
প্রধান উপদেষ্টা ড. মো. ইউনূস সম্পর্কে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, সাড়ে নয় মাসে একটাও সফলতা উনি (ইউনূস) দেখাতে পারলেন না, ওনার নিজের ব্যক্তিগত সফলতা ব্যতীত।সোমবার (২ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে জিয়াউর রহমান সমাজ কল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। আলাল বলেন, জিয়াউর রহমানের স্লোগানের মধ্যে ধারণ করা কোনও কৃতিত্ব নেই। জিয়াউর রহমানের ব্যক্তিগত জীবনে তার দেশপ্রেম, সততা, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাষ্ট্রীয় মানসিকতা এবং সবার উপরে নিজের পরিবারকেও সকল রকম দুর্নীতি থেকে দূরে রাখার যে জ্বলন্ত উদাহরণ, এর চেয়ে বড় ব্যতিক্রমী ইতিহাস পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া খুব মুশকিল হবে। তিনি বলেন, আজকে আমাদের রোহিঙ্গা সংকট। এই রোহিঙ্গা সংকট ১৯৭৭ সালেও তৈরি হয়েছিল। তখন কিন্তু প্রচুর সংখ্যক রোহিঙ্গা দলে দলে আরাকান থেকে বাংলাদেশে ঢুকেছিল। জিয়াউর রহমান নিরাপত্তা পরিষদে বলেছিলেন, “আপনারা যেহেতু কিছু বলছেন না, আমি তো যুদ্ধ করতে পারব না। আমরা যুদ্ধপ্রিয় জাতি না। কিন্তু এই রোহিঙ্গাদেরকে আমি অর্থ দেব, অস্ত্র দেব, সব রকম প্রশিক্ষণ দেব, দিয়ে তারপর ওদের ভেতরে পাঠিয়ে দেব আস্তে আস্তে। দেখি এই বার্মা সরকার কিভাবে টিকে থাকে।” এই ধমকের পর তাদেরকে খুব তাড়াতাড়ি ফেরত নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অথচ শেখ হাসিনা এবং বর্তমান সরকার আজ পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠাতে পারেননি। জিয়াউর রহমান কিন্তু পেরেছিলেন, শুধু কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্য দিয়ে।
আজকে বিভিন্ন জায়গায় আলোচনা হয় সংস্কার, বিচার, নির্বাচন নিয়ে। জিয়াউর রহমানের চেয়ে বড় সংস্কারক কে? বিএনপির চেয়ে বড় সংস্কারের দল কে? জিয়াউর রহমান প্রথম সংস্কার শুরু করেছিলেন জাতিসংঘে ফারাক্কা সমস্যার অবিমাংসিত ইস্যু তুলে ধরে। তিনি প্রথম সাহস দেখিয়েছিলেন, আন্তর্জাতিক নদী কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী গঙ্গার পানির ন্যায্য অংশ আমরা কেন পাব না? এবং তার সেই কূটনৈতিক তৎপরতা ও সাহসী পদক্ষেপের কারণে পরের বছরই ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে ফারাক্কা, গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে ভাগাভাগি করেছিল। এবং সেখানেই প্রথম গ্যারান্টি ক্লজ যুক্ত হয়েছিল, আজ পর্যন্ত যেটা অন্য কোনো সরকার পারেনি। এই গ্যারান্টি ক্লজের কারণেই আমরা আমাদের ন্যায্য পানির হিস্যা পেয়েছিলাম। দ্যাট ইজ এ রিফরমেশন, এর চেয়ে বড় সংস্কারের উদাহরণ আর কী দেখবেন?
