ঢাকা, সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫,
সময়: ০৪:০৭:২৪ AM

চিনির সরবরাহ পর্যাপ্ত, ‘আরও কমে’ বিক্রি সম্ভব

স্টাফ রিপোটার।। ঢাকাপ্রেস২৪.কম
23-02-2025 06:20:43 PM
চিনির সরবরাহ পর্যাপ্ত, ‘আরও কমে’ বিক্রি সম্ভব

রোজার আগে বাজারে চিনির সরবরাহ রয়েছে পর্যাপ্ত। পাইকারিতে গত বছরের তুলনায় দামও কম। তবে সে তুলনায় খুচরায় দাম কিছুটা বেশি। পাইকারির দাম অনুযায়ী খুচরায় কেজিপ্রতি দাম ১২০ টাকার মধ্যে বেঁধে রাখার সুযোগ থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকায়। এজন্য বরাবরের মতো সিন্ডিকেটকেই দুষছে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।সূত্র জানায়, দেশে বছরে কমবেশি ২০ থেকে ২২ লাখ টন পরিশোধিত চিনির চাহিদা রয়েছে। রমজানে চাহিদা থাকে তিন লাখ টনের মতো। রাষ্ট্রীয় চিনিকলগুলো থেকে আসে ২৫ থেকে ৫০ হাজার টনের মতো। অবশিষ্ট চিনি আমদানি করে চাহিদা মেটানো হয়। ৯৮ শতাংশ বলা চলে আমদানিনির্ভর। দেশে ব্যক্তিখাতের পাঁচ শিল্পগ্রুপ সিটি, মেঘনা, এস আলম, আবদুল মোনেম লিমিটেড ও দেশবন্ধু সুগার মিল অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে। পরে নিজেদের মিলে পরিশোধন করে এসব চিনি বাজারজাত করে কোম্পানিগুলো। তবে ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর বেকায়দায় পড়ে দেশের সমালোচিত শিল্পগ্রুপ এস আলম। গত জানুয়ারি থেকে তারা কোনো চিনি আমদানি করতে পারেনি। তবে এখনো পাইকারি বাজারে এস আলমের চিনি রয়েছে।কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, চলতি (২০২৪-২০২৫) অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ লাখ ৯ হাজার অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি করেছে মেঘনা সুগার রিফাইনারি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি এই সময়ে ৪ লাখ ১১ হাজার ৭৫০ টন ‘র’ চিনি আমদানি করে। একই সময়ে সিটি গ্রুপের সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ২ লাখ ৯০ হাজার ৭৭৫ টন, আবদুল মোনেম সুগার রিফাইনারি লিমিটেড ৩৫ হাজার ৩৩৮ টন, দেশবন্ধু সুগার মিলস লিমিটেড ৯ হাজার ৫শ টন, এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ ৬০ হাজার ৫শ টন এবং প্রাণ ডেইরি লিমিটেড ৪০৫ টন অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে। পাশাপাশি একই সময়ে দেড় লাখ টনের কাছাকাছি পরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছে।জানা যায়, বৈধ পথে চিনি আমদানি হলেও পার্শ্ববর্তী দেশে চিনির দাম বাংলাদেশের তুলনায় কম থাকার সুযোগে চোরাইপথে চিনি আমদানি বাড়তে থাকে। ফলে চলতি অর্থবছর অপরিশোধিত চিনি তুলনামূলক কম আমদানি হয়। পাশাপাশি অবৈধ পথে চিনি আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে পরিশোধিত এবং অপরিশোধিত উভয় চিনি আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভাষ্য অনুযায়ী, সরকারের সিদ্ধান্তের পর আমদানি পর্যায়ে প্রতি কেজি অপরিশোধিত চিনির শুল্ককর ১১ টাকা ১৮ পয়সা এবং পরিশোধিত চিনির শুল্ককর ১৪ টাকা ২৬ পয়সা কমেছে।এদিকে চলতি সপ্তাহে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজার এবং চট্টগ্রাম মহানগরীর খুচরা মুদি দোকানগুলোতে সরেজমিনে দেখা যায়, পাইকারির সঙ্গে খুচরায় চিনির মূল্যে ব্যাপক ফারাক। প্যাকেটজাত চিনির দাম নির্ধারণ থাকার সুযোগ নিয়ে খোলা চিনিও একই দামে বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা।আবার পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি চিনি ১১২ টাকা ৫০ পয়সা কেজিতে বিক্রি হলেও খুচরায় একই প্রতিষ্ঠানের চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকা। সবশেষ শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) খাতুনগঞ্জের বাজারে এস আলমের রেডি চিনির ডিও বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) ৪১৭০-৪১৮০ টাকা। একইভাবে সিটি ও মেঘনা গ্রুপের চিনির ডিও বিক্রি হচ্ছে ৪১৯০ টাকা। এতে প্রতি কেজি চিনির দাম পড়ছে ১১২ থেকে ১১২ টাকা ২৮ পয়সা।খাতুনগঞ্জের ডিও ব্যবসায়ী আবু তাহের বলেন, ‘খাতুনগঞ্জ থেকে ডিও কেনা হলেও ক্রেতাকে নিজের টাকায় ট্রাক ভাড়া করে কারখানা থেকে চিনি সরবরাহ নিতে হয়। এতে ডিও মূল্যের সঙ্গে পরিবহন ব্যয়টা যুক্ত হয়। পাইকারি বাজার থেকে খুচরা দোকানে যাওয়া পর্যন্ত প্রতি কেজিতে গড়ে সর্বোচ্চ ২-৩ টাকা খরচ পড়বে। শনিবার খাতুনগঞ্জে ৪১৮০-৪১৯০ টাকায় মণপ্রতি চিনি চিক্রি হচ্ছে। সে হিসাবে খোলাবাজারে খুচরায় প্রতি কেজি চিনির দাম ১২০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়।’

