
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, এই বছরে নির্বাচন হবে। এই বছরই ধানের শীষ জয়লাভ করবে। বিএনপি ক্ষমতায় আসবে।রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ঠাকুরগাঁওয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা এবং ফ্যাসিবাদের ষড়যন্ত্র মোকাবিলার দাবিতে এক জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। জনসভাটি আয়োজন করে ঠাকুরগাঁ জেলা বিএনপি। দুদু বলেন, একটা দল আছে তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন চায়। কিন্তু তারাই এখনই সংসদ নির্বাচনের জন্য নমিনেশন দিয়ে দিচ্ছে। বিএনপি কিন্তু নমিনেশন দিচ্ছে না। বিএনপি গত ১৭ বছর আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে, একটি ভালো নির্বাচনের জন্য। তিনি বলেন, বর্তমানে যারা ক্ষমতায় আছে তারা বলে এত তাড়াতাড়ি নির্বাচন কেন। ক্ষমতায় বসার ছয় মাস হয়ে গেল এখনো দ্রব্য মূল্যের দাম কমাতে পারেনি। লক্ষ লক্ষ বেকারের চাকরির ব্যবস্থা হচ্ছে না। মিস্টার ইউনূসকে আমি পছন্দ করি। দেশে ও বিদেশে সব জায়গায় তিনি সফল। কিন্তু গত ছয় মাসে আপনি কিছুই করতে পারেননি। সিন্ডিকেটের কথা শুনি। আওয়ামী লীগের আমলে যা ছিল এখনো তাই আছে। সিন্ডিকেট ভাঙতে পারে নাই। এরই মধ্যে চাউল-তেলের দাম বেড়ে গেছে। সামনে রমজান মাস। সাধারণ জনগণ বাজার করবে কিভাবে? তাহলে ডক্টর ইউনূস আপনাকে রেখে জনগণের লাভ কি? এই কথা যদি কেউ তুলে। বিএনপি তো আপনাকে সাপোর্ট করে। তাহলে বিএনপি'র মুখ আপনি(ডক্টর ইউনূস) রাখলেন কোথায়?
ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয়, জনদরদী, মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করার দল হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বই জানে। শুধু এই নির্বাচনে নয়, আগামী নির্বাচনেও বিএনপি জিতবে। তাহলে আশেপাশে ঘুরে লাভ কি? বিএনপি'র প্রতিদ্বন্দ্বী একটি দল ছিল তারা তো এক দৌড়ে বর্ডার পাড়ি দিয়েছে।
শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা চোর, তার বাপ, ভাই, মেয়ে, ছেলে সবাই চোর। এই পরিবারে একটা ভালো মানুষ পাবেন না। যদি একজন ভালো মানুষ থাকে তাহলে তার নাম বলেন। শেখ রেহানার কথা বলবেন? সে তো আরো বড় বদমাইশ। দেশে একটা ব্যাংকও নাই যে, ব্যাংক থেকে এরা টাকা লুটপাট করে নাই। সব ব্যাংক ফাঁকা করে ফেলেছে।
অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, দেশের ঘরে ঘরে চুরি-ডাকাতি হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো না। যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমান সময়ের পরিস্থিতি খারাপ যাচ্ছে। আপনারা পাচ্ছেন না। তাহলে কি করতে হবে? ১৬ বছরের যেটা হয় নাই। সেটা করতে হবে। অর্থাৎ একটা ভালো নির্বাচন দিতে হবে। যারা জিতবে তাদের হাতে ক্ষমতা দিবেন। অন্য যেকোনো দল জিতলে তাদের হাতে ক্ষমতা দিবেন। বিএনপি'র কোন আপত্তি নেই। কিন্তু একটি ভালো নির্বাচন দেন।
তিনি বলেন, ডক্টর ইউনুস শিক্ষার্থীদের পক্ষে। শিক্ষার্থীরা দল গঠন করতে চাচ্ছে। তাহলে তলে তলে দুই নাম্বারি করলে করতেও পারে। দুই নাম্বারি করলে আপনার যে সুনাম আছে তা পদদলিত হবে। ওইসব ছেলেপেলে বলে তারা নাকি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় —তাহলে নির্বাচনে আসেন। আমরা তো ছাত্র ছিলাম। শুধু তোমরা একা গণঅভ্যুত্থান করনি। আমরাও ৯০ এর গণঅভ্যুত্থান করেছি। ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানও বিএনপি সাথে ছিল। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রী নেতাকর্মীসহ সবার বিরুদ্ধে তদন্ত হবে। বর্তমান সময়ে অনেকের বিরুদ্ধেও তদন্ত হবে। যারা দামি দামি গাড়িতে চলাফেরা করছেন, রুপায়ন টাওয়ারে দুটি ফ্লোরে অফিস করেছেন, যারা হেলিকপ্টার ছাড়া চলতে পারেন না। আমরাও রাজনীতি করি এত দামি গাড়িতে এখনো উঠতে পারি নাই।
কৃষকদলের সাবেক এই আহবায়ক বলেন, বিএনপি চ্যালেঞ্জ নেওয়া দল। বিএনপিকে নিয়ে টানাটানি করবেন না। যেকোনো পরিস্থিতিতে, যেকোনো অবস্থায় বিএনপি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পারে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে যত রক্ত লাগে সব দিবে বিএনপি। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া পিছু হটবেনা না বিএনপি।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপির এই নেতা বলেন, পদ-পদবী নিয়ে দলের মধ্যে টানাটানি থাকতে পারে। কিন্তু চ্যালেঞ্জ নিতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে। সমস্যাগুলো দূরে ঠেলে দিয়ে, আগে দলকে সামনে নিতে হবে। দলকে নির্বাচনে জয়ী করতে হবে।
মির্জা ফয়সাল আমিনের সভাপতিত্বে জনসমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন- বিএনপি'র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আব্দুল খালেক, আমিনুল ইসলাম সহ ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন উপজেলা, ওয়ার্ড, ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।