ঢাকা, শনিবার ২৩ই নভেম্বর ২০২৪ , বাংলা - 

হুমকি-ক্রোধ ভুলে বাইডেন কেন সৌদি আরবে

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক ।। ঢাকাপ্রে২৪.কম

2022-07-15, 12.00 AM
হুমকি-ক্রোধ ভুলে বাইডেন কেন সৌদি আরবে

ক্ষমতা নেওয়ার ১৮ মাসের মাথায় প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার প্রথম মধ্যপ্রাচ্য সফরে ইসরায়েল হয়ে শুক্রবার সৌদি আরব গেছেন।কিন্তু সৌদি আরবে মি. বাইডেনের এই সফর নিয়ে তার দেশে বিতর্ক শুরু হয়েছে। তার দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরেই একটি অংশ প্রচণ্ড নাখোশ। তাদের কথা - প্রেসিডেন্ট তার নীতি-নৈতিকতার সাথে আপোষ করলেন।সৌদি আরব আগাগোড়া মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার প্রধান একটি মিত্র দেশ। অনেক দিন ধরেই আমেরিকার নতুন যে কোন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা নিয়ে প্রথম যেসব দেশে যান তার একটি সৌদি আরব। তাহলে এখন কেন এই বিতর্ক?

 

কারণ, প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে-পরে তার কথা, অঙ্গীকারের সাথে মি. বাইডেনের এই সফরের কোনো সামঞ্জস্য নেই।

 

ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে সৌদি আরবের ভূমিকা নিয়ে আমেরিকার বহু মানুষের মত জো বাইডেনও ক্ষুব্ধ। এরপর সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগজির হত্যাকাণ্ডে তিনি যুবরাজ সালমান এবং সৌদি রাজপরিবারের ওপর এতটাই নাখোশ হয়েছিলেন যে নির্বাচনী প্রচারণায় ঘোষণা দেন ক্ষমতায় গেলে তিনি এই সৌদি শাসকদের 'একঘরে' করে ছাড়বেন।

 

আমেরিকা দশকের পর দশক ধরে প্রধানত জ্বালানি তেলের স্বার্থে মূল্যবোধ বিসর্জন দিয়ে সৌদি রাজপরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখেছে।

 

কিন্তু মি. বাইডেন ক্ষমতায় এসে বলতে শুরু করেন বাইরের যে কোনো দেশের সাথে তার সরকারের সম্পর্কের ভিত্তি হবে মানবাধিকার।

 

এরপর নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় গিয়েও তিনি সৌদি যুবরাজ সালমানের সাথে দেখা করতে বা কথা বলতে অস্বীকার করেন। সৌদি যুবরাজ তার সাথে কথা বলতে কয়েকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। সৌদি আরবের কাছে নূতন অস্ত্র বিক্রি স্থগিত করেন মি. বাইডেন।

 

সৌদি আরবে সফরের খবর নিশ্চিত হওয়ার পরও অর্থাৎ গত মাসেও মি. বাইডেন বলেন যুবরাজ সালমানের সাথে তার কোনো কথা হবেনা। কিন্তু পরে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয় দুজনের মধ্যে জেদ্দায় কথা হবে।

জামাল খাসোগজির হত্যাকাণ্ডে সৌদি যুবরাজ সালমানের ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন প্রেসিডেন্টা বাইডেন

 

কেন এই সুর বদল? বাইডেনের সাফাই

 

১৮ মাসের মাথায় এসে কেন উল্টো পথে হাঁটতে শুরু করলেন মি, বাইডেন?

 

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাস্তবতার কাছে মাথা নত করছেন বা মেনে নিচ্ছেন ৭৯ বছরের এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আর এর পেছনে প্রধানত কাজ করছে ইউক্রেন যুদ্ধ।

 

গত কয়েকদিন ধরে নিজেই তার মত বদলের পক্ষে যুক্তি তুল ধরার চেষ্টা করেছেন মি. বাইডেন।

কদিন আগে ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় নিজের লেখা এক নিবন্ধে তিনি বলেছেন, সৌদি আরবকে "ব্ল্যাংক চেক" দেওয়ার নীতি তিনি বদলে দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু ইউরোপে যুদ্ধের কারণে মধ্যপ্রাচ্যের এবং সৌদি আরবের গুরুত্ব তিনি অনুধাবন করছেন।

 

