ঢাকা, শনিবার ২৭ই এপ্রিল ২০২৪ , বাংলা - 

তিন সন্ত্রাসীর প্রভাবে জিম্মি উজিরপুরবাসী

বরিশাল জেলা প্রতিনিধি।। ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2023-01-28, 12.00 AM
তিন সন্ত্রাসীর প্রভাবে জিম্মি উজিরপুরবাসী

বরিশালের উজিরপুর উপজেলায় ত্রাস সৃষ্টিকারী সন্ত্রাসী, মাদক ব্যাবসায়ী, চাঁদাবাজী, ভূমিদস্যু তিন সহোদরের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন স্থানীয় ভুক্তভোগীরা।বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১ টায় শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবর এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপজেলার সাধারণ মানুষের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত হোসেন বাবুল।সংবাদ সম্মেলনে তিনি উজিরপুর থানা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য মৃত রশিদ মোল্লার তিনপুত্র জেলা জাসাসের সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব মোল্লা, থানা শ্রমিক লীগের সভাপতি শিপন মোল্লা এবং উজিরপুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রিপোন মোল্লার অত্যাচার থেকে বাঁচতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং ন্যায় বিচারের দাবি জানান।

 

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলের সর্বহারা জিয়া গ্রুপের আঞ্চলিক নেতা নিহত রশিদ মোল্লার তিন ছেলে এখন উজিরপুরে মূর্তিমনা আতংক। তাদের কর্মকা-ে স্থানীয় মানুষ আতঙ্কিত। এদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বললেই হেনস্তার শিকার হন তারা।

 

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, তারা তিন ভাই উজিরপুরকে অঘোষিত নিয়ন্ত্রক। উপজেলাকে নিয়ন্ত্রণ করতেই বড় ভাই বিএনপি, মেঝো ভাই ১৯৯৬ সালে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান এবং ছোট ভাই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। বড় ভাই সাবেক উপজেলা যুবদলের সভাপতি ও বর্তমানে জেলা জাসাসের সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব মোল্লা।

 

তিনি বলেন, বিপ্লব হলো মোল্লার বিরুদ্ধে রয়েছে শিশু ধর্ষণ, জমি দখল, নিজ দলের নেতাকর্মীদের দুই ভাইকে দিয়ে দমন নিপীড়ন, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগ। ছোট ভাই পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রিপন মোল্লা মাদকাসক্ত। তার নেতৃত্বে চলে মাদকব্যবসা। এলাকায় সরকারের কোন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হলেও তাকে দিতে হয় মোটা অংকের চাঁদা। আর না দিলেই হতে হচ্ছে পুলিশি হয়রানি। বড় ভাই বিপ্লব মোল্লা তার অনুসারী বিএনপি কর্মীদের শেল্টার দিতে পুলিশ প্রশাসনের হাত থেকে বাঁচাতে ব্যবহার করে ছোট ভাই কাউন্সিলর রিপন মোল্লা ও শ্রমিক লীগের সভাপতি শিপন মোল্লাকে।

 

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, মেঝো ভাই জাতীয় শ্রমিকলীগের সভাপতি শিপন মোল্লা পুলিশের হাতে ২০১৬ সালে অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়েছিলো। তিনি শ্রমিক ইউনিয়নের নামে আলফা, মাহেন্দ্রা ও ইজিবাইক চালকের কাছ থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা চাঁদা আদায় করছেন লোকজন দিয়ে। যিনি চাঁদা দিচ্ছে না তার গাড়ি রাস্তায় আটকে দেওয়া হচ্ছে সন্ত্রাসী স্টাইলে।

 

তিনি লিখিত বক্তব্যে আরো বলেন, শিপন মোল্লা ও রিপন মোল্লা টাকার বিনিময়ে জমি দখল, টেন্ডারবাজীসহ সব ধরনের অপকর্ম করে থাকেন। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প উজিরপুরে আসলে রিপন মোল্লা ও শিপন মোল্লাকে ভাগ না দিলে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের সাথেও খারাপ আচরণ এবং হেনেস্তা করে। কোন ঠিকাদার কাজ পেতে হলে টাকার ভাগ দিতে হয় শিপন মোল্লাকে। তাছাড়া তিন ভাই মিলে শেখ রাসেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় নাম দিয়ে অন্যের জমি দখল করে বিদ্যালয়ে দান করেছে। যার নেপথ্যে শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যের পরিকল্পনা তাদের। তিন ভাইয়ের কাছে দেশি এবং বিদেশি অস্ত্র রয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

