বাংলাদেশে ভারত আরেকটি ওয়ান ইলেভেন ঠেকালেও ১৮ কোটি জনগণের রুদ্ররোষ থেকে আওয়ামী লীগ পার পাবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এই পরগাছা, পরজীবী, আর্টিফিসিয়াল সরকারের পতন অনিবার্য।তিনি বলেন, ‘১৮ কোটি জনগণ ও গণতান্ত্রিক বিশ্বকে উপেক্ষা করে এই বিরোধীদলহীন একদলীয় নির্বাচন ঘিরে আতঙ্কে ভুগছে মিডনাইট ভোট ডাকাত আওয়ামী সরকার। তাদের দুশ্চিন্তা এখনও কাটে নাই। গত কিছুদিন ধরে ওয়ান ইলেভেনের আতঙ্কের কথা বলছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেররা। সর্বশেষ গত ২৪ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ষড়যন্ত্র হচ্ছে। পিটার হাস ভারতে গেছেন। কিন্তু বাংলাদেশে আর ওয়ান ইলেভেন ঘটাতে সমর্থন দেবে না ভারত। তার এই কথায় প্রমাণ হয় যে, ডালমে কুচ কালা হায়।’বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাম্প্রতিক বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরি অবস্থা জারি করে সেনা নিয়ন্ত্রিত অবৈধ সরকার ক্ষমতা দখল করেছিল সেই ওয়ান ইলেভেনের মাস্টারমাইন্ড তাহলে কারা তা ওবায়দুল কাদের সাহেব প্রকাশ করলেন। এজন্য সেদিন শেখ হাসিনা বলেছিলেন, “১/১১ আমাদের আন্দোলনের ফসল।” তাদের ক্ষমতার উৎস দেশের জনগণ নয়, প্রতিবেশী দেশটি এই আওয়ামী লীগের নির্বাচনহীন অবৈধ সরকারকে টিকিয়ে রেখেছে।’
তিনি বলেন, ‘ওয়ান ইলেভেন থেকে উত্তরণ, অতঃপর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত প্রশ্নবিদ্ধ নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসানোর কাহিনী তৎকালীন ভারতের ক্ষমতাধর রাস্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির লেখা বই ‘দ্য কোয়ালিশন ইয়ারস’ গ্রন্থে বিবৃত করেছেন। সেই সময় ভারতের স্বনামধন্য সাংবাদিক ও কৌশল বিশ্লেষক কে পি নায়ারের বিশ্লেষণধর্মী এক লেখায় তুলে ধরা হয় কিভাবে প্রণব মুখার্জী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতার পথ মসৃন করে দেন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো এবারো ৭ জানুয়ারির দলহীন নির্বাচনের প্রাক্কালে আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রতিবেশী দেশটির ভূমিকা উদ্বেগজনক। আওয়ামী লীগের মন্ত্রীরা কেন প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের কথা বলে তা কাদের সাহেবের বক্তব্যের পর জনগণের অনুধাবন করতে বাকি নেই। তবে পরগাছা, পরজীবী, পরনির্ভর হয়ে বেশিদিন টিকে থাকা যায় না।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘আওয়ামী লীগ লুটেরা-ডাকাতের দলে পরিণত হয়েছে। এই ডাকাতরা গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি, সমাজনীতি, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন-রাস্ট্রযন্ত্র সবকিছু ধ্বংস করেছে। বাংলাদেশকে দেউলিয়া ঘোষণার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন অবৈধ সরকার। শেখ হাসিনা সবাইকে অপকর্মযজ্ঞের অবারিত সুযোগ ও উৎসাহ দিয়ে অপরাধী বানিয়ে তার অবৈধ ও পাতানো একতরফা নির্বাচন করাতে বাধ্য করছেন। তবে তাদের ভোটাধিকার-লুটপাট-অর্থ পাচার, অপকর্মের কথা কেউ বললেই তার ওপর আওয়ামীচক্র সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। কাউকে মামলা দিয়ে, পুলিশ দিয়ে, কাউকে দুর্নীতি দমন কমিশন দিয়ে শায়েস্তা করা হচ্ছে। কোনো কিছু না করতে পারলে মিথ্যা অপবাদ-গালিগালাজ দিয়ে অপদস্ত করা হচ্ছে। সত্য প্রকাশ করার অধিকারও কেড়ে নেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি ডামি নির্বাচনে অংশ নেয়া আওয়ামী প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে কোন কোন লুটেরা শত শত কোটি টাকা-সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তার একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো মন্ত্রী বিদেশে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকার ব্যবসা করলেও নির্বাচনী হলফনামায় এ তথ্য গোপন করেছেন সেই তথ্য তুলে ধরেছে। এই সত্য প্রকাশ করায় আঁতে ঘা লেগেছে নিশিরাতের সরকারের মন্ত্রী-এমপি-লুটেরাচক্রের। এতেই যেন পিত্ত জ্বলে গেছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের। তিনি বলেছেন, “টিআইবি বিএনপির শাখা সংগঠন। মতাদর্শ একই”।’
