শিক্ষার্থীদের শত দাবি উপেক্ষা করে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি) কর্তৃপক্ষ তাদের স্নাতকোত্তর প্রথম ও শেষ বর্ষের পরীক্ষা গাজীপুর মূল ক্যাম্পাসে নেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড়। আর বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন একপেশে আচরণে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে বিশ^বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) শেষ পর্বের শিক্ষার্থীরা। তারা বিশ^বিদ্যালয়ের এহেন আচরণে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছে। অনেকেই তীব্র গরমের মধ্যে গাজীপুরে পরীক্ষা নেওয়া হলে তা বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সূত্র জানায়, ঢাকা আঞ্চলিক কেন্দ্রে সপ্তাহে দুই দিন ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়। যেহেতু উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী চাকরিজীবী তাই এখানে শুধু শুক্রবারে ক্লাস অনুষ্ঠিত হয় আর শনিবার প্রায় ১৭টি ক্লাসরুম পুরো ফাঁকা পড়ে থাকে। সেখানে কেন পরীক্ষা ঢাকায় নেওয়া সম্ভব হবে না, জানতে চেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে শিক্ষার্থীরা।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানায়, বিশ^বিদ্যালয় র্কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা বারবারই একটা কথাই বলছেন, গাজীপুরের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন অনেক ভালো হয়েছে। তাই কোনো অসুবিধা হবে না। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থেকে শুরু করে উচ্চপর্যায়ের প্রত্যেকের যাতায়াতের জন্য বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গাড়ি দিয়েছে। আর বিশ^বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষক থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যাতায়াতের জন্য এসিযুক্ত গাড়ির ব্যবস্থা আছে। শুধু বিশ^বিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য কোনো ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসের ব্যবস্থা নেই।
বিশ^বিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা ওয়েবসাইটে নোটিস প্রকাশে জানতে পারি যে, আমাদের পরীক্ষা গাজীপুরে অনুষ্ঠিত হবে। আর পরীক্ষার রুটিন এমনভাবে দেওয়া হয়েছে যে, রোজা ঈদের পরপরই পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। এটি দেখার পর আমরা দ্রুত উপাচার্য, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা), পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও ডিন বরাবরে দরখাস্ত জমা দিই। এতে আমরা, দুটো দাবি উল্লেখ করি। প্রথম দাবিটি হচ্ছে, ঈদের পরপরই পরীক্ষা না নিয়ে তা এক সপ্তাহ পেছানো আর দ্বিতীয় দাবি হচ্ছে, আমাদের পরীক্ষা পূর্বের নিয়ম অনুযায়ী, ঢাকায় আঞ্চলিক কেন্দ্রে নেওয়া। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করি যে, আমাদের প্রথম দাবি বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ খুব দ্রুত মেনে নিয়েছে কিন্তু দ্বিতীয় দাবিটি মেনে নেয়নি। এটি নিয়ে আমরা হতাশায় ভুগছি।
শুধু আইন বিভাগের পরীক্ষা ঢাকা আঞ্চলিক কেন্দ্রে হবে। পাঁচটি বিষয়ের (বাংলা, দর্শন, ইসলামের ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজতত্ত্ব) পরীক্ষা গাজীপুরে বিশ^বিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হবে।এ প্রসঙ্গে বিশ^বিদ্যালয়ের স্কুল অব সোস্যাল সাইন্স, হিউম্যানিটিজ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ (এসএসএইচএল) এর ডিন জাহাঙ্গীর আলম জাহিদ বলেন, শিক্ষার্থীদের সেশনজট কমানোর জন্যই এটি করা হয়েছে। তিনি বলেন, মাস্টার্স কখনোই ঢাকা আঞ্চলিক কেন্দ্রে ছিল না। এটা ঢাকা কলেজে ক্লাস নেয়া হতো। কিন্তু তারা এখন জায়গা দিতে না পারাই গাজীপুরে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর মাস্টার্স কোর্সটাকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিচ্ছি। এতে ছাত্রদেরই উপকার হবে।
তিনি বলেন, আমাদের মূল ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের রাতে থাকার ব্যবস্থা থাকবে। এমনকি চাইলে স্বামী-স্ত্রীসহ থেকেও পরীক্ষা দিতে পারবে। উপাচার্য ড. সৈয়দ হুমায়ন আখতার পিএইডি এ প্রসঙ্গে বলেন, এখানে এসি আছে। ছাত্রছাত্রীরা এসি রুমে বসে পরীক্ষা দিবে। তাদের কোন অসুবিধা হবে না।