অন্যদিকে নগরীর বহদ্দারহাট, কাজীর দেউড়ি, হালিশহর বড় পোল, চকবাজার এলাকার মুদি দোকানগুলোতে প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকা কেজিতে। প্রায় সব দোকানে মিলছে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত চিনি। প্যাকেটের গায়ে ১২৫ টাকা লেখা রয়েছে।কাজীর দেউড়ি এলাকার মো. মিজান নামে এক দোকানি বলেন, ‘আমরা প্যাকেটজাত চিনি ডিলারের কাছ থেকে ১২২ টাকায় কিনে ১২৫ টাকায় বিক্রি করি।’নগরীর ব্যাটারি গলি এলাকার মুদি ব্যবসায়ী মেসার্স আকবর স্টোরের ম্যানেজার বাসুদেব দাশ  বলেন, ‘খাতুনগঞ্জ থেকে আমরা পাইকারিতে কিনে এনে আবার বস্তা কিংবা কেজি অনুযায়ী বিক্রি করি। এখন ৫০ কেজির প্রতি বস্তা চিনি ৫৮২০ টাকায় বিক্রি করছি।’
রমজান মাস সামনে রেখে খাতুনগঞ্জে এখন বেচাকেনা বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাজারে চিনির পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। দামও কম। রমজান সামনে রেখে দাম আর বাড়ার আশঙ্কা নেই। তবে রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে খুচরা বাজারে নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।’

মূলত প্যাকেটজাত চিনির দাম না কমানোয় খোলা চিনির দাম কমছে না বলে দাবি ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর। কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘পুরো বাজার ব্যবস্থাপনা সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকারও বাজারকে সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতে ব্যর্থ হচ্ছে। পাইকারি বাজারে চিনির দাম কমেছে। যে মিলার কোম্পানি পাইকারিতে কম দামে ডিও বিক্রি করছে, সেই একই কোম্পানি দেখা যাচ্ছে, প্যাকেটজাত চিনি অনেক বেশি দামে বিক্রি করছে।’তিনি বলেন, ‘এখন বাজারে প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকায়। বর্তমান দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার অনুযায়ী এসব চিনি আরও কম দামে বিক্রি সম্ভব। অথচ করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো প্যাকেটজাত চিনির দাম কমাচ্ছে না। সরকারও এ নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।’

বহদ্দারহাট এলাকার খুচরা দোকানি আলী হোসেন বলেন, ‘আমরা খোলা চিনি ১২৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি। ৫০ কেজির প্রতি বস্তা চিনি ৫ হাজার ৮৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এরপর পরিবহন ব্যয় রয়েছে। সবমিলিয়ে খোলা চিনি ১১৮-১২০ টাকা কেজি পড়ে যায়।’

খাাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছরের (২০২৪ সালের) একই সময়ে চিনির দাম মণপ্রতি ৭৫০ টাকার মতো বেশি ছিল। চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত বছরের এই সময়ে মেঘনা, সিটি কিংবা এস আলমের চিনি মণপ্রতি ৪৯২৫ থেকে ৪৯৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এক বছরের ব্যবধানে দাম কমে এখন ৪২শ টাকার নিচে।’