মি. বাইডেন লিখেছেন, "রাশিয়ার আগ্রাসনের পাল্টা ব্যবস্থা আমাদের নিতে হবে। চীনের সাথে প্রতিযোগিতায় আমাদের শক্ত অবস্থান প্রয়োজন....এ কারণে সেসব দেশের সাথে আমাদের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে যারা আমাদের চেষ্টায় সাহায্য করতে পারে। সৌদি আরব তেমন একটি দেশ।"

 

জেরুজালেমে বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ইয়ার লাপিডের সাথে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করেন সৌদি যুবরাজের সাথে বৈঠকে তিনি খাসোগজি হত্যাকাণ্ডের কথা তুলবেন কিনা।

 

সে প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে মি. বাইডেন আবারও যুক্তি তুলে ধরেন কেন তিনি সৌদি আরব যাচ্ছেন।

 

তিনি বলেন, "অশান্ত মধ্যপাচ্যের" স্থিতিশীলতার জন্য এবং এই অঞ্চল যেন "চীন ও রাশিয়ার প্রভাব বলয়ে ঢুকে না পড়ে" সেজন্য সৌদি আরবের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

 

"খাসোগজির ব্যাপারে আমার অবস্থান সুস্পষ্ট। আমি কখনই মানবাধিকারের প্রশ্নে চুপ থাকবো না। কিন্তু আমি সৌদি আরব যাচ্ছি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থে, মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের প্রভাব সংহত করার এটি একটি সুযোগ।"

 

মি. বাইডেন সরাসরি বলেন, আমেরিকা যখন বিশ্বে তাদের প্রভাব ধরে রাখতে চীন ও রাশিয়ার সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত, সেখানে "সৌদিদের অবজ্ঞা করলে আমেরিকার স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হবে।"

 

"এর সাথে এখন আমেরিকার স্বার্থ জড়িত। এই অঞ্চলে আমেরিকার নেতৃত্ব অক্ষত থাকুক আমি তা নিশ্চিত করতে চাই । এমন কোনো শূন্যতা যেন এখানে তৈরি না হয় হয় যেখানে রাশিয়া এবং চীন তা পূরণ করে ফেলে।"

 

এটা অনস্বীকার্য যে গত ১৮ মাস ধরে হোয়াইট হাউজের সাথে সম্পর্ক শীতল হয়ে যাওয়ায় সৌদিরা চীন ও রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক বাড়িয়েছে। চীনের সাথে সৌদি আরবের ব্যবসা ক্রমাগত বাড়ছে। মি. পুতিনের সাথে যুবরাজ সালমানের সম্পর্ক বেশ উষ্ণ।

 

তাছাড়া, আমেরিকা অবজ্ঞা করলেও দেশের ভেতর ক্ষমতা সংহত করতে তাকে তেমন কোনো বেগ পেতে হচ্ছেনা, এবং আমেরিকা চায় বা না চায় তিনিই যে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই দেশের বাদশাহ হচ্ছেন তা নিয়ে তেমন কোনো সন্দেহ আর নেই।

 

তেল ফ্যাক্টর

 

বাইডেন প্রশাসনের একাংশের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরেই যুবরাজ সালমান এবং সৌদি আরব নিয়ে প্রেসিডেন্টের অবস্থানের পরিণতি নিয়ে অস্বস্তি তৈরি হচ্ছিল।ইউক্রেন সংকটের পর যুক্তরাষ্ট্রের তেলের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেওয়ায় সেই অস্বস্তি বেড়ে যায়। মি বাইডেনও বুঝতে পারছেন বাড়তি সৌদি তেল এখন আমেরিকার জন্য জরুরি।

 

"ছেলেমানুষি কাটিয়ে বাইডেনের প্রশাসন অভিজ্ঞ হতে হতে শুরু করেছে, " ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন ব্রায়ান কাটুলিস, ওয়াশিংটনে গবেষণা সংস্থা মিডল-ইস্ট ইন্সটিটিউটের ভাইস প্রেসিডেন্ট। "বিষয়টা এমন নয় যে আপনি এই ব্যক্তিকে (যুবরাজ সালমান) ক্ষমতা থেকে সরাতে পারবেন। ফলে, জটিল এই পরিস্থিতি যতটা সম্ভব সামাল দিয়ে নিজের স্বার্থ দেখা ... মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার এমন নীতির ভুরিভুরি নজির রয়েছে।"

 

অর্থাৎ সৌদি আরবের ব্যাপারে আমেরিকার গতানুগতিক বিদেশ নীতির পথে ফিরে গেছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।

 

কিন্তু অনেক পর্যবেক্ষক মনে করছেন এর রাজনৈতিক মূল্য দিতে হতে পারে তাকে।