দেশে এইচআইভি পজিটিভ বা এইডসে আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। চলতি বছরে নতুন করে এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন আরও এক হাজার ৪৩৮ জন। যাদের মধ্যে একটি বড় অংশই সমকামী। পূর্বে এইডস আক্রান্তদের মাঝে অভিবাসী কর্মী ও শিরায় মাদক গ্রহণকারীদের সংখ্যা বেশি পাওয়া গেলেও এবার সমকামীদের হারই ছিল বেশি।দেশের এমন পরিস্থিতির মধ্যে আজ রোববার (১ ডিসেম্বর) পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব এইডস দিবস’। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘অস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এইডস নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে নতুন করে রোগটিতে সংক্রমিত হয়েছেন এক হাজার ৪৩৮ জন। তাদের মধ্যে ৪২ শতাংশ সমকামী, ২৪ শতাংশ সাধারণ মানুষ ও ১০ শতাংশ রোহিঙ্গা। এছাড়া প্রবাসী শ্রমিক, যৌনকর্মী, মাদকসেবী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ রয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৪০৬ জন, চট্টগ্রামে ৩২৬, খুলনায় ১৫৪, রাজশাহীতে ১৪৭ এবং অন্যান্য বিভাগে ৪৪ থেকে ৮৬ জন পর্যন্ত। এসব রোগীর ৬৩ শতাংশই ২৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী, ২১ শতাংশের বয়স ২০ থেকে ২৪ বছর।ধিকার নিশ্চিত হলে, এইচআইভি/এইডস যাবে চলে।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এইডস আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৯৫ জনের। এর মধ্যে পুরুষ ৭৭ শতাংশ, নারী ২২ শতাংশ ও হিজড়া ১ শতাংশ । মৃতদের মধ্যে বেশির ভাগই ষাটোর্ধ্ব।
বাংলাদেশে প্রথম এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছিল ১৯৮৯ সালে। দেশে ২০২৪ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত শনাক্ত হয় ১২ হাজার ৪২২ জন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন দুই হাজার ২৮১ জন। ইউএনএইডসের অনুমিত হিসাবে দেশে এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা ১৪ হাজার। সংক্রমিত ব্যক্তির তুলনায় শনাক্তের হার ৮৮.৭২ শতাংশ।
সংক্রমিত সাত হাজার ৫০০ মানুষকে চিকিৎসার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। এখনো প্রায় দুই হাজার সংক্রমিত ব্যক্তি চিকিৎসার বাইরে রয়ে গেছে। তাদের ঝুঁকি অনেক বেশি।জাতীয় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে দেখা যায়, এইডস আক্রান্ত আটজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে ছয়জন পরিবার থেকে সংক্রমিত হয়েছেন।
হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, ২০২৪ সালে নভেম্বর পর্যন্ত এইচআইভি সন্দেহজনক দুই হাজার ৪৯০ জনকে পরীক্ষা করে শনাক্ত হয় ১৮৮ জনের। এই সময়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে ২৯ জনের। নতুন সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে সমকামী পুরুষ ৭১ জন।হাসপাতালটির জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. শ্রীবাস পাল বলেন, ‘১০ বছর আগে এইডসে আক্রান্তের সংখ্যা দুই গ্রুপের মধ্যে বেশি ছিল। এক হচ্ছে যৌনকর্মী, আর দ্বিতীয় হচ্ছে যারা যৌনকর্মীর সেবাগ্রহণকারী। কিন্তু গত দু-তিন বছরে আমাদের এখানে সমকামী পুরুষের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে।’ডা. শ্রীবাস পাল বলেন, ‘আমরা জেনেছি সমকামীদের মধ্যে অনেকেই ইন্টারনেট ব্যবহার করে অনলাইন অ্যাপভিত্তিক গ্রুপে জড়িত। ধারণা করা হচ্ছে, এসব গ্রুপে যুক্ত রয়েছে কয়েক লাখ তরুণ। তাদের অনেকেই আক্রান্তের ঝুঁকিতে আছেন।’