ঢাকা, বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫,
সময়: ০২:৫৯:০১ AM

মানবিক রাজনীতির অনন্য উদাহরণ: শিমুল বিশ্বাস

মান্নান মারুফ
16-12-2025 09:48:16 PM
মানবিক রাজনীতির অনন্য উদাহরণ: শিমুল বিশ্বাস

নিজ নিজ ক্ষেত্রে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার সম্মিলনে যেমন একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে, তেমনি আস্থা, শ্রম ও স্বপ্নের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে একটি আদর্শ পরিবার। এমনই মানবিক মূল্যবোধে গড়া এক ঐতিহ্যবাহী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন পাবনার কুঠিপাড়ার সন্তান অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। মানবিকতা, শিক্ষা ও সমাজসেবার সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা এই পরিবারের উত্তরাধিকার তিনি বহন করে চলেছেন তাঁর চিন্তা, চরিত্র ও কর্মের মাধ্যমে।

অ্যাডভোকেট শিমুল বিশ্বাস একজন পরীক্ষিত, পরিণত ও দূরদর্শী রাজনীতিক। তিনি আসন্ন ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাবনা-৫ আসন থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) মনোনীত প্রার্থী। স্থানীয় সাধারণ মানুষের মতে, এলাকায় তাঁর জনপ্রিয়তা এতটাই সুদৃঢ় যে নির্বাচনে তাঁর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো শক্তিশালী প্রার্থী নেই বললেই চলে। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সততা, জনসম্পৃক্ততা ও মানবিক কর্মকাণ্ড তাঁকে এলাকাবাসীর আস্থার প্রতীকে পরিণত করেছে।

রাজনৈতিক জীবনে তিনি বারবার বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আস্থা ও বিশ্বাসের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে থেকে তিনি বিএনপির একজন বিশ্বস্ত সহচর ও নির্ভরযোগ্য সহযোদ্ধা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সেই ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবেই বর্তমানে তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি তারেক রহমান সম্পাদিত ও প্রকাশিত জাতীয় দৈনিক দিনকাল-এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হিসেবেও তিনি দায়িত্বশীল ভূমিকা রেখে চলেছেন।

পারিবারিক দিক থেকে অ্যাডভোকেট শিমুল বিশ্বাস এক সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের উত্তরসূরি। তাঁর পিতা মরহুম আজিজুল ইসলাম বিশ্বাস ছিলেন একজন সৎ, শিক্ষানুরাগী ও সমাজসচেতন মানুষ। দাদা আলহাজ আহেদ আলী বিশ্বাস ছিলেন ব্রিটিশ আমলের খ্যাতিমান ঠিকাদার ও বিশিষ্ট সমাজহিতৈষী, যিনি অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি মানুষের মনন, নৈতিকতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা গঠনে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। এই মানবিক উত্তরাধিকারই অ্যাডভোকেট শিমুল বিশ্বাসের জীবনের প্রতিটি স্তরে গভীরভাবে প্রতিফলিত।

শৈশব থেকেই তিনি বেড়ে উঠেছেন ভালোবাসা, শৃঙ্খলা ও মানবিক শিক্ষার পরিবেশে। প্রাথমিক শিক্ষা শেষে তিনি গোপাল চন্দ্র ইনস্টিটিউট, এডওয়ার্ড কলেজ এবং শহীদ বুলবুল কলেজে অধ্যয়ন করেন। পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনশাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তবে তাঁর শিক্ষা কেবল পাঠ্যবইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না; সমাজের বাস্তবতা অনুধাবন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মধ্যেই তিনি প্রকৃত শিক্ষার অর্থ উপলব্ধি করেন।

ছাত্রজীবন থেকেই তাঁর রাজনৈতিক সক্রিয়তা লক্ষ্যণীয় ছিল। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে তাঁর সাহসী, সুস্পষ্ট ও দৃঢ় অবস্থান তাঁকে দ্রুত জনপ্রিয় করে তোলে। শহীদ বুলবুল কলেজে টানা তিনবার ভিপি নির্বাচিত হওয়া তাঁর নেতৃত্বগুণ, সাংগঠনিক দক্ষতা ও জনপ্রিয়তার উজ্জ্বল প্রমাণ। তিনি রাজনীতিকে কখনো ক্ষমতা বা ব্যক্তিস্বার্থ অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে দেখেননি; বরং জনগণের সেবায় আত্মনিয়োগের এক পবিত্র দায়িত্ব হিসেবেই বিবেচনা করেছেন।

আইনশাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি পাবনা বার অ্যাসোসিয়েশনে যোগ দেন। তবে পেশাগত গণ্ডির মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ না রেখে তিনি শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তাঁর উদ্যোগে শ্রমিক ফেডারেশন ও পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন গড়ে ওঠে, যার মাধ্যমে বহু শ্রমজীবী মানুষ সংগঠিত, সচেতন ও অধিকার সম্পর্কে অবহিত হন।

২০০২ সালে তিনি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর দক্ষতা, সততা ও দূরদর্শী নেতৃত্বে একটি লোকসানী প্রতিষ্ঠান লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়। নৌপথ উন্নয়ন, ফেরিঘাট সংস্কার এবং যাত্রীসেবার মানোন্নয়নে তাঁর কার্যকর পদক্ষেপ দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন গতি সঞ্চার করে। বিশেষ করে পাবনা-ঢাকা নৌযোগাযোগ উন্নয়নে তাঁর ভূমিকা আজও স্মরণীয় হয়ে আছে।

রাজনীতির পাশাপাশি মানবসেবক হিসেবেই তাঁর পরিচয় সবচেয়ে উজ্জ্বল ও স্থায়ী। তিনি প্রতিষ্ঠা করেন “আলহাজ আহেদ আলী বিশ্বাস মানব কল্যাণ ট্রাস্ট”। প্রায় ১১০ একর জমি দান করে সেখানে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, ঈদগাহ, কারিগরি কলেজ, পাঠাগার ও এতিমখানা গড়ে তোলেন। এ পর্যন্ত ৩,৬০০-এর বেশি গৃহহীন পরিবার আশ্রয় লাভ করেছে এবং ৩,০০০-এর বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি নির্মাণ করেছেন ১১০টিরও বেশি মসজিদ ও মাদ্রাসা। এই ট্রাস্টের কার্যক্রম আজও চলমান, যা প্রমাণ করে মানবসেবা তাঁর কাছে কোনো প্রদর্শনমূলক উদ্যোগ নয়; বরং এটি তাঁর জীবনের দর্শন ও সাধনা।

ব্যক্তিজীবনে অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস অত্যন্ত সহজ, সংযত ও বিনয়ী মানুষ। ধনী পরিবারের সন্তান হয়েও তিনি বেছে নিয়েছেন সরল ও পরিমিত জীবনধারা। সহধর্মিণী পারভীন আফরোজ তনু নীরবে তাঁর প্রতিটি সংগ্রাম ও সাফল্যের পাশে থেকেছেন। তাঁদের দুই সন্তান—তানভীর রহমান মিথুন ও সাদ ফয়সাল রহমান নিপুণ—নিজ নিজ ক্ষেত্রে মানবিকতা, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ ধারণ করে এগিয়ে চলেছেন।

অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস আজ কেবল একজন রাজনীতিক নন; তিনি একজন মানবিক নেতা, সমাজসেবক ও ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রতীক। তাঁর জীবন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—সত্যিকারের নেতৃত্ব ক্ষমতার আসনে বসে শুরু হয় না; বরং শুরু হয় মানুষের কল্যাণে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করার মধ্য দিয়ে, যা মানুষের কৃতজ্ঞতায় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে স্মরণীয় হয়ে থাকে।