ঢাকা, শনিবার ২৩ই নভেম্বর ২০২৪ , বাংলা - 

চিনের জাহাজ মলদ্বীপে,ভারতের আপত্তি

ডেস্ক রিপোটার।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2024-01-24, 12.00 AM
চিনের জাহাজ মলদ্বীপে,ভারতের আপত্তি

ভারতের অস্বস্তি বাড়িয়ে চিনের জন্য নিজের দেশের দুয়ার উন্মুক্ত করে দিতে চাইছেন মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জু। সব কিছু সময় ধরে এগোলে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহেই ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্রটিতে যাচ্ছে চিনের নজরদার জাহাজ।একাধিক দেশের গোপন গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণের কাজ করা সংস্থা ‘ড্যামিয়েন সাইমন’ তাদের এক্স হ্যান্ডলে জানিয়েছে, চিনের জাহাজ জ়িয়াং ইয়াং হং ৩ ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ঢুকছে। জাহাজটির গন্তব্য মলদ্বীপের রাজধানী মালে বলে জানিয়েছে ওই সংস্থা।ওই সংস্থা জানিয়েছে, জাহাজটি মলদ্বীপের কোনও বন্দরকে পোতাশ্রয় হিসাবে ব্যবহার করে ভারত মহাসাগরে সমীক্ষা চালাবে। তবে কিসের উপর এই সমীক্ষা চলবে, তা স্পষ্ট নয়।চিনের জাহাজের মলদ্বীপের উদ্দেশে রওনা দেওয়া ভাল ভাবে নিচ্ছে না ভারত। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স ভারতীয় সেনার এক উচ্চপদস্থ আধিকারিককে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, নয়াদিল্লি গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে।চিন অবশ্য জানিয়েছে, তাদের এই জাহাজটি সামরিক জাহাজ নয়। কিন্তু ভারতের আশঙ্কা যে, সমীক্ষার নাম করে আসলে প্রতিবেশী দেশগুলির গোপন তথ্য সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেবে ওই নজরদার জাহাজ।শুধু ভারত নয়, চিনের বিরুদ্ধে আমেরিকার অভিযোগও প্রায় একই। ওয়াশিংটনের বক্তব্য, গোপন তথ্য চুরি করতেই সমীক্ষার নাম করে জলপথে অভিযান চালাচ্ছে চিন। তা ছাড়া আমেরিকার আশঙ্কা, দক্ষিণ চিন সাগর, প্রশান্ত মহাসাগরের পর এ বার ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ‘আগ্রাসী’ হওয়ার চেষ্টা করছে বেজিং।অভিযোগের প্রেক্ষিতে, পাল্টা ভারত, আমেরিকাকেই হুঁশিয়ারি দিয়েছে চিনের সরকার নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম। শুধু ভারত কিংবা চিনই নয়, কিছু দিন আগে ভিয়েতনাম এবং ইন্দোনেশিয়াও দাবি করেছিল যে, তাদের অর্থনৈতিক অঞ্চলে (ইজ়েড) ঢুকে পড়েছে চিনের নজরদার জাহাজ।এই গোটা ঘটনাপ্রবাহে জুড়ে রয়েছে আর এক দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। দেশটির তরফে জানানো হয়, চিনের কোনও ‘গুপ্তচর’ জাহাজকে এক বছরের জন্য তাদের কোনও বন্দরে ঠাঁই দেওয়া হবে না।বিদেশ মন্ত্রকের একটি সূত্র মারফত জানা যায়, গত ২১ জুলাই সে দেশের প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিঙ্ঘের সঙ্গে বৈঠকেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন। তার পরই ভারতের ‘উদ্বেগে’র বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে চিনা জাহাজ নিয়ে ‘কঠোর’ অবস্থান নেয় কলম্বো।