করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে সরকার ঘোষিত সর্বাত্মক বিধি নিষেধের মধ্যেও বিদায়ী সপ্তাহে