কতরফা নির্বাচনকে প্রতিহত করতে জনগণ জীবন দিয়ে সংগ্রাম করে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, জনগণের ক্ষমতা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলন সকল স্বৈরাচারীর জন্য হবে সতর্কবার্তা। দেড় দশকের রাজনৈতিক সংকট এখন এক চূড়ান্ত পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। জনগণই বাংলাদেশের ত্রাণকর্তা। শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) বিকেলে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। রিজভী বলেন, বৈশ্বিক গণতন্ত্রের যুগে এ লড়াই শুধু বাংলাদেশের মানুষের নয়, এ লড়াই পৃথিবীর গণতন্ত্রকামী সব মানুষের। এ লড়াই বাংলাদেশের মানুষের হারিয়ে যাওয়া, অজস্র মৃত্যু, নির্যাতন-নিপীড়নের মাধ্যমে কেড়ে নেয়া জনগণের ভোটাধিকার অর্জনের লড়াই। বিশ্ব বিবেক আজ জগ্রত। বাংলাদেশের মানুষকে নিষ্ঠুর একনায়ক শেখ হাসিনার শোষণ-অত্যাচারের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার সংগ্রামকে সমর্থন দিচ্ছে বিশ্বের গণতন্ত্রকামী মানুষ।তিনি বলেন, দেশ এক ভয়ঙ্কর ক্রান্তিকাল অতিবাহিত করছে। ’৭১ এর চেয়েও ভয় আর শঙ্কার দুঃসময়ে দেশের জনগণ নিপতিত, চারিদিকে শুধু অধিকারবঞ্চিত মানুষের করুণ আর্তনাদ, হাহাকার আর বেদনাবিধুর উপখ্যান। ভয় আর শঙ্কা মানুষের পিছু নিয়েছে। এক ব্যক্তি, এক দলের দুঃশাসনে বাংলাদেশের মানুষ এক বন্দি শিবিরে আটকে আছে, মৌলিক মানবিক অধিকার বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে।
‘সার্বভৌমত্বকে বিক্রি করে দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার ‘গ্যারান্টিপত্র’ আদায় করা হয়েছে। আর সেজন্য জনগণের পছন্দে সরকার গঠন ও পরিবর্তনে গণতান্ত্রিক রীতিকে গুম করা হয়েছে। জনগণকে দমন করে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ এখন সর্বগ্রাসী রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনকে চিরবিদায় দিতে চলছে নানা সর্বনাশা আয়োজন। সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি তোলা মাত্রই রক্ত ঝরানো হচ্ছে গণতন্ত্রকামী মানুষদের।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগোষ্ঠীই এখন শেখ হাসিনার বুলেটের টার্গেট। মূলত বাংলাদেশে গণতন্ত্র এখন মৃত। বারবার গণতন্ত্রকে হত্যা করাই আওয়ামী লীগের নিজস্ব শৈলী।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, আবারো একতরফা নির্বাচনের জন্য সকল শক্তি নিয়োগ করেছে আওয়ামী সরকার। আজ্ঞাবাহী নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের শর্ত রক্ষা না করে শেখ হাসিনার ইচ্ছার কাছেই আত্মসমর্পণ করেছে। তফসিল ঘোষণার সাথে নির্বাচন কমিশনের উচিত ছিল ভোট গ্রহণ সময় দিনে হবে, না নিশিরাতে হবে, সেটি বলা। একতরফা নির্বাচনের উচ্ছ্বাস সংবরণ করতে পারেন না শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ভোটারশূন্য একতরফা নির্বাচনে দারুন উল্লসিত শেখ হাসিনা। কারণ এই পদ্ধতিতে যেনতেন প্রকারে ক্ষমতায় থাকার বিকল্প নেই। বিগত ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকতে গিয়ে জনগণের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা নিজেদের পকেটে ঢোকানো যায়। নেতাকর্মীদের ধনসম্পত্তি বৃদ্ধি করা যায়। বাংলাদেশের প্রতি ধূলিকণায় দুর্নীতিকে ব্যাপ্ত করেছেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা অবাধ নির্বাচনে ভয় পেলেও অবাধ দুর্নীতিকে প্রসারিত করেন অতি আনন্দে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ সাহস, ধৈর্য সহকারে দেশজুড়ে গণআন্দোলনে ব্যাপৃত। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে অবৈধ সরকারকে পদত্যাগ করে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠায় এখন একমাত্র ব্রত।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগকে এখন শনির দশায় পেয়েছে। জনসমর্থনে তাদের হাল শুণ্যের কোঠায়। ওরা শুধু ক্ষমতার নেশায় বুঁদ হয়ে শুরু করেছে রক্তাক্ত তাণ্ডব। বিএনপি নেতাকর্মীরা পাইকারীহারে গ্রেফতারের শিকার। তাদের ধরতে না পারলে গ্রেফতার হচ্ছেন বাবা, শ্বশুর, ছোট ভাই এমনকি বাড়ির মেয়েরা পর্যন্ত। যেহেতু আওয়ামী ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তরুণরা সামনের সারিতে সেহেতু তরুণদের ওপর চলছে মরণঘাতী সহিংসতা।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, সশস্ত্র আওয়ামী লীগ ও পুলিশ বিরোধীদের বাসার গেট ভেঙে, তালা ভেঙ্গে ও জানালা ভেঙে ঘরে ঢুকছে। তল্লাশির নামে পুলিশ গ্রামের পর গ্রাম বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ির সকল ঘর তছনছ করে দিচ্ছে। বাবার মৃত্যুতে জামিন মেলেনি কারাগারে আটক ছাত্রদল নেতার। ছাত্রদল নেতাকে না পেয়ে বাবাকে হত্যা করেছে আওয়ামী ক্যাডাররা।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিএনপিসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশকে উসকানি দিচ্ছে স্থানীয় আওয়ামী লীগরা। বরিশালের উজিরপুর উপজেলার ১ নং সাতলা ইউনিয়নসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এমন ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে, যা গণমাধ্যমে হরহামেশাই প্রকাশিত হচ্ছে। সামাজিক বন্ধন, স্থিতি ও সৌহার্দ্য ভেঙে ফেলছেন শেখ হাসিনা। নিজের গোষ্ঠীস্বার্থে দেশকে চিরস্থায়ী বিভেদ-বিভাজন ও সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন তিনি।
রিজভী বলেন, ফ্যাসিজমে নতুন নতুন পথের সম্ভাবনা বন্ধ হয়ে যায়। জড়িমাগ্রস্ত সমাজ গড়ে তোলার চেষ্টায় শেখ হাসিনা আওয়ামী ফ্যাসিজম প্রতিষ্ঠার একটি ছক ও বিন্যাস ধরেই এগুচ্ছেন। এজন্যই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীকে বন্দি করেছেন শেখ হাসিনা। তিনি যে ফেরাউনের রাজত্ব কায়েম করেছেন তার পতন হবেই। গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে বিএনপি ও এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের ৩৯৫ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়াও ৮টি মামলায় ১০৬৫ জনকে আসামি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।