ঢাকা, বুধবার ৮ই মে ২০২৪ , বাংলা - 

পড়াশোনা করবেই আফগান মেয়েরা

আন্র্তজাতিক রিপোর্ট।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2021-10-29, 12.00 AM
পড়াশোনা করবেই আফগান মেয়েরা

ক্ষমতায় এসেই মেয়েদের স্কুল-কলেজ যাওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে আফগানিস্তানের নয়া তালিবান সরকার। ১২ বছরের ঊর্ধ্বে পড়াশোনা করলেই কঠিন শাস্তি। যদিও সেই ‘ফতোয়া’ উড়িয়ে গোপনে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন আফগান সাহসিনীরা।

হেরাটের বাসিন্দা জ়ায়নাব মহম্মদি রোজ লগ অন করছেন। অনলাইনে ক্লাস চলছে কোডিংয়ের। অগস্ট থেকে বন্ধ রয়েছে তাঁর স্কুল। ২৫ বছর বয়সি তরুণী বলেন, ‘‘আমাদের মতো মেয়েদের জন্য হুমকি রয়েছে। মৃত্যুভয় রয়েছে। তালিবান যদি জানতে পারে... হয়তো আমায় কঠিনতম শাস্তি দেবে। হয়তো পাথর ছুড়ে মেরেই ফেলবে। কিন্তু সেই ভয়ে আশা ছাড়তে আমি রাজি নই। পড়াশোনা আমি চালিয়ে যাবই।’’

স্কুল, কলেজ বন্ধ তো কী আছে! ইন্টারনেট আছে। প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর আফগান মেয়েরা। ভিডিয়ো কলে সাংবাদমাধ্যমকে তাঁদের এই লড়াইয়ের কাহিনি শুনিয়েছেন মহম্মদির মতো অনেকেই। এমন শয়ে শয়ে আফগান মহিলা অনলাইন ক্লাস করছেন, নয়তো কোনও গোপন অস্থায়ী ক্লাসরুমে বসে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন।‘কোড টু ইন্সপায়ার’ (সিটিআই) আফগানিস্তানের প্রথম মেয়েদের কোডিং অ্যাকাডেমি। তারা একটি এনক্রিপটেড ভার্চুয়াল ক্লাসরুম তৈরি করেছে। প্রতিষ্ঠানের প্রধান ফেরেস্তে ফরো জানিয়েছেন, তাঁরা অন্তত ১০০ ছাত্রীকে ল্যাপটপ ও ইন্টারনেট দিয়েছেন। অনলাইনে পড়াশোনার সব তথ্য দিয়ে দেওয়া হয়। এই ক্লাসেই রয়েছেন মহম্মদিও। তরুণী বলেন, ‘‘আমাদের বাড়িতে আটকতে রাখা হতে পারে। কিন্তু ইন্টারনেটের জগতে কে আটকাবে? এখানে তো কোনও সীমান্ত নেই। প্রযুক্তির তো এটাই মজা।’’

অফং নু

সেপ্টেম্বর থেকে ছেলেদের জন্য স্কুল-কলেজ খুলে দিয়েছে তালিবান। প্রাথমিক স্কুলে যাওয়ার অনুমতি রয়েছে বালিকাদেরও। কিন্তু ১২ বছরের উপরে বাড়ি থেকে বেরনোর অনুমতি নেই। তবে নয়া ‘তালিবান ২.০’-র দাবি, সেই আগের জমানা নেই। মেয়েদেরও কিছুটা ছাড় দেওয়া হবে। বছর শেষের মধ্যে জানানো হবে এ বিষয়ে। কিন্তু তালিবানের উপরে ভরসা নেই আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষের।রাষ্ট্রপুঞ্জের বক্তব্য, এমনিতেই দেশটাতে লিঙ্গ বৈষম্য ভয়াবহ। শিক্ষার অভাবে দারিদ্র, বাল্যবিবাহ, অল্প বয়সে সন্তানের জন্ম দেওয়া, নিজের অধিকার সম্পর্কে অসচেতন, সাধারণ সরকারি পরিষেবা সম্পর্কে অজ্ঞতা রয়েছে আফগান মেয়েদের। ফরো বলেন, ‘‘শিক্ষার অধিকার পেলে মেয়েরা নিজেদের ভাল বুঝতে শিখবে, উপার্জন করতে শিখবে, বধূ নির্যাতন কমবে, তাঁদের কণ্ঠরোধ করা যাবে না সহজে। তালিবান কবে পড়াশোনার অধিকার দেবে মেয়েদের, সেই ভেবে আমরা অপেক্ষা করতে পারব না। আমাদের শিক্ষা-অভিযান চলবে।’’

সাইকোলজির ছাত্রী আইসা ভেবেছিলেন, পড়াশোনা শেষ করে দেশে মনোরোগ নিয়ে কাজ করবেন। তালিবানের ক্ষমতা দখলে সেই স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছে। তাঁর পরিবারের কাছে ইতিমধ্যেই তালিবানের হুমকি এসেছে। তাতেও দমেননি মেয়ে। আমেরিকার একটি সংস্থা (ইউনিভার্সিটি অব পিপল)-র অনলাইন কোর্সে যোগ দিচ্ছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়টি হাজার জন আফগান তরুণীকে স্কলারশিপ দিচ্ছে। আইসা বলেন, ‘‘স্নাতক হওয়ার জন্য এটাই আমার শেষ সুযোগ। এ ভাবে গোপনে পড়াশোনা করা ছাড়া আমার মতো মেয়ের তো আর কোনও উপায় নেই।’’

কিন্তু ইন্টারনেট বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, তালিবান শাসনে দেশটার আর্থিক অবস্থা শোচনীয়। বিদ্যুৎ সরবরাহ থেকে যোগাযোগকারী নেটওয়ার্ক কিংবা প্রযুক্তি পরিকাঠামো বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়বে আফগানিস্তানের জন্য। তা ছাড়া, পড়শি দেশের স্যাটেলাইট সংস্থা বা ফাইবার প্রদানকারী সংস্থারা (যেমন ইরান স্ন্যাপ সার্ভিসেস), সেই সঙ্গে তালিবানও ইন্টারনেটে নজরদারি শুরু করবে। ইন্টারনেট ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞাও জারি হয়ে যেতে পারে। কাবুলের আইটি কনসালট্যান্ট মুস্তাফা সুলতানির ভয়, ‘‘খুব শিগগিরি ডিজিটাল দুনিয়ায় নজরদারি শুরু করবে তালিবান। বিশেষ করে, তাদের সমালোচকদের চিহ্নিত করতে।’’তবে এতে কিছু এসে যায় না ‘লার্ন’ নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা পাশতানা জ়ালমাই খান দুরানি-র। একটি গোপন স্কুলে ১০০ ছাত্রীকে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও অঙ্কের পাঠ দিচ্ছেন তিনি। তাঁকে ইন্টারনেট পরিষেবা দিয়ে সাহায্য করছে আমেরিকার একটি সংস্থা। ২৩ বছর বয়সি দুরানি বলেন, ‘‘তালিবান আমার কিছু করতে পারবে না। ওরা যদি ইন্টারনেট বন্ধ করে, আমার নিজস্ব পরিষেবা আছে।’’