ঢাকা, বৃহস্পতিবার ৯ই মে ২০২৪ , বাংলা - 

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে বিব্রত চন্দনাইশবাসী

মাজেদুল নয়ন।। বিশেষ প্রতিনিধি।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2021-08-25, 12.00 AM
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে বিব্রত চন্দনাইশবাসী

বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে ও নিজেদের সরকারি দলের ব্যক্তি এবং মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে নানান কার্যক্রম পরিচালনা করছেন গুটিকয়েক অসৎ ব্যক্তি। এর ফলে যেমন সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা হচ্ছে, তেমনি ক্ষুন্ন হচ্ছে সরকারের দলীয় ইমেজ।
সম্প্রতি এমনই একজন ব্যক্তির  কার্যকলাপ চোখে পড়েছে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নে। চন্দনাইশের মোহাম্মদপুর ভুঁই খাজা বাড়ীর খুঁচিয়া কুটির নিজস্ব বাসভবনে এডভোকেট বদিউল আলম ও জেবুন্নেসা বেগম ট্রাস্টের নাম ব্যবহার করে কথিত ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম ম্যাক ত্রাণ বিতরন করেন। এসব ত্রান বিতরনের কিছু ছবি অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় এলাকায় বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। স্থাণীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা যায় এই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ম্যাক মূলত নিজের দূর্ণীতি এবং অনৈতিক কাজ ধামাচাপা দেয়ার জন্য বিভিন্ন সামাজিক ও দাতব্য সংগঠনের নাম ভাঙ্গিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে স্থাণীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম হোসাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি ১ নং সেক্টরের অধীনে ১৫৪ নং গ্রুপে যুদ্ধ করেছি। এখানে কারা কারা মুক্তিযোদ্ধা সেটা আমাদের সকলেরই জানা। ২০০০ সালের দিকে প্রথমবারের মতো শুনতে পাই আবুল কাশেম মুক্তিযুদ্ধ করেছেন এবং তার সার্টিফিকেট রয়েছে। পরে ২০১৭ সালের মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয় এবং মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ডের পক্ষ থেকে সার্টিফিকেট যাচাই বাছাইয়ের সময় তার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করা হয়।
তিনি জানান, মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় ব্যবহার করে সরকারি জমি ক্রয়সহ নানান দূর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। চন্দনাইশ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এর কমান্ডার আব্দুল জব্বার এ বিষয়ে বলেন, ম্যাক আসলে একজন প্রতারক। তার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি গ্যাজেট এর মাধ্যমে বাতিল করা হয়েছে। এছাড়াও ইতিপূর্বে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগে সেগুলো থেকেও তাকে বাদ দেয়া হয়েছে।

ভুঁই খাজা মসজিদের সভাপতি কেএম ফেরদৌস হোসাইন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বরেণ্য আইনজীবি ও মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও বহু গ্রন্থের লেখক মরহুম এডভোকেট বদিউল আলম এবং তার সহধর্মীনি জেবুন্নেসা বেগম এর নামে পরিচালিত ট্রাস্টটি গত আঠারো বছর যাবত চন্দনাইশের দুস্থ্ মানুষের কল্যানে কাজ করে আসছে।  ধর্মবর্ন নির্বিশেষে সুবিধাবঞ্চিত নারী, প্রতিবন্ধী শিশু ও দরিদ্রদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এছাড়াও রয়েছে নিয়মিত ত্রান কার্যক্রম। আবুল কাশেম ম্যাকের মতো দূর্নীতিগ্রস্থ এবং ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা এখন এই ট্রাস্টের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে নিজের অপকর্মকে আড়াল করার চেষ্টা করছেন।

এব্যাপারে চন্দনাইশ উপজেলা যুবলীগের সদস্য  আজিজুর রহমান আরজু বলেন, ২০০৫ সালের দিকে স্থাণীয় মসজিদ, মাদ্রাসা, ভুঁই খাজা মাজারসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে নিজের নামে ওয়াকফ্ করার চেষ্টা করেন ম্যাক। এ বিষয়ে স্থাণীয় ১৭৪ জন গণ্যমাণ্য ব্যক্তি ঢাকায় ওয়াকফ বিভাগে অভিযোগ করলে তার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। ইতোপূর্বে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাকে ডেকে ভবিষ্যতে এই পদবী ব্যবহার না করার জন্য সতর্ক করে দেন।

স্থাণীয়রা বলছেন, এই ধরনের দূর্নীতিপরায়ন এবং প্রমানিত মুক্তিযুদ্ধের ভুয়া সার্টিফিকেটধারী ব্যক্তিদের কার্যকলাপে এলাকাবাসী খুবই বিব্রত। মহান মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করে ও হতদরিদ্র মানুষকে পুজিঁ করে কেউ যেন কোন প্রতারনা করতে না পারেন, সে বিষয়ে সকলকে সজাগ থাকার অনুরোধ জানান।