ঢাকা, বুধবার ৮ই জানুয়ারি ২০২৫ , বাংলা - 

লন্ডনে টিউলিপের বোনও পেয়েছেন ফ্ল্যাট

ষ্টাফ রিপোটার।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2025-01-05, 12.00 AM
লন্ডনে টিউলিপের বোনও পেয়েছেন ফ্ল্যাট

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের দখলে থাকা আরও একটি ফ্ল্যাটের সন্ধান মিলেছে। এবার দ্বিতীয় ফ্ল্যাটটির খবর প্রকাশ করেছে দ্য টেলিগ্রাফ। এর আগে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস প্রথমটির তথ্য প্রকাশ্যে আনে।দীর্ঘসময় ধরে যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি সেদেশের পার্লামেন্টে লেবার পার্টির একজন সদস্য ও বর্তমানে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশে দুর্নীতির তদন্তে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে নাম জড়িয়েছে তারও।দ্য টেলিগ্রাফ জানায়, দ্বিতীয় যে ফ্ল্যাটের কথা বলা হচ্ছে তাতে টিউলিপ সিদ্দিক বসবাস করতেন। এটি তার খালা বাংলাদেশের সাবেক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার সূত্রে পাওয়া। তবে এই ফ্ল্যাটটি সরাসরি টিউলিপকে দেওয়া হয়নি। তার বোন আজমিনা সিদ্দিক রুপন্তিকে উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন মঈন গনি নামের একজন বাংলাদেশি আইনজীবী। তিনি হাসিনা সরকারের লোক বলে পরিচিত। সানডে টাইমসের মতে, মঈন গনি একজন বাংলাদেশি আইনজীবী। যিনি হাসিনার সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার ছবি রয়েছে। ২০০৯ সালে হ্যাম্পস্টেডের ফ্ল্যাটটি আজমিনার কাছে হস্তান্তর করেছিলেন তিনি।ভূমি রেজিস্ট্রি নথিতে বলা হয়েছে, টাকা বা আর্থিক মূল্য ছাড়াই ফ্ল্যাটটি আজমিনার কাছে হস্তান্তর করা হয়। তখন আজমিনার বয়স ছিল ১৮ বছর এবং অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা শুরুর করতে চলেছেন।

টিউলিপ সিদ্দিক বেশকিছু অফিসিয়াল নথিতে হ্যাম্পস্টেডের ফ্ল্যাটটিকে তার বাসভবন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছেন।

এমনকি ২০১২ সালের ডিসেম্বরে ওয়ার্কিং মেনস কলেজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর তিনি কোম্পানির নথিতে তার ঠিকানা হিসেবে ফ্যাটটি তালিকাভুক্ত করেন।

তবে এ ব্যাপারে টিউলিপ সিদ্দিক মন্তব্য করতে রাজি হননি। কিন্তু তার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে তিনি তার বোনের হ্যাম্পস্টেডের ফ্ল্যাটে কিছু সময়ের জন্য বসবাস করেছেন। সূত্রটি আরও দাবি করেছে, তার সঙ্গে হাসিনা সরকারের রাজনৈতিক কোনো সম্পর্ক নেই। টিউলিপের সম্পত্তির সঙ্গে আওয়ামী লীগ জড়ানো সঠিক হবে না বলেও অনুরোধ করে সূত্রটি।

এর আগে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে লন্ডনে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে টিউলিপের বিরুদ্ধে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে ওই ব্যবসায়ীর।

খবরে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে দেশটির ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককে একটি ফ্ল্যাট দিয়েছিলেন আবদুল মোতালিফ নামের একজন আবাসন ব্যবসায়ী। তবে ওই ফ্ল্যাটের বিনিময়ে কোনো অর্থ পরিশোধ করতে হয়নি টিউলিপ সিদ্দিককে। বিনামূল্যে ফ্ল্যাট হস্তান্তরের তথ্য উঠে এসেছে যুক্তরাজ্যের ভূমি নিবন্ধনসংক্রান্ত নথিপত্রে।

যুক্তরাজ্যের ভূমি নিবন্ধনসংক্রান্ত নথিতে বলা হয়েছে, বিনামূল্যে পাওয়া ওই ফ্ল্যাট লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকার কাছে অবস্থিত। ২০০৪ সালে ফ্ল্যাটটি টিউলিপকে দেওয়া হয়।

নথিতে উঠে এসেছে, ২০০১ সালে ফ্ল্যাটটি ১ লাখ ৯৫ হাজার পাউন্ড (বর্তমানে পাউন্ডের বিপরীতে টাকার দর অনুযায়ী যা প্রায় ২ কোটি ৯৩ লাখ ৯৭ হাজার টাকা) দিয়ে কেনা হয়। এটির বর্তমান দাম নথিতে উল্লেখ করা হয়নি। তবে একই ভবনের আরেকটি ফ্ল্যাট গত আগস্টে ৬ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডে (প্রায় ৯ কোটি ৭৯ লাখ ৯১ হাজার টাকা) বিক্রি হয়েছে।

খবরে বলা হয়, বাংলাদেশি ব্যবসায়ী আবদুল মোতালিফ দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনে বসবাস করেন। ভোটার নিবন্ধনসংশ্লিষ্ট নথি থেকে জানা গেছে, ওই এলাকায় মোতালিফের ঠিকানায় বর্তমানে মজিবুল ইসলাম নামের আরেক ব্যক্তি বসবাস করেন। মজিবুলের বাবা ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন।

আবদুল মোতালিফ ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের কাছে কিংস ক্রসের ওই ফ্ল্যাট কেনার কথা স্বীকার করেছেন। তবে পরে সেটি নিয়ে কী করেছেন, তা নিয়ে কিছু বলতে রাজি হননি।

এদিকে লন্ডনে টিউলিপের বিনামূল্যে ফ্লাট পাওয়ার সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে বলে বলে গুঞ্জন উঠেছে। এ বিষয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার একজন মুখপাত্র ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের কাছে দাবি করেন, এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।