ঢাকা, শনিবার ২৭ই এপ্রিল ২০২৪ , বাংলা - 

রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান কোথায় ?

স্টাফ রিপোর্টার ।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2023-08-03, 12.00 AM
রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান কোথায় ?

দেশের প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে দখলে রাজপথ। সমাবেশ-পদযাত্রা অনেক সময় রূপ নিচ্ছে হরতাল-অবরোধের। স্থবির হয়ে পড়ছে জনজীবন। একটি কর্মসূচিতে গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে এক নিরীহ পথচারী নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এক দল কর্মসূচির তারিখ পেছালে আরেক দলও পিছিয়ে নিচ্ছে সেই একই তারিখে। এই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ও জনভোগান্তির শেষ কোথায় বা সমাধান কোন পথে? এ বিষয়ে বিশিষ্টজনরা দিয়েছেন মিশ্র মতামত। আর রাজনৈতিক নেতারা দায় চাপাচ্ছেন একে অপরের ওপর।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘নির্বাচন যত কাছাকাছি আসবে, তত জনসমাবেশের সংখ্যা বাড়বে। এখন দুটো রাজনৈতিক দল একই দিনে সমাবেশ করছে, সামনে অন্যরাও করবে। আমরা মনে করি, এ সমাবেশগুলো যেন সড়কে-মহাসড়কে না হয়। এগুলো যেন উন্মুক্ত মাঠে করা হয়। আমার ধারণা ডিএমপি থেকে তাদের এই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। গণতন্ত্রে সমাবেশ করার অধিকার সব রাজনৈতিক দলের আছে, তারা করুক। কিন্তু এ কারণে যেন জনগণের চলাফেরার স্বাধীনতা খর্ব না হয়।’এ ধরনের সমস্যার কোনো সমাধান দেখছেন না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। তিনি  বলেন, ‘এগুলোর (পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি) কোনো সমাধান হবে না। তিন দশক ধরে নির্বাচনের ঠিক আগে এগুলো হয়ে আসছে। যারা এসব কর্মসূচি দিচ্ছেন, তাদের কাছে জনগণ আসলে কিছু না, ভোটের দিনই জনগণের গুরুত্ব। জনগণও এমন যে, তারা প্রতিবাদ করতে জানে না বা প্রতিবাদ করতে চায় না। ভাবে যে, তার হয়ে প্রতিবাদটা অন্য একজন করে দেবে। তাহলে তো এ অবস্থা চলবেই। এটা থেকে আমাদের শিগগির নিস্তার নেই। এটা আমাদের মেনে নিতে হবে। যতক্ষণ না সাধারণ মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে বলে- আমরা ভোট দিতে যাবো না বা যিনি জনদুর্ভোগ করবেন, আমরা তার সঙ্গে নেই। তারা (জনগণ) নেমে যদি প্রতিবাদ না জানায়, তাহলে কিছু হবে না।’তিনি বলেন, ‘৫০টি রাজনৈতিক দল এসব বিক্ষোভ করছে। শহরের অধিকাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে তাদের সমর্থক। ফলে দুর্ভোগ হবে, কিছু করার নেই, সমাধানও নেই।’

 

পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে রাজনৈতিক কর্মসূচি বলতে নারাজ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তিনি বলেন, ‘যে কারণে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি হয়, সে কারণটির সমাধান হলেই হয়। কারণটা হলো সুষ্ঠু ও সঠিক নির্বাচন। বিরোধীদল সুষ্ঠু ও সঠিক নির্বাচন চায়। সরকারের দায়িত্ব সেটা করা। এটি নিশ্চিত করা গেলে তো এই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি থাকে না। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি কোনোভাবেই রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়। এর আগেও বলা হয়েছে, পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি হবে না। কিন্তু হচ্ছে। রাজনীতি যারা করেন, তারা তো জনগণের দুর্ভোগ নিয়ে চিন্তা করেন না। করলে তো এরকম হতো না।’তবে রাজনীতিবিদদের কণ্ঠে ভিন্ন সুর। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কর্মসূচিগুলো পাল্টাপাল্টি নয় এবং সহিংসও নয়। বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার অভিজ্ঞতা জাতির রয়েছে। তাদের সহিংসতার ভয়াবহতা কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। তারা আইন অমান্য করে পুলিশের ওপরও ভয়াবহ আক্রমণ করে। এমতাবস্থায় রাজপথে শান্তিকামী জনতার সংঘবদ্ধ উপস্থিতি কেবল বিএনপিকে সংযত আচরণ করতে বাধ্য করতে পারে।’

 

‘এ অভিজ্ঞতার আলোকে বিএনপির কর্মসূচির দিনে শান্তকামী জনতার সংঘবদ্ধ সতর্কতামূলক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়নের সমাবেশ অব্যাহত থাকবে। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই নাশকতাকারীদের অবাধ নৈরাজ্য সৃষ্টির লাইসেন্স দিতে পারে না।’বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক রুমিন ফারহানাও দোষ চাপালেন আওয়ামী লীগের ওপর।  বলেন, ‘পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির উদ্যোগ তো নিয়েছে আওয়ামী লীগ। কারণ বিএনপি শুরুতেই বলেছিল- আপনারা যেদিন কর্মসূচি করবেন, আগে থেকেই তারিখ দিয়ে দেন। তারপর আমরা আমাদের তারিখ নির্ধারণ করবো, যাতে একসঙ্গে কোনো কর্মসূচি না হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, যেদিনই বিএনপির কোনো কর্মসূচি থাকবে, সেদিনই আওয়ামী লীগ মাঠে থাকবে।’

 

‘এর ফলে যেটা হয়েছে- একেবারেই শান্তিপূর্ণ ও অহিংস কর্মসূচিতেও পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতারা বিএনপির ওপর হামলা করেছে, আহত করেছে, মামলা দিয়েছে— যেটা পুরো পরিস্থিতিকেই ঘোলাটে করে দিচ্ছে। এর শেষ কোথায়? এটা আওয়ামী লীগ জানে, কারণ শুরুটা তারাই করেছে।’