 

আরও বলা হয়, বড় ভাই বিপ্লব মোল্লা বাবুলাল শীল ও বিএনপি নেতা চুন্নু হত্যা মামলার এজাহার ভুক্ত আসামি। তাদের ভাই শিপন মোল্লাও একই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন। অস্ত্র মামলাও রয়েছে এর বিরুদ্ধে। তবে প্রভাব খাটিয়ে সেই মামলায় খালাস পান শিপন মোল্লা।

 

এসময় সংবাদ সম্মলেন প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত হোসেন বাবুল তাদের বিরুদ্ধে তার জমিজমা জোর করে দখলের অভিযোগ তোলেন। তাছাড়া তিন সন্ত্রাসী সহোদরের ভয়ে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে নিজ জন্মভূমি উজিরপুরে যেতে পারছে না বলে দাবি করেন তিনি।

 

এসময় তিনি বলেন, ‘২০০৩ সালে হানুয়া-বারপাইকা গ্রাম বা মৌজা (৯৬) এর মরহুম রশিদ মোল্লার নামে রেকর্ডীয় সম্পত্তি তার ওয়ারিশ স্ত্রী জোবেদা খাতুন, ছেলে বিপ্লব মোল্লা, শিপন মোল্লা, রিপন মোল্লা এবং নাবালিকা একমাত্র মেয়ে রিপা খাতুনের পক্ষে তার মা জোবেদা খাতুন তিনটি দলিলের মাধ্যমে ২১৩ শতাংশ জমি সাব-কবলা দলিলে আমার নিকটে তখনকার বাজার মূল্যে বিক্রি করে। সেই জমিতে আমরা রেকর্ড (নামজারী) করে ফলজ ও বনজ গাছ-গাছালি লাগিয়ে এবং একটি পুকুর কেটে ভোগ দখল করে আসছিলাম।

 

গত ২০০৬ সালে উক্ত জমির পাশাপাশি ৫৭ শতাংশ জমি মো. গফুর মোল্লা ও মো. খালেক হাওলাদারের নামে রেকর্ডীয় সম্পত্তি একটি সাব-কবলা দলিলের মাধ্যমে আমার স্ত্রীর নামে ক্রয় করে গাছ রোপন ও পুকুর কেটে ভোগ দখল করে আসছিলাম। কিন্তু ২০১২ সালে উল্লেখিত জমি উজিরপুরের সন্ত্রাসী, ভূমিদস্যু বিপ্লব মোল্লা, শিপন মোল্লা, রিপন মোল্লারা ১নং এর আংশিক ও ২নং এর সম্পূর্ণ জমি হঠাৎ দেশী-বিদেশী অস্ত্রধারী ডাকাতদের নিয়ে জবর দখল করে। জমির আনুমানিক ২০ লক্ষ টাকার গাছ ও আনুমানিক ৬ লক্ষ টাকার মাছ বিক্রি করে নেয়।

 

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিবাদ করলে আমাদের ব্যাপক মারধর করে ও মেরে ফেলার হুমকিও দেয়। এতে আমার ভাই মো. হালিম হাওলাদারসহ ২নং জমির দাতাগণ জখম হয়। পরবর্তী দিনে ২নং জমি বিক্রেতার জামাতা স্থানীয় মো. আঃ রশিদকে বিপ্লব মোল্লা বাসা থেকে ধরে নিয়ে ওদের মাল্টি-পারপাস সুদের ব্যাবসার অফিসে নিয়ে সম্পূর্ণ নতুন বিদেশী (অবৈধ) ৯-বোরের ঝকঝকে সাদা পিস্তল মাথায় ঠেকিয়ে ও দৈহিক প্রহার করে কাগজপত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

 

সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, তিন ভাইয়ের সন্ত্রাসী কর্মকাকাণ্ডের বিষয়ে পুলিশ-প্রশাসনের সবাই অবগত। কেননা তাদের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে থানায় একাধিক মামলা ও জিডি রয়েছে। কিন্তু তারা এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না রহস্যজনক কারণে। প্রশাসনের নিরবতার কারণে সহোদর বাহিনীর বলয় আরও দীর্ঘ হচ্ছে। জিম্মি হয়ে পড়েছে এলাকার মানুষ। এ বিষয়ে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন ভুক্তভোগীরা।