যুবদলের কমিটি ঘিরে সরগরম চট্টগ্রামের তিন সাংগঠনিক এলাকা। চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবদলের নতুন নেতৃত্বে কারা আসছেন তা নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন পদপ্রত্যাশীরা। তদবির নিয়ে কড়া নাড়ছেন শীর্ষ নেতাদের দরজায়। স্বচ্ছ ইমেজের নেতাদের পাশাপাশি নেতৃত্ব পেতে ছুটোছুটি করছেন বিতর্কিতরাও। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যুবদলের নতুন নেতৃত্ব তৈরির বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে নগর ও জেলার শীর্ষ নেতাদের বৈঠক হয়েছে। সেখানে সবিস্তার আলোচনা করেছেন নেতারা। আজ শনিবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্কাইপিতে যুক্ত হয়ে গঠনতান্ত্রিক এবং যুবদলের সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে।তবে চট্টগ্রামের এই তিনটি ইউনিটে নতুন নেতৃত্ব আসছে নাকি পুরোনোদের ওপরই ভরসা রাখবে কেন্দ্র, সেটা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। আবার তৃণমূল থেকে শুরু করে অনেক নেতাকর্মীর মুখে শোনা যাচ্ছে, ত্যাগী ও নির্যাতিতরা গুরুত্বপূর্ণ পদে বসতে পারেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি থেকে সরকার পতনের আন্দোলন, চট্টগ্রামের মাঠের বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে নগর বিএনপির সহযোগী সংগঠন হিসেবে সবসময়ই সরব ছিল চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবদল। সংগঠনের পাশাপাশি এককভাবেও সবখানে ভূমিকা রেখেছেন নেতাকর্মীরা। নতুন কমিটি ঘিরে সম্প্রতি পদপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। সংগঠনের দায়িত্বশীলদের কাছে তদবির করতে অনেকে ছুটছেন রাজধানী ঢাকায়। বাদ নেই স্থানীয় নেতাদের কাছে ধরনা দেওয়াও। সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্যে কেউ কেউ হাল ধরতে চান যুবদলের। সংগঠনটির একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে এসব তথ্য।
নগর যুবদলের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তি বলেন, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তার প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। নিশ্চয়ই সংগঠনের ভালোর জন্য তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে যতদিন দায়িত্বে ছিলাম; চেষ্টা করেছি সংগঠনকে এগিয়ে নিতে। থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করে তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছি। আগামীতে আবারও সুযোগ পেলে দলকে আরও সুসংগঠিত করার চেষ্টা করব।দলীয় সূত্রে জানা যায়, নগর যুবদলের নতুন কমিটিতে মোশাররফ হোসেন দীপ্তিকে আবারও সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদে শাহেদ আকবরকে দেখা যেতে পারে বলে গুঞ্জন আছে। তবে পুরোনো কমিটি থেকে সভাপতি হিসেবে দীপ্তি না এলে আলোচিত যুবদল নেতা ইকবাল হোসেন এবং চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শাহেদ আকবর, গাজী সিরাজ উল্লাহসহ আরও অন্তত পাঁচ নেতা সভাপতির হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন। একই সঙ্গে আলোচনায় আছেন সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহেদও। আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে যুবদলের আলোচিত নেতাদের বিরুদ্ধে জুটেছে বহু মামলা। একাধিকবার জেলও খেটেছেন তারা। তাই তৃণমূণের প্রত্যাশা, যারা দলের দুঃসময়ে মাঠে ছিলেন, বঞ্চনার শিকার হয়েছেন তারাই যেন এবার নেতৃত্বে আসেন। এমনভাবে চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলাতেও রয়েছে নানামুখী আলোচনা।
সভাপতি পদপ্রত্যাশী চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সদ্য বিদায়ী সিনিয়র সহসভাপতি ইকবাল হোসেন বলেন, পরিবারের চেয়েও দলকে বেশি সময় দিয়েছি। আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। কিন্তু দলকে আঁকড়ে রয়েছি; হাল ছাড়িনি। তৃণমূল থেকে উঠে আসা যুবদলের এই নেতার আশা কমিটি হবে ত্যাগীদের নিয়ে। সেখানে কোনো সুযোগ সন্ধানী বা অনুপ্রবেশকারী স্থান পাবে না।
তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের দলীয় কার্যালয়ে বৈঠক হয়েছে। সেখানে আমিও ছিলাম। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি আমরা।
এদিকে পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ও মাঠের ত্যাগী নেতাদেরই মূল্যায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় যুবদলের দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম সোহেল। তিনি বলেন, ‘যারা আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন; হাসিনার বিরুদ্ধে নানা কর্মসূচিতে ছিলেন, যাদের পারফরম্যান্স ভালো, সংগঠনবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত নেই; তারাই অগ্রাধিকার পাবে। সংগঠনের নিবেদিতপ্রাণ নেতাদেরই আবারও মূল্যায়ন করা হবে।’
২০১৮ সালের ১ জুন মোশাররফ হোসেন দীপ্তিকে সভাপতি এবং মোহাম্মদ শাহেদকে সাধারণ সম্পাদক করে চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের পাঁচ সদস্যের কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয় কেন্দ্র থেকে। এর চার মাসের মাথায় ঘোষণা করা হয় ২৩১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি।