ঢাকা, বুধবার ৮ই মে ২০২৪ , বাংলা - 

চীন তালেবানপন্থি হয়ে ওঠার নেপথ্যে

ডেস্ক রিপোর্টার।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2021-08-17, 12.00 AM
চীন তালেবানপন্থি হয়ে ওঠার নেপথ্যে

১৯৯৬ সালে তালেবান যখন প্রথমবার আফগানিস্তান দখল করে, তখন তাদের স্বীকৃতি দিতে রাজি হয়নি চীন। এমনকি নিজেদের দূতাবাস বহু বছর বন্ধ রেখেছিল তারা। তবে এবার তালেবান কাবুলের মসনদ দখলে নেওয়ার মুহূর্তে সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপে হাজির চীনারা। সশস্ত্র গোষ্ঠীটির প্রতি ইদানীং অভাবনীয় উদারতা দেখাচ্ছে বেইজিং।

চীনাদের এই পরিবর্তন দৃশ্যমান হতে শুরু করেছিল সপ্তাহ দুয়েক আগে। ওই সময় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই নিজে তিয়ানজিন শহরে তালেবানের একদল প্রতিনিধিকে স্বাগত জানাতে হাজির হয়েছিলেন। আফগানিস্তানে একের পর এক শহর দখলে নেওয়ার সময়ই চীন সফরে গিয়েছিলেন তালেবানের শীর্ষ নেতারা। তাদের হতাশ করেনি বেইজিং। আফগানিস্তান শাসনে তালেবান ‘গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা’ রাখবে মন্তব্য করে সশস্ত্র গোষ্ঠীর বৈধতাপ্রাপ্তির আশায় জোর হাওয়া লাগান চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এর কিছুদিন পরই তালেবান যখন ধীরে ধীরে কাবুলের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল, তখন চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা শিনহুয়া এটিকে ‘মার্কিন আধিপত্য হারানোর ঘণ্টাধ্বনি’ উল্লেখ করে সংবাদ প্রচার করে। এমনকি তালেবান যোদ্ধারা কাবুলে প্রবেশ করাকে ১৯৪৯ সালে মাও সে তুংয়ের বেইজিং দখলের ঘটনার সঙ্গে তুলনা করে প্রচারণা চলেছে চীনের কঠোর নিয়ন্ত্রিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

লধমড়হবংি২৪

এসবই চীনের সুদীর্ঘ বিবর্তনের অংশ। অথচ ২০১৩ সালের আগে তারা তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেও অস্বীকৃতি জানাত। এই পরিবর্তনের পেছনে চীনের বৈশ্বিক শক্তি হয়ে ওঠার স্বপ্ন বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ১৯৯৬ সালের তুলনায় চীনের এখনকার অর্থনীতি ১৭ গুণ বড়। আজকের চীন ১৪ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক পরাশক্তি। এই শক্তি আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে ইউরেশীয় অঞ্চলে বাণিজ্য ও অবকাঠামো নির্মাণের দানবীয় প্রকল্প হাতে নিয়েছে তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও চীনকে আফগানিস্তানে বন্ধুসুলভ শাসকগোষ্ঠী তৈরিতে প্ররোচিত করেছে। দক্ষিণ এশীয় দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব হারানো ও সেনা প্রত্যাহারের ফলে সৃষ্ট যেকোনও সুযোগ লুফে নিতে চাইবেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তবে প্রথমে সোভিয়েত ইউনিয়ন, এরপর যুক্তরাষ্ট্র ব্যর্থ হওয়ায় আফগানিস্তানে প্রভাব ধরে রাখায় কোনও ভুল করতে চাইবে না চীন। সন্দেহাহীতভাবে এ বিষয়ে তারা বাড়তি সতর্ক।

ওয়াশিংটনভিত্তিক স্টিমসন সেন্টারের চীনা প্রোগ্রামের পরিচালক ইয়ুন সানের মতে, ২০ বছর আগে চীন বৈশ্বিক শক্তি ছিল না, সেই সময় আফগানিস্তানে কী ঘটছে তা নিয়ে মাথাব্যথাও ছিল না তাদের। কিন্তু আজ নতুন অনেক বিষয় চলে এসেছে- উইঘুর ইস্যু রয়েছে, অর্থনৈতিক স্বার্থ রয়েছে, রয়েছে চীনের বৈশ্বিক শক্তি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা।

লধমড়হবংি২৪

শুধু তা-ই নয়, আলোচনার মাধ্যমে শান্তির আহ্বান জানিয়ে চীন নিজেকে পশ্চিমাদের চেয়ে বেশি বাস্তববাদী এবং কম হস্তক্ষেপবাদী হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছে। অবশ্য আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতা থেকে সুবিধাভোগীদের মধ্যে চীন অন্যতম। সেখানে মার্কিন আধিপত্য কমে যাওয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বী চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য তুলনামূলক স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এতে একটি তামার খনিসহ বেশ কয়েকটি তেলক্ষেত্র সংশ্লিষ্ট স্বার্থরক্ষায় উঠে পড়ে লেগেছে চীনারা।

তাছাড়া, প্রতিবেশী পাকিস্তানে চীনাদের ৫০ বিলিয়ন ডলারের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের নিরাপত্তার জন্যেও আফগানিস্তানে স্থিতিশীল পরিবেশ জরুরি মনে করছে বেইজিং। চীনাদের আরেকটি লক্ষ্য সম্ভবত আফগানিস্তান যেন এমন কোনও উগ্রবাদের উৎস না হয়, যার মাধ্যমে চীন সীমান্তে রক্তপাতের আশঙ্কা থাকে।

গত ২৮ জুলাইয়ের বৈঠকে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী তালেবান প্রতিনিধিদের স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, তারা যেন তুর্কিস্তান ইসলামিক পার্টির সঙ্গে কোনও সম্পর্ক না রাখে। এই দলটি মূলত স্বাধীনতাকামী উইঘুরদের, যারা চীনের জিনজিয়াংয়ে পূর্ব তুর্কিস্তান নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গড়তে চায়।

বৈঠকে চীনা মন্ত্রীকে তালেবান নেতা মোল্লা আব্দুল গানি বারাদার আশ্বস্ত করেছেন, তারা আফগান ভূমি ব্যবহার করে কোনও শক্তিকে চীনবিরোধী কর্মকাণ্ড চালাতে দেবেন না।

সাংহাই ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফ্যান হোংডার মতে, তালেবান নেতৃত্বাধীন শাসন ব্যবস্থার প্রতি চীনের মনোভাব নির্ভর করবে মূলত তাদের নীতির ওপর। যেমন, তালেবান প্রতিশ্রুতি পালন করবে কি না, আফগানিস্তান চীনবিরোধী শক্তির ঘাঁটি হয়ে উঠবে কি না- এগুলোই মূল প্রভাবক হতে পারে। সূত্র: ব্লুমবার্গ