ঢাকা, বৃহস্পতিবার ৯ই মে ২০২৪ , বাংলা - 

নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হচ্ছে না কোনো প্রকল্পই

স্টাফ রিপোর্টার।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2021-03-12, 12.00 AM
নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হচ্ছে না কোনো প্রকল্পই

দেশের প্রায় সব প্রকল্পেই সময় ও ব্যয় বাড়ানোর ঘটনা যেন স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হচ্ছে না কোনো প্রকল্পই।সেই সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে।এ ধরনের অস্বাভাবিক ঘটনার মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগের একটি প্রকল্পে ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। ওই প্রকল্পে ব্যয় সাশ্রয় হয়েছে প্রায় হাজার কোটি টাকা।  ‘ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে বিতরণ ব্যবস্থার ক্ষমতাবর্ধন, পুনর্বাসন ও নিবিড়করণ’ প্রকল্পে এমন ঘটনাকে বিরল ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটি ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর একনেক সভায় অনুমোদন পেয়েছিল। তখন প্রকল্পের মোট ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৪০৩ কোটি ৮৩ লাখ ৭ হাজার টাকা। প্রকল্পে সরকারি অর্থায়ন ১ হাজার ৩৫৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিপি) ঋণ ২ হাজার ৪৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা। প্রকল্পের সংশোধিত ডিপিপিতে প্রকল্পের ব্যয় কমে দাঁড়াচ্ছে ২ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা যা মূল প্রকল্প থেকে ৯৫৪ কোটি ১০ লাখ ৪ হাজার টাকা বা ২৮ শতাংশ কম।  

সূত্র জানায়, প্রথম সংশোধিত ডিপিপিতে ৪৪টি ভৌগোলিক এলাকায় মোট ২৭ হাজার কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করার সংস্থান রয়েছে। এর মধ্যে আপগ্রেডেশন ২০ হাজার ৫৩৫ কি.মি. এবং নতুন লাইন ৬ হাজার ৪৬৫ কি.মি। প্রস্তাবিত প্রকল্পে ৩৩ কেভি লাইন ১১৫ কি.মি. হ্রাস করে ৭৯০ কি.মি. করা হয়েছে ।

অপরদিকে ১১ কেভি বা নিম্নতর ক্ষমতার বিতরণ লাইন ৮০ কিলোমিটার বাড়িয়ে ১৯ হাজার ৭১০ কি.মি. করা হয়েছে এবং নতুন লাইন ৩৫ কি.মি. বৃদ্ধি করে ৬ হাজার ৫০০ কি.মি. করা হয়েছে। এছাড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস) ওয়ারী বিতরণ লাইনের পরিমাণ পুনঃবিভাজন করা হয়েছে। পবিসওয়ারী প্রকৃত চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে অনুমোদিত প্রথম  সংশোধিত ডিপিপিতে সংস্থানকৃত মোট লাইনের পরিমাণ ২৭ হাজার কি.মি. অপরিবর্তিত রেখে ৩৩ কেভি, ১১ কেভি ও নিম্নতর ভোল্টেজের পবিসওয়ারী লাইনের পুনঃবিন্যাস করা হয়েছে।  

প্রকল্পের পরিচালক নাজমুল হক বলেন, এই প্রকল্প থেকে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে, কারণ দেশীয় শিল্পের প্রসার হয়েছে। ফলে সিটি ভ্যাটে টাকা খরচ হয়নি। প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

প্রকল্পের গুণগত মান ঠিক আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রকল্পের সকল গুণগত মান ঠিক রেখেই বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কোন খাত কমানো হয়নি, প্রকল্পের পরিধি ঠিক রেখেই কাজ চলছে।

সূত্র জানায়, নানা কারণে প্রকল্পের ব্যয় কমছে। বিদ্যুৎ খাতে সাম্প্রতিক সময়ে গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের কারণে অনেক দেশীয় বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম প্রস্তুতকারী ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। প্রকল্পের অধিকাংশ দরপত্রে দেশীয় প্রস্তুতকারী ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ কার্যাদেশ পাওয়ায় সিডি-ভ্যাট খাতে প্রায় ৪৬২ কোটি ৪২ লাখ টাকা সাশ্রয় হয়েছে। এছাড়া বাজারে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাওয়ায় অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে পণ্য ক্রয় করা সম্ভব হয়েছে যার কারণে ব্যয় কমেছে। কম মূল্যে পণ্য ক্রয় করা হলেও মালামালের গুণগতমান নিশ্চিত করে সরবরাহকারীর কাছ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে।

এছাড়া সংশোধিত প্রকল্পের প্রস্তাবে মেয়াদ ৬ মাস বৃদ্ধি এবং প্রকল্প সাহায্য খাতে ৭৮ কোটি ৬০ লাখ ৪৪ হাজার টাকা ব্যয় কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এক প্রকল্পে হাজার কোটি টাকা কমে যাওয়া সুখবর ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত বলে দাবি করেছেন অর্থনীতিবিদেরা।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, এক প্রকল্পে এক হাজার কোটি কমে যাওয়া মানে বড় সুখবর। যদি সঞ্চালন লাইনের মান ধরে রেখে কাজ করা হয়। সাধারণ প্রকল্পে দুটি বিষয়ে ব্যয় বৃদ্ধি ও কমানো হয়। ডিপিপি তৈরি করার সময় সরঞ্জামাদির দাম বেশি ধরা অথবা দুর্নীতির কারণে ব্যয় বাড়ে। এর কিছুই যদি এই প্রকল্পে না হয়ে থাকে, তবে যারা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে নিঃসন্দেহে তারা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।