ঢাকা, শনিবার ২৭ই এপ্রিল ২০২৪ , বাংলা - 

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সক্রিয় ছাত্রলীগ

আরাফাতুল হক চৌধুরী, জবি প্রতিনিধি:

2024-01-06, 12.00 AM
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সক্রিয় ছাত্রলীগ

ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংহতির ধারক-বাহক পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি), লেখাপড়ার পাশাপাশি রাজনৈতিক চর্চায়ও পিছিয়ে নেই এই প্রাচীন বিদ্যাপীঠটি। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সৃষ্টিলগ্ন থেকেই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ছাত্ররাজনীতির 'সুপার ইউনিট' বলা হয় ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানটিকে।এখানে যেমন ক্ষমতাসীন দল ছাত্রলীগের উপস্থিতি রয়েছে তেমনি রয়েছে ছাত্রদল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সরব উপস্থিতি। তবে বর্তমানে সক্রিয় অবস্থানে রয়েছে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগ।আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে(জবি) সক্রিয় অবস্থানে শাখা ছাত্রলীগ। ক্যাম্পাসে নিয়মিত রাজনৈতিক আড্ডা, শোডাউন,  মিছিল, মিটিং সহ নানা সাংগঠনিক কার্যক্রমে শক্ত অবস্থানে রয়েছে সংগঠনটি। বিপরীতে অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের তেমন কোন কার্যক্রম দেখা যায় না। জাতীয় নির্বাচন ঘিরে একমাত্র ছাত্রলীগ তাদের সংগঠনিক কার্যক্রমে গতিশীলতা বজায় রেখেছে।

 

২০২২ সালে ১লা জানুয়ারি শাখা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয় সেখানে সভাপতি হিসাবে  মো. ইব্রাহীম ফরাজী ও সাধারণ সম্পাদক হিসাবে এস. এম. আকতার হোসাইন দায়িত্ব পান। এই দায়িত্ব পাওয়ার পর এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ছাত্ররাজনীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন। এরেই ধারাবাহিকতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগে ও ইনিস্টিউটের কমিটি দেওয়া হয়। যার ফলে ছাত্রলীগের রাজনৈতিতে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ 

দেখা যায়।  

 

কেন্দ্র ঘোষিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিপুল সংখ্যক কর্মীসহ সরব উপস্তিতি লক্ষ করা যায়। জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে তারা বিভিন্নভাবে সংগঠনিক কার্যক্রম পালন করছে। চলমান বিএনপির হরতালের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলসহ নিয়মিত সকাল সন্ধ্যা ক্যাম্পাসে ব্যাঞ্চ পেতে পাহারা দেয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ক্যাম্পাসে নিয়মিত শোডাউন, মিছিল, মিটিংসহ সার্বক্ষণিক অবস্থা দেখা যায় শাখা ছাত্রলীগের কর্মীদের।

 

অন্যদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের দীর্ঘ ১৯ বছর পর গত বছরের অক্টোবরের পূর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হলেও এখনো পর্যন্ত ক্যাম্পাসে তেমন কোন অবস্থা তৈরি করতে পারে নি। এমনকি ক্যাম্পাসে কখনো মিছিল, মিটিং বা প্রবেশ করতে পারে নি। পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্থানে জটিকা মিছিল ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে তাদের সংগঠনিক কার্যক্রম সীমাবদ্ধ। শুধুমাত্র এই বছরের  নভেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে তালা দেওয়াই ছিল তাদের ক্যাম্পাস ভিত্তিক একমাত্র কার্যক্রম। তাছাড়াও একই দিনের মিছিলের ছবি অন্য দিনে মিছিলের বলে গণমাধ্যমে পাঠানোর অভিযোগ আছে শাখা ছাত্রদলের বিরুদ্ধে।

 

সার্বিক বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি আসাদুজ্জামান আসলাম বলেন, আমরা  কমিটি হওয়ার পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য ভিসি এবং প্রক্টর স্যারের সাথে কথা বলি। ওনারা বলেন আমরা ক্যাম্পাসে গেলে ছাত্রলীগ হামলা করতে পারে এবং বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরী হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সময় ক্যাম্পাসের গেটে নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করতে গিয়েছিলাম। তখন ছাত্রলীগের হামলায় ১ জন আহত হয়। আমাদের  কমিটির ৬-৭ জন নেতাকে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে পরীক্ষার হল থেকে ধরে এনে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে নির্মম নির্যাতন করে আহত করে। যেখানে একজন নিয়মিত ছাত্রের নিরাপত্তা নেই সেখানে সহ অবস্থান কাল্পনিক।

 

 বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লা বলেন, কোন ছাত্রদল কর্মী ক্যাম্পাসে পরীক্ষা দিতে গেলে তাকে জখম করা হয়, তার থেকে টাকা আদায় করা হয়। এজন্য ছাত্রদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আমরা ক্যাম্পাসের বাইরে প্রোগ্রাম করি। সেক্ষেত্রে আমাদের ক্যাম্পাসে অবস্থান নেই সেটা বলা যাবে না। সবার নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই ক্যাম্পাসে প্রোগ্রাম করি না। 

 

অপরদিকে কালে-ভদ্রে দু’একটি প্রেস রিলিজ ছাড়া দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম করতে দেখা যায় না জবির বাম সংগঠনগুলোকে। তবে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের দাবি, করোনা পরবর্তী সময়ে ক্যাম্পাসে তাদের সাংগঠনিক কাজের ছেদ ঘটলেও বর্তমানে তাদের  তৎপরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন ক্যাম্পাসের কাজ দ্রুত শেষ করাসহ বর্তমান ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সংকট নিরসনের দাবি নিয়ে তারা শিক্ষার্থীদের মাঝে যাচ্ছে। একই সাথে তারা পাঠচক্রের আয়োজন করছে। 

 

অন্যদিকে ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা বলছেন, বর্তমানে দেশে গণতন্ত্রহীনতার সংস্কৃতি চলছে। সেই সাথে ক্যাম্পাসগুলোয় নিয়মিত দমন-পীড়ন। যার ছাপ পড়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংসদেও। সরকারি ছাত্র সংগঠনের দমন-পীড়ন আর দীর্ঘদিনের গণতন্ত্রহীনতার কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দ্রুত রাজনীতি প্রতি অনীহা জন্মাচ্ছে।

 

সার্বিক বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহীম ফরাজী বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জননেত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা কে নিরঙ্কুশ বিজয় নিশ্চিত করার জন্য ইতিমধ্যেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। আমরা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নির্দেশে সকল উন্নয়নগুলো জনগণের কাছে তুলে ধরার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা শুরু করেছি। আমরা আশা করি এবার নির্বাচনে তরুণ প্রজন্মের একক রায় হবে নৌকার পক্ষে। শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতির নামে সন্ত্রাসী কার্যক্রম করলে আমরা ছাত্রলীগ পরিবার তা কঠিন হাতে দমন করবো। 

 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস. এম. আকতার হোসাইন বলেন, দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে নির্বাচন করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সর্বদা ক্যাম্পাসের আশেপাশে ও পুরান ঢাকায় প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তাছাড়া কারোর জান মালের ক্ষতি ও নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করা হলে, যে কোন অপশক্তিকে প্রতিহত করা হবে।