গতি তাঁর খুব প্রিয় ছিল। সেই গতিরই বলি হলেন তিনি। দুরন্ত বেগে বাইক চালাতে গিয়ে ডিভাইডারে ধাক্কা। পথেই মৃত্যু অগস্ত্য চৌহানের। পেশায় তিনি ছিলেন ইউটিউবার।অভিযোগ ছিল, ঝুঁকি নিয়ে বাইক চালাতেন অগস্ত্য। দুরন্ত গতিতে ছোটাতেন বাইক। সেই ভিডিয়ো তুলে ইউটিউবে পোস্ট করতেন। ভিডিয়ো দেখতেন লক্ষ মানুষ।একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, গত বুধবার সকালে যমুনা এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনার মুখে পড়েন অগস্ত্য। কাওয়াসাকি নিনজা বাইকে চেপেছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন আরও চার বন্ধু।যমুনা এক্সপ্রেসওয়ে ধরে দিল্লি থেকে আগরা যাচ্ছিলেন অগস্ত্যরা। ডিভাইডারে ধাক্কা দেয় অগস্ত্যের বাইক। পড়ে গিয়ে মাথায় চোট পান। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ২২ বছরের ইউটিউবারের।সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, দুর্ঘটনার সময় অগস্ত্যের বাইক ঘণ্টায় ৩০০ কিলোমিটার গতিতে ছুটছিল। এই চরম গতিতে ডিভাইডারে ধাক্কা দেওয়ার কারণেই বিপদ হয়।যদিও তাঁর পরিবার এ কথা মানতে চাননি। অগস্ত্যের বাবা পুলিশের কাছে দাবি করেন, কোনও গাড়ি এসে অগস্ত্যের বাইকে ধাক্কা মেরে পালিয়ে যায়। অর্থাৎ হিট অ্যান্ড রানের ঘটনা।আঙুল ওঠে অগস্ত্যের এক বন্ধুর দিকে। সমাজমাধ্যমে অগস্ত্যের ভক্তরা অভিযোগ করেন, বন্ধু আমির মজিদই এ সবের নেপথ্যে রয়েছেন। ওই দুর্ঘটনার পর আমিরের ফোনও বন্ধ ছিল। যদিও পরে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে সব কথা জানিয়েছেন আমির।আমির জানিয়েছিলেন, অগস্ত্যের ইচ্ছা ছিল ৪০০ কিলোমিটার বেগে বাইক চালাবেন। তবে হাওয়ার গতি বেশি থাকায় তা হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ কিলোমিটার বেগে বাইক চালিয়েছিলেন অগস্ত্য।আমির জানিয়েছিলেন, অগস্ত্যের ইচ্ছা ছিল ৪০০ কিলোমিটার বেগে বাইক চালাবেন। তবে হাওয়ার গতি বেশি থাকায় তা হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ কিলোমিটার বেগে বাইক চালিয়েছিলেন অগস্ত্য।রাস্তায় বসানো সিসি ক্যামেরায় দেখা গিয়েছিল, দুর্ঘটনার সময় ২৯৪ কিলোমিটার গতিবেগে বাইক চালাচ্ছিলেন অগস্ত্য। শনিবার আলিগড় পুলিশ অগস্ত্যের বাইক চালানোর ফুটেজ প্রকাশ করে। পাঁচ মিনিটের ফুটেজে দেখা গিয়েছে, ঝড়ের গতিতে বাইক চালাচ্ছেন অগস্ত্য।আলিগড় পুলিশ মনে করছে, ভয়ঙ্কর গতির কারণেই মৃত্যু হয়েছে অগস্ত্যের। শনিবার পর্যন্ত অগস্ত্যের মৃত্যু নিয়ে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, এই নিয়ে তদন্ত চলছে।কে এই অগস্ত্য চৌহান? অগস্ত্য দেহরাদূনের বাসিন্দা। তাঁর নিজস্ব একটি ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে। সেই চ্যানেলের নাম ‘প্রো রাইডার ১০০০’। সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ১২ লক্ষ।গত বছর অগস্ত্যের ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ১০ লক্ষ ছাড়িয়ে যায়। এর পরেই তাঁকে রুপোলি প্লেবাটন দেয় ইউটিউব। রুপোলি প্লেবাটনের প্রতীক হাতে একটি ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছিলেন অগস্ত্য।ইনস্টাগ্রামে অগস্ত্যের ফলোয়ারের সংখ্যা দু’লক্ষ ২৪ হাজার। সেখানেই নিজের বাইক অভিযানের একাধিক ছবি পোস্ট করেছিলেন তিনি।কাওয়াসাকি নিনজা বাইক রয়েছে অগস্ত্যের। এ দেশে তিনি এই বাইকের কনিষ্ঠতম মালিক।এই বাইকের দাম ১৬ থেকে ১৮ লক্ষ টাকা। ঘণ্টায় ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিতে ছুটতে পারে। শূন্য থেকে ১০০ কিলোমিটার গতিবেগে পৌঁছতে কাওয়াসাকি নিনজা বাইকের সময় লাগে তিন সেকেন্ড। শূন্য থেকে ২০০ কিলোমিটার গতিবেগে পৌঁছতে এই বাইকের সময় লাগে ১০ সেকেন্ড। অভিজ্ঞ চালকরাও এই বাইক চালিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন।এর আগে অগস্ত্যের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধি এবং মোটর যান আইনে একাধিক মামলা দায়ের করেছিল পুলিশ। ২০২৩ সালের শুরুতে তাঁকে আটকও করে পুলিশ। অভিযোগ ছিল, তাঁর বাইক চালনার কারণে পথচারীদের জীবন বিপদে পড়ছে।একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, দেহরাদূন পুলিশ ১২ জন ইউটিউব ব্লগারকে শনাক্ত করেছে, যাঁদের জন্য নাগরিকদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। তাঁরা এমন কিছু স্টান্ট করছেন, যার জেরে মানুষের জীবন বিপাকে পড়ছে। ওই ১২ জনের মধ্যে ছিলেন অগস্ত্যও।ভারতে প্রতি বছর পথদুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় প্রায় দেড় লক্ষ জনের। ২০২১ সালে ভারতে চার লক্ষ ১২ হাজার ৪৩২টি পথ দুর্ঘটনা হয়েছে। যাতে প্রাণ গিয়েছে এক লক্ষ ৫৩ হাজার ৯৭২ জনের। আহত হয়েছেন তিন লক্ষ ৮৪ হাজার ৪৪৮ জন। ২০২২ সালে এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক।