ঢাকা, বৃহস্পতিবার ৯ই মে ২০২৪ , বাংলা - 

ইউক্রেন সংকটে এত তৎপর কেন ইসরায়েল

ডেস্ক।।নিউজফক্স২৪.কম

2022-03-10, 12.00 AM
ইউক্রেন সংকটে এত তৎপর কেন ইসরায়েল

ইউক্রেনে ১৫ দিন আগে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। অভিযান শুরুর পর গত শনিবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করতে মস্কোয় যান ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেত। প্রাণহানি কমাতে ও এই সামরিক অভিযানের ইতি টানতে এই পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি।রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর যে বিরোধ, তা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বেনেট যে খুব উপযুক্ত একজন মধ্যস্থতাকারী, এমনটা নয়। এর বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এর একটি হলো, মাত্র ৯ মাস হলো ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন তিনি। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক কোনো সংকটের সমাধানেও তিনি পরীক্ষিত নন। এসব সীমাবদ্ধতার পরও তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের স্বার্থ ও ইউক্রেনে ইহুদি সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে এসব পদক্ষেপ নিচ্ছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

এসব ইস্যুতে গত শুক্র ও শনিবার পুতিনের সঙ্গে তিন ঘণ্টা বৈঠক করেছেন বেনেত। এরপর তিনি জার্মানির বার্লিন গেছেন। সেখানে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ ছাড়া ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে একাধিকবার টেলিফোনে কথা বলেছেন তিনি। এখানেই শেষ নয়। মঙ্গলবার পুতিন ও জেলেনস্কির সঙ্গে আবারও টেলিফোনে কথা বলেন। যদিও এসব কথোপকথনের কোনো কিছুই প্রকাশ্যে আসেনি।

এসব বৈঠক প্রসঙ্গে ইসরায়েল সরকারের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ইউক্রেনে যে হামলা চলছে, তা বন্ধে বেনেটের নেতৃত্বে যাঁরা কাজ করছেন তাঁরা পশ্চিমা বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ইউক্রেন সংকট নিয়ে ইসরায়েলের যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের একজন দাবি করেন, বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে যোগাযোগে বাড়াতে ও ব্যবধান কমাতে সাহায্য করছেন বেনেত। এ অঞ্চলে যে সংকট রয়েছে, তারও একটি ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন তিনি। আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘যদি সাহায্য করার সুযোগ থাকে, তবে আমাদের দায়িত্ব সেই কাজটি করা। দুই পক্ষের মধ্যে যে ব্যবধান রয়েছে তা কমাতে কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী।’
বিজ্ঞাপন

মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিজে কী আশা করছেন, এ নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে কথা বলেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ আছে এবং এই সংকট সমাধানের সামর্থ্যও আছে। আমি বিষয়টাকে এভাবে দেখছি, এই সংকট সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।’

ইউক্রেন সংকটের কূটনৈতিক সমাধানে কিয়েভের মিত্রদেশ ইসরায়েলের পদক্ষেপে সাহায্য করছে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্যমান সংকটের সমাধানে পৌঁছাতে খানিকটা পথ হেঁটেছেন বেনেত। তবে ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ার লাপিড সরাসরি রাশিয়ার সামরিক হস্তক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছেন। আবার ইউক্রেন সামরিক সাহায্য চাইলেও তা দেয়নি ইসরায়েল। এর বিপরীতে ইউক্রেনকে ১০০ টন ত্রাণ ও একটি হাসপাতালের জন্য ৬টি বড় জেনারেটর পাঠিয়েছে দেশটি। পোল্যান্ডের সীমান্তের কাছে ওই ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে সেবা দেবেন ইসরায়েলের চিকিৎসকসহ ৮০ জন স্বাস্থ্যকর্মী। এভাবেই ভারসাম্য ধরে রাখছে ইসরায়েল।