গত ২৩ ডিসেম্বর এক ব্রিফিংয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির (সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ) রিপোর্টে ১৫ বছরে ব্যাংক থেকে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ৯২ হাজার কোটি টাকা লুটপাটের চিত্র তুলে ধরে বলা হয়েছে, এটি আংশিক চিত্র।’
রিজভী বলেন, ‘প্রকৃত তথ্য আরও ভয়াবহ। এ টাকার বড় অংশই বিদেশে পাচার করা হয়েছে। এগুলো আর ব্যাংকে ফেরত আসবে না।
কেন এই লুটপাট, জাল-জালিয়াতের সত্য প্রকাশ হলো তা নিয়ে ক্ষেপেছেন মাফিয়া সরকারের মুখপাত্র ওবায়দুল কাদের। বলেছেন, “এই ৯২ হাজার কোটি টাকা কোথায় গেল তার সন্ধান সিপিডিকে দিতে হবে”।’
‘তার মানে লুটপাটের দালিলিক সত্য তথ্য প্রকাশ করলেও রেহাই নেই। এই টাকাসহ ১৬ বছরে যে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা লুটপাট ও পাচার হয়েছে। কারা পাচার করেছে, আওয়ামী মাফিয়াদের কারা কারা লুট করেছে সে তথ্য দেশের জনগণ জানলেও কাদের সাহেবরা হুমকি দিচ্ছেন ও ভণ্ডামি করছেন। এই টাকা পাচারকারীদের পক্ষে কেন কাদের সাহেব সাফাই গাইছেন? তাহলে তিনিও কি এই চক্রের সদস্য? তা না হলে তার এতো জ্বলে কেন? এই টাকা দিয়ে কানাডায় বেগম পাড়া, আমেরিকায় বিলাস বহুল বাড়ি-গাড়ি-ব্যবসা, দুবাই সিঙ্গাপুরে বিনিয়োগ, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমসহ তিন মহাদেশে সম্পদের পাহাড় গড়া হয়েছে।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, ‘সুইচ ব্যাংকে নতুন নতুন অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে। আওয়ামী লুটেরাদের দেশে বহুতল বাড়ি, বিলাসবহুল গাড়ি, ব্যবসা বাণিজ্য, জীবন যাপনে জৌলুস উপচে পড়ছে। আঙ্গুল ফুলে বটগাছ হয়েছে। আর সাধারণ মানুষ ফতুর হয়ে খেয়ে না খেয়ে ধুকে ধুকে মরছে। কেউ সত্য কথা বললে বা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গেলেই কাদের সাহেবরা তাকে বিএনপি জামায়াত রাজাকার বলে ট্যাগ দেন। যারা সত্য কথা বলবে তারাই বিএনপির লোক। আর তাদের অনাচার ও দুর্নীতির পক্ষে গেলে সে হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার লোক, ভালো মানুষ। আওয়ামী লীগ এক আজব যন্ত্র-সেখানে দাগী সন্ত্রাসী সমাজের কুখ্যাত মানুষ ঢুকলে তাদের বলা হয় মুক্তি যুদ্ধের স্বপক্ষের লোক। অথচ আওয়ামী লীগ যে একটি জঘন্য দুর্গন্ধময় গালিতে পরিণত হয়েছে তা তো কাদের সাহেবদের অজানা থাকার কথা নয়।’
রিজভী বলেন, ‘মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ একটা চোরের দল। সেই দল এখন চোর থেকে ডাকাত, লুটেরা, মাফিয়া চক্র ও সন্ত্রাসী সংগঠনে পরিণত হয়েছে। তারা আবারও এখন ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল রাখার চেষ্টা করছে। এবার এদেরকে যেকোনো মূল্যে প্রতিহত করতেই হবে। এই আমি আর ডামি ভোট বর্জন করতে হবে।’
তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, ‘গত ২১ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে বাংলাদেশের একটি গণমাধ্যমের শিরোনামে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ-এর দেখভালে ‘গ্রেফতার এড়াতে ওমরাহ করতে যাচ্ছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা’ যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তা সম্পূর্ণরুপে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে জানিয়েছেন জনাব মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ। তিনি বলেছেন- “বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপকৌশল হিসেবেই এটি করা হয়েছে। কোনো মহলকে খুশি করতে কিংবা কারো প্ররোচনায় এ ধরণের কাল্পনিক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে বলে আমি মনে করি”। জনাব মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ একজন বয়স্ক মানুষ এবং বর্তমানে শারীরিকভাবে খুবই অসুস্থ। এমতাবস্থায় তাঁর মতো ব্যক্তিকে জড়িয়ে দেশের একটি জাতীয় গণমাধ্যম যে সংবাদ প্রকাশ করেছে তা সম্পূর্ণরুপে বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা এই ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’