
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে আন্দোলন দমনে নির্মম হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হিসেবে অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় চলতি বছরেই ঘোষণা হতে পারে। একই সঙ্গে আরও পাঁচটি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণও নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ হবে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের কর্মকর্তারা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে করা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ প্রায় শেষ পর্যায়ে। রাষ্ট্রপক্ষের সর্বশেষ সাক্ষী হিসেবে তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জবানবন্দি শেষে এখন চলছে জেরা। এরপর যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মাধ্যমে রায় ঘোষণার পথ খুলবে। ভারপ্রাপ্ত চিফ প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম বলেন, “রাষ্ট্রপক্ষের ৫৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। পলাতক দুই আসামির (শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল) পক্ষে ডিফেন্স সাক্ষ্যগ্রহণের সুযোগ থাকবে না। তাই আইও-র জেরা শেষ হলেই রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক শুরু করবে।” তিনি আরও বলেন, “অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ বা নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হবে। এরপর যুক্তিতর্ক শেষ হলে ট্রাইব্যুনাল রায়ের দিন ঘোষণা করবে। রায় ঘোষণার এখতিয়ার সম্পূর্ণ আদালতের হলেও রাষ্ট্রপক্ষ আশাবাদী, আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা হবে।” অন্যান্য মামলার অগ্রগতি ১. চানখাঁরপুলে ছয়জনকে গুলি করে হত্যা মামলা: ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ওই হত্যাকাণ্ডে আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। তাদের মধ্যে চারজন পলাতক, চারজন কারাগারে। এ মামলার ১৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। ২. আশুলিয়ায় মরদেহ পোড়ানো মামলা: ২০২৪ সালের আগস্টে পাঁচটি মরদেহ ও এক জীবিত ব্যক্তিকে পোড়ানোর ঘটনায় করা মামলার বিচার চলছে ট্রাইব্যুনাল-২-এ। ১৬ আসামির মধ্যে আটজন গ্রেফতার। ইতোমধ্যে আটজন সাক্ষীর সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। ৩. আবু সাঈদ হত্যা মামলা: রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ হত্যার মামলায় ৩০ আসামির মধ্যে ছয়জন গ্রেফতার। এ মামলায়ও সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। ৪. রামপুরায় হত্যাকাণ্ড মামলা: জুলাই আন্দোলনের সময় রামপুরায় তিনজনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। ১৬ অক্টোবর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে। ৫. কুষ্টিয়ায় হত্যাকাণ্ড মামলা (হাসানুল হক ইনু): জাসদ সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে আটটি অভিযোগ আমলে নিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। অভিযোগ গঠনের শুনানি হবে ১৪ অক্টোবর। রাষ্ট্রপক্ষের প্রত্যাশা ভারপ্রাপ্ত চিফ প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, “নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যেই অন্তত ছয়টি মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ হবে। রায় ঘোষণার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ ট্রাইব্যুনালের ওপর নির্ভরশীল, তবে আমরা আশা করছি চলতি বছরের শেষ নাগাদ রায় ঘোষণা সম্ভব হবে।” প্রসিকিউটর (প্রশাসন) গাজী মনোয়ার হোসেন তামীম বলেন, “সব মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণই আসামিদের অপরাধ প্রমাণে যথেষ্ট। আমরা সর্বোচ্চ শাস্তির আশা করছি।” রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা মনে করছেন, চলতি বছরের নভেম্বর বা ডিসেম্বরের মধ্যেই শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট ছয়টি মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ হবে এবং এর মধ্য দিয়েই যুদ্ধাপরাধবিষয়ক নতুন অধ্যায়ের রায় ঘোষণা হতে পারে।