
পাঁচটি কমিশনের সংস্কার প্রস্তাবের ওপর মতামত জানাতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করছে বিএনপি। এসময় একই ব্যক্তি সরকার প্রধান, সংসদ নেতা ও দলের প্রধান হতে পারবেন না- ঐকমত্য কমিশনের এই প্রস্তাবে বিএনপি একমত নয় বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ।রবিবার (২০ এপ্রিল) বেলা ১১টায় জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে দ্বিতীয় দিনের মতো এ বৈঠক শুরু হয়, যা এখনো চলমান।বৈঠকের বিরতিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ ও নজরুল ইসলাম খান।সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সংবিধানের প্রস্তাবনায় পঞ্চম সংশোধনী পুনর্বহাল চায় বিএনপি। সংবিধানের মূলনীতিতে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার নিয়ে একমত বিএনপি।’ এছাড়া, সংবিধানে বহুত্ববাদ নিয়ে সংশোধনীতে কমিশনের সঙ্গে একমত বিএনপি। তবে, রাষ্ট্রের সাংবিধানিক নাম পরিবর্তনে দ্বিমত প্রকাশ করেছে দলটি।সালাহউদ্দিন আরও জানান, তার দল ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিতে একমত।সংসদে নারীর আসন ১০০ করার বিষয় বিএনপি একমত। তবে পরবর্তী সংসদের পর অর্থাৎ ত্রয়োদশ সংসদে কীভাবে নারীরা সংসদে প্রতিনিধিত্ব করবেন তা সংসদে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে দলটি। অপরদিকে, এমপি প্রার্থীর বয়স ২১ নিয়ে এখনো ঐকমত্যে পৌঁছায়নি বিএনপি।
সরকার প্রধান ও দলের প্রধান একই ব্যক্তি হবেন না- এমন বিষয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘লিডার অব দ্য হাউজ, প্রধানমন্ত্রী ও পার্টি প্রধানের ক্ষেত্রে উনারা (কমিশন) একই ব্যক্তি হতে পারবেন না বলে প্রস্তাব দিয়েছেন। আমরা এটা ওপেন রাখতে বলেছি। অপশনটা পলিটিক্যাল পার্টির এবং মেজরিটি অব দ্য পার্লামেন্টের কাছে রাখা উচিত।’
তিনি বলেন, ‘মেজরিটির সংসদীয় দলের নেতা অন্য বিষয়। আর পার্টির চিফ যে প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, এটা আমরা দেখি না ওয়েস্টমিনিস্টার টাইপ গভর্নমেন্টে। আমরা দেখি পার্টিপ্রধান প্রাইম মিনিস্টার হচ্ছেন। এটা একটা ডেমোক্র্যাটিক প্র্যাকটিস।’
‘এটা পার্টির স্বাধীনতা এবং সংসদ সদস্যদের ডেমোক্র্যাটিক স্বাধীনতা। আমরা বলছি মেজরিটি পার্টির চিফকে প্রধানমন্ত্রী করবে, আরেকজনকেও করতে পারে, সেই অপশনটা রাখা উচিত। আবার প্রাইম মিনিস্টার লিডার অব দ্য হাউজ হবেন কিনা, সেই অপশনটাও রাখা উচিত,’ জানান তিনি।
সংসদের উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের সদস্য সংখ্যা নিয়ে একমত বিএনপি। কিন্তু কোন প্রক্রিয়ায় তারা নির্বাচিত হবেন, তা নিয়ে আলোচনা চলমান আছে বলে জানান সালাহউদ্দিন আহমদ।
এছাড়া, নতুন আইন প্রণয়ন করে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স করার পরামর্শ দিয়েছে বিএনপি। সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, এনসিসি বা জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের বিষয়েও একমত নয় বিএনপি। দলটি মনে করছে, এটা হলে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে রাষ্ট্র পরিচালনা দায় হয়ে যাবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কেয়ারটেকার ছাড়া নির্বাচন ফ্রি ফেয়ার হয় না। ডক্ট্রিন অব নেসেসিটির জন্যই দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত কেয়ারটেকার রাখা প্রয়োজন।’
অপরদিকে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘বেশকিছু বিষয়ে দ্বিমত থাকলে, অনেক বিষয়ে কাছাকাছি এসেছি।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি বাকশালে বিশ্বাস করে না। একদল যা বলবে তাই মানতে হবে এমনটা না। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে সর্বোত্তম কিছুই হবে বলে আশা রাখি।’