ইউক্রেন এবং রাশিয়ার সঙ্গে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে ইসরায়েলের। ১৯৯০-এর দশকে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের ১০ লাখের বেশি ইহুদি ইসরায়েলে গেছেন। বর্তমানে ইসরায়েলের অনেকে রাজনীতিক রয়েছেন, যাঁদের জন্ম এই দুই দেশে।

চলতি সংকটে ইউক্রেন থেকে প্রায় ২ লাখ ইহুদিকে সরিয়ে নেওয়া ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল। আর এই যুদ্ধ শুরুর পর প্রায় সাড়ে তিন হাজার ইউক্রেনীয় ইসরায়েলে আশ্রয় নিয়েছেন।

আবার ক্রেমলিনের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক রাখছে ইসরায়েল। সিরিয়ায় ইরানের সামরিক উপস্থিতি যাতে আর না বাড়ে, সে জন্য রাশিয়ার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখছে ইসরায়েল। এ প্রসঙ্গে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ার লাপিড গত সপ্তাহে বলেছেন, সিরিয়ায় রুশ সেনা থাকার অর্থ হলো, ইসরায়েলের একটি নিরাপত্তা সীমান্ত রাশিয়ার সঙ্গে রয়েছে।
ইউক্রেন বলছে, রুশ হামলা অব্যাহত থাকায় তারা দেশটির অবরুদ্ধ শহরগুলো থেকে বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে পারছে না
ইউক্রেন বলছে, রুশ হামলা অব্যাহত থাকায় তারা দেশটির অবরুদ্ধ শহরগুলো থেকে বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে পারছে নাছবি: রয়টার্স

সিরিয়ায় ইরানের বিরুদ্ধে যেকোনো সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার আগে রুশ সেনাদের সতর্ক করে থাকে ইসরায়েল; যাতে তারা (রুশ সেনারা) ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সামরিক বিশ্লেষক অ্যামোস হারেল বলেন, সিরিয়ায় অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে ইসরায়েল যে স্বাধীনতা পায়, তা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রয়েছে পুতিনের। ইউক্রেন ইস্যুতে (ইসরায়েলের মধ্যস্থতায়) রাশিয়া যদি কোণঠাসা হয়ে পড়ে, তবে সিরিয়ায় ইসরায়েলের পদক্ষেপ নিতে পারেন তিনি।

হারেল আরও বলেন, ইসরায়েল চাইলে রাশিয়ার অনুমোদন ছাড়াই সিরিয়ায় হামলা চালাতে পারে। কিন্তু ইসরায়েল সেটি করে না; কারণ এ ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধেই পাল্টা হামলা চালাতে পারে রাশিয়া।

হারেলের এমন বক্তব্যের মিল পাওয়া যাচ্ছে সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে। গত সোমবার সিরিয়ার দামেস্কে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের দুই কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বেনেত ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে সরিয়ে। জোট করে, ক্ষমতা ভাগাভাগির নিশ্চয়তা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন তিনি। জোটের শর্ত অনুসারে, আগামী বছর বেনেত ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন লাপিডের কাছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, বেনেত ক্ষমতা ছাড়ার আগে এ সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন। দেশের মানুষের কাছে ভাবমূর্তির উন্নয়নে ইউক্রেন সংকট সমাধানের পথ বেছে নিচ্ছেন তিনি।

পুতিনের সঙ্গে বেনেত যে বৈঠক করেছেন, তাতে ইসরায়েলের জনসাধারণের সমর্থনও রয়েছে। তাঁর এ বৈঠকের পক্ষে দেশটির ৪৮ শতাংশ মানুষ। বিপক্ষে ৩৪ শতাংশ। এ প্রসঙ্গে জেরুজালেম পোস্টের কন্ট্রিবিউটিং এডিটর লাহাব হারকভ বলেন, বেনেতের এই উদ্যোগে ঝুঁকিও রয়েছে। যদি ইউক্রেন সংকট সমাধানের চেষ্টায় ব্যর্থ হন, তবে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং এই পরিস্থিতি হবে তাঁর জন্য বিব্রতকর।