প্রথমে স্থির হয়েছিল ৫ জানুয়ারি ভারত মহাসাগরের গভীর জলে ‘গবেষণা’ করার জন্য কলম্বো বন্দরে যাবে চিনের এই একই জাহাজ— ইয়াং হং ৩। চিনের তরফে শ্রীলঙ্কাকে জাহাজটি মে মাস পর্যন্ত রেখে দেওয়ার আর্জি জানানো হয়।গত বছর চিনের নজরদার জাহাজ ‘ইউয়ান ওয়াং ৫’ শ্রীলঙ্কার বন্দরে ভিড়েছিল। সেই সময়ও এই বিষয়ে ভারতের তরফে কড়া বার্তা দেওয়া হয়।যদিও তার পরও চলতি বছরেরই অগস্ট মাসে শ্রীলঙ্কায় নোঙর ফেলেছিল পিএলএ-র জাহাজ ‘হাই ইয়াং ২৪ হাও’। চিন এগুলিকে গবেষণার কাজে ব্যবহৃত জাহাজ বলে দাবি করলেও ভারতের আশঙ্কা ছিল যে, পরমাণু এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির উপর নজরদারি করতেই বার বার শ্রীলঙ্কার নৌসেনার পোতাশ্রয়ে যাচ্ছে চিনা যুদ্ধজাহাজগুলি।তবে ভারত-মলদ্বীপ চলতি বিতর্কের আবহে চিন-ঘনিষ্ঠ মুইজ্জুর সিদ্ধান্তে অন্য সমীকরণ দেখছে ভারত। কিছু দিন আগেই ভারতের সঙ্গে জল সংক্রান্ত একটি চুক্তি পুনর্নবীকরণে রাজি হয়নি মলদ্বীপ সরকার।২০১৯ সালের জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন মলদ্বীপ সফরে গিয়েছিলেন, তখন দুই দেশের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তি অনুযায়ী, ভারত মলদ্বীপের উপকূল, সমুদ্রের জল, জোয়ার-ভাটা নিয়ে নিবিড় পর্যবেক্ষণ এবং গবেষণা চালাতে পারত।ভারতের উদ্বেগ এবং আপত্তিকে শ্রীলঙ্কা গুরুত্ব দিলেও, চিনের জাহাজকে বিকল্প পোতাশ্রয়ের সন্ধান দিতে নিজেদের দেশের দরজাই খুলে দিয়েছে মলদ্বীপ। প্রসঙ্গত, মলদ্বীপের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ‘চিনঘেঁষা’ বলে পরিচিত মুইজ্জু নির্বাচনী প্রচারেই জানিয়েছিলেন, তিনি ক্ষমতায় এলে ‘ভারতকে অগ্রাধিকার’ দেওয়ার নীতি থেকে সরিয়ে আনবেন দেশকে।কিছু দিন আগেই ১৫ মার্চের মধ্যে ভারতীয় সেনাকে মলদ্বীপ ছাড়ার ‘আর্জি’ জানিয়েছে মুইজ্জুর সরকার। মুইজ্জুর সেনা সরানো সংক্রান্ত নির্দেশের নেপথ্যে চিনের হাত দেখছেন কেউ কেউ।সম্প্রতি পাঁচ দিনের জন্য চিন সফরে গিয়েছিলেন। সফরের তৃতীয় দিনে গত বুধবার জিনপিংয়ের সঙ্গে রাজধানী বেজিংয়ে বৈঠক করেন মুইজ্জু। দেশ থেকে ফিরেই কোনও দেশের নাম না করে হুঁশিয়ারির সুরে তিনি জানিয়েছিলেন, কাউকে ধমকানোর ছাড়পত্র দেয়নি তার সরকার।বর্তমানে মলদ্বীপে মাত্র ৮৮ জন ভারতীয় সেনা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। মূলত মলদ্বীপের বেশ কিছু শিল্পক্ষেত্র, আবাসনকে পাহারা দেওয়া এবং দূরবর্তী দ্বীপগুলিতে ওষুধ এবং ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়ে দেওয়ার কাজে নিযুক্ত এই সেনাকর্মীরা।কিছু দিন আগেই ভারত এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করার অভিযোগে সাসপেন্ড করা হয়েছে মলদ্বীপের তিন মন্ত্রীকে। তার পরে অবশ্য দুই দেশের সম্পর্ক খুব একটা সহজ হয়নি।সমাজমাধ্যমে ভারতীয় নেটাগরিকদের ‘বয়কট মলদ্বীপ’-এর ঠেলা সামলাতে হিমশিম খেতে হয় ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপরাষ্ট্রকে। আগে থেকে মলদ্বীপে ঘুরতে যাওয়ার বিমান-হোটেলে টিকিট বুক করে রাখার পরেও তা বাতিল করেন একের পর এক ভারতীয়। এই প্রবণতা এখনও বন্ধ হয়নি। এই আবহেই ভারতের উদ্বেগ বাড়িয়ে চিনা জাহাজকে স্বাগত জানাতে চলেছে মলদ্বীপ।