বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে পিতৃহীন দুই শিশু সন্তানের সম্পত্তি জোর করে দখল এবং সম্পত্তিতে থাকা গাছ কেটে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকা প্রতিপক্ষর বিরুদ্ধে। আর সেই সম্পত্তি রক্ষায় এতিম সন্তানদের মা বিধবা নারী আছমা বেগম প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন।যদিও এ ঘটনার পর আসমা বেগমের ভাই লিখিত অভিযোগ নিয়ে থানায় গেলেও পুলিশ তা মামলা হিসেবে গ্রহন করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে পুলিশ বলছে, অভিযোগ পাওয়ার পরপরই তারা সেখানে গিয়েছে এবং ১৪৪ ধারা জারি করেছে।
এদিকে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, বিষয়টি সমাধানের জন্য নোটিশের মাধ্যমে উভয় পক্ষকে ডেকে বসা হবে।
থানায় নিয়ে যাওয়া ভূক্তভোগী পরিবারের স্বজনের অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, আছমা বেগম তার দুই শিশু কন্যা সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় থাকেন। আসমা বেগমের প্রয়াত স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তি জোর পূর্বক দখল করার পায়তারা করছে মেহেন্দিগঞ্জের দক্ষিন উলানিয়া ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের মাইদুল ফকির ও তার ভাইয়েরা। এর জ্বের ধরে গত ২০ জানুয়ারি সকালে আছমা বেগমের ভোগ দখলীয় জমি থেকে বিভিন্ন প্রকার গাছ কেটে নেয়। পরবর্তীতে বিষয়টি জানতে পেরে আছমা বেগম তার ভাই মোঃ ইউসুফ তালুকদারকে জানালে তিনি তাৎক্ষনিক প্রতিপক্ষকে ফোন দেয়। এসময় প্রতিপক্ষ ইউসুফ তালুকদারকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে এবং মারধর ও খুন –জখমের হুমকি দেয়।
এ বিষয়ে আসমা বেগম বলেন, সাড়ে তিন বছর ও ১৩ বছরের দুটি শিশু সন্তান এবং আমাকে রেখে ২ বছর আগে স্বামী জালাল আহম্মদ মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর থেকে আমার শশুরের ওয়ারিশগনের সবার সাথে সু-সম্পর্ক থাকলেও মাইদুল ফকির এবং তার সহযোগীরা নানানভাবে আমার স্বামীর সম্পত্তি জোর পূর্বক দখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। যেসব জমি আমার স্বামী তার বাবার কাছ থেকে ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া সহ দলিলমুলে ক্রয়ও করেছেন। এছাড়া এক ভাই ও দুই বোনের জমিও ক্রয় করেছিলেন আমার স্বামী। তবে চক্রটি ইতিমধ্যে বেশ কিছু জমি দখলেও নিয়েছে। সর্বোশেষ ২০ জানুয়ারি সকালে আমার স্বামীর নামে দলিলকৃত ৫৬ শতাংশ জমির ওপর থাকা বিশালাকৃতির গাছগুলো কাটতে শুরু করে মাইদুল ফকির ও তার সহযোগীরা। বেশ কয়েকটি গাছ কাটার পর বিষয়টি আমি ও আমার অন্য স্বজনরা জানতে পেরে থানা পুলিশকে অবহিত করি। আসতে বিলম্ব করায় ৯৯৯ এ ফোন দেয়া হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে এবং গাছ কাটার দৃশ্য দেখতে পায়। এছাড়া গাছ কাটার বিষয়সহ জমি দখলের চেষ্টার মতো বিষয়গুলো আগে থেকেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আমরা জানিয়েও আসছি তবে তাতে কোনভাবেই আমার স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তি রক্ষা করতে পারছি না। আর দখলবাজরা আমার ও আমাদের সন্তানদের প্রতিনিয়ত হত্যা ও মারধরের হুমকি দিচ্ছে, সেইসাথে বাড়িতেও প্রবেশে বাধা দেয়ার কথা বলছে।
তিনি বলেন, ২০ জানুয়ারির ঘটনায় পর আমার ভাই থানায় মামলা দায়েরের জন্য লিখিত অভিযোগ নিয়ে যায়। তবে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছুটিতে থাকায় মামলাটি এখনও রুজু হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলামের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ছুটিতে আছেন বিধায় বিষয়টি সম্পর্কে জানতে সেকেন্ড অফিসারের সাথে কথা বলতে বলেন। থানার সেকেন্ড অফিসার এস.আই আরিফুর রহমান বলেন, জমিজমার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বিরোধ। তবে গাছ কাটার খবর পেয়ে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে যায় এবং সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করে এসেছে, বর্তমানে ওই জায়গায় স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। আসমা বেগমের পক্ষ থেকে করা অভিযোগ আমরা আমলে নেইনি এমন বিষয় সত্য নয়। আর দেওয়ানী মামলার বিষয়ে থানার কিছু করার থাকে না, এটি আদালতের বিষয়টি।
অপরিদেক যার বিরুদ্ধে গাছ কাটার অভিযোগ সেই মাইদুল ফকির জানিয়েছেন, ওয়ারিশ সূত্রে তাদের ওখানে জমি রয়েছে, আবার কিছু জমির এওয়াজ বদলের কথাও ছিলো। কিন্তু জালাল আহম্মদের মৃত্যুর পর ওখানে তাদের কোন জমি নেই এমনটা বলা হচ্ছে। তাই তারা তাদের জায়গা ভোগদখলের জন্য ঘটনাস্থলে গিয়েছে এবং চারটি গাছও কেটেছেন। পরে প্রশাসনের লোকজন এসে বন্ধ করে দিয়ে গেছে।
তিনি জানান, প্রতিপক্ষ সময় চেয়েছে, তারা এসে বিষয়টির সমাধান করবেন । আবার বর্তমান চেয়ারম্যান এলাকায় নেই, তাই তিনি আসা পর্যন্ত যেভাবে যা আছে সেইভাবে তা রাখা হয়েছে।
অপরদিকে বিষয়টি সম্পর্কে স্থানীয় চেয়ারম্যান মিলন চৌধুরী বলেন, বর্তমানে আমি এলাকার বাহিরে রয়েছি, তবে বিষয়টি আমি শুনেছি। যতদূর জানি গাছ কেটে কেউ নেয়নি, কাটার চেষ্টা করেছিলো। উভয় পক্ষের জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে। এ নিয়ে পরিষদে লিখিতও দিয়েছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে দুইপক্ষকেই নোটিশ করে এনে সমাধানের চেষ্টা করা হবে।