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান সাহেবের সংস্কার হচ্ছে সেইটা, যেখানে তিনি বলেছিলেন, “দক্ষিণ তালপট্টি আমাদের, ছিল, আছে, থাকবে।” জিয়াউর রহমান সাহেব প্রথম দেখিয়েছেন, আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে নিজেদের প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে কৃষি উৎপাদন কীভাবে বাড়ানো যায়। নিজের হাতে কোদাল দিয়ে খাল খনন করা শুরু করেছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে তিনি বলেন, “৫ আগস্টে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে শেখ হাসিনা চলে গেলেন। ৮ আগস্টে ড. ইউনূস বাংলাদেশে এলেন। এসেই উনি এয়ারপোর্টে প্রথম বললেন, ‘বাংলাদেশের সামনে একটা অসাধারণ সুযোগ এসেছে। এই সুযোগকে কিছুতেই আমরা হারাব না।’ কিন্তু গত সাড়ে নয় মাসে একটাও সফলতা উনি দেখাতে পারলেন না, ওনার নিজের ব্যক্তিগত সফলতা ব্যতীত।”
তিনি বলেন, খুব ঘটা করে ইউরোপিয়ান দেশের রাষ্ট্রীয় দূতদের, অ্যাম্বাসেডর ও হাইকমিশনারদেরকে নিয়ে আসা হলো। তাদের বলা হলো, ‘ঢাকায় ভিসা সেন্টার করেন।’ কিন্তু একটা দেশেও আমাদের এখানে ভিসা সেন্টার হয়নি। বরং সৌদি আরব, আরব আমিরাত, কুয়েত, ইউরোপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমনকি থাইল্যান্ডেও আগের চেয়ে ভিসা পদ্ধতি অনেক কঠিন করা হয়েছে। কিন্তু ড. ইউনূস সাহেবের ৬৬৬ কোটি টাকার ট্যাক্স ফাঁকির মামলা মীমাংসা হয়ে গেছে। গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারের যে শেয়ার ছিল, সেই শেয়ার কমিয়ে দিয়ে ওনাদের নিজেদের শেয়ার বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ওনার প্রতিষ্ঠান নতুন করে ম্যানপাওয়ার রিক্রুটিং লাইসেন্স পেয়েছে, বায়রার সদস্য হয়েছে, একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন পেয়েছে। এত কাজ করার পরেও দেশের জন্য কোনো কাজ হয়নি। ৯ মাসে দেশ স্বাধীন হয়, ১০ মাসে মায়েরা গর্ভবতী হয়ে সন্তান জন্ম দেন। ১০ মাসে একটি সফলতাও দেখলাম না, ওনার নিজের ও স্বার্থসংশ্লিষ্টদের সফলতা ব্যতীত।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ নিয়ে, আইনশৃঙ্খলা নিয়ে সব জায়গায় সমস্যা তৈরি হয়েছে। কোনো জায়গায় সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। রাষ্ট্র চালানোর অভিজ্ঞতা বিএনপির সবচেয়ে বেশি। বিএনপির নেতাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিন, সাহায্য নিন, সহযোগিতা নিন। সেইখানে অনুসরণ করুন জিয়াউর রহমানকে। এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করছে আমলাতন্ত্র। যারা অফিস-আদালতে যান, তারা জানেন—একটা ফাইল এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে যায় না। মাসের পর মাস কেটে যাচ্ছে, কোনো সমস্যার সমাধান হচ্ছে না, কারো কোনো কাজ হচ্ছে না। এই ‘ব্লুক্র্যাসি’ বাংলাদেশকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। বিদেশ থেকে যত জিনিস আসে, সেগুলোর বিকল্প উৎপাদক হিসেবে যারা উদ্যোগ নিচ্ছেন, তাদের কাজ এগোচ্ছে না। বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের পথে বসিয়ে দিচ্ছেন, যাতে তারা সুযোগ না পান। ১৭ বছর আওয়ামী লীগ লুটপাট করেছে। এখন লুটপাটের বন্দোবস্তটা অন্যদের, বিদেশিদের করার সুযোগ করে দিচ্ছে। এই সরকার এবং এই সরকারের প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ফ্যাসিস্ট সহযোগীরা ঢুকে পড়েছে। যারা ১৬–১৭ বছর বঞ্চিত ছিলেন, প্রশাসনে তারা প্রমোশন পেয়েছেন—সব ঠিক আছে। কিন্তু তাদের ভালো পোস্টিং হয়নি, খেয়াল করে দেখেন, পোস্টিং কিন্তু সেই আওয়ামী লীগের পেতাত্মাদেরই হয়েছে। যারা আমাদের আশেপাশের কোনো কোনো দেশের চর হিসেবেও কাজ করে। এই দলবদ্ধতা বা আবদ্ধ অবস্থাটা যদি না সরানো যায়, তাহলে গণতন্ত্র, আলোচনা, শাহাদতবার্ষিকী পালন কিংবা সম্মান জানানো—কোনোটাই পরিপূর্ণ হবে না।
জিয়াউর রহমান সমাজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন খোকনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিবসহ প্রমুখ।