর বিরুদ্ধে যেসব সংগঠন এবং সাংবাদিকরা কাজ করেছে। গতকাল আমরা দেখলাম, সেসব সংগঠনের কোনো নেতা-নেত্রীকে সেখানে আহবান করা হয়নি। বিদেশি সাংবাদিকরা সেখানে ছিল। কিন্তু, দেশের কোনো সাংবাদিককে আয়নাঘর পরিদর্শনে নিয়ে যাওয়া হয়নি। এটা দুঃখজনক ঘটনা। আমার কাছে এই কারণে মনে হয় সরকার খুব বিশৃঙ্খলাপূর্ণ পরিবেশের মধ্যে আছে। কখন কোনটা করতে হবে, কিভাবে করতে হবে—সেটা সরকার বুঝতে পারছে না।
ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, পতিত স্বৈরাচার সরকার ১৬-১৭ বছর ধরে নির্বিচারে খুন, গুমসহ দেশকে একেবারে ধ্বংস করেছে। বাংলাদেশকে একটা অকার্যকর রাষ্ট্রে রুপান্তর করার একেবারে শেষ পর্যায়ে নিয়ে গেছে। সেই খুনিকে আমরা এখনো পর্যন্ত বিচারের আওতায় আনতে পারিনি। তদন্তের নামে ছয় মাস পার হয়ে গেছে। আমি সরকারের প্রতি আহবান জানাবো, যদি বিচার করতে না পারেন, যদি খুনিকে খুনি বলতে আপনাদের বাঁধা ও অস্বস্তি লাগে, তাহলে ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার আপনাদের নেই।
বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, এত ভয়ংকর একটা সরকার বাংলাদেশে ছিল, যে সরকার পার্লামেন্টকে ধ্বংস করেছে। নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। শুধু গুম-খুন নয়, রাষ্ট্রকে একটা শ্মশানে পরিণত করেছে। সেই রাষ্ট্রকে পুনর্জীবিত করার জন্য যেসব পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল, আমরা সেই পদক্ষেপের কোনো লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি না। অনতিবিলম্বে শেখ হাসিনার যথাযথ বিচারসহ তার (শেখ হাসিনা) দোসরদেরকে যথাযথ বিচার করতে হবে।
দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপনের সভাপত্বিতে নাগরিক সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হারুনর রশিদ, যুগ্ন-মহাসচিব এড. আব্দুস সালাম আজাদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন ফারুক রহমান, জাগপার সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক কমিটি সদস্য এড. আরিফা সুলতানা রুমা সহ প্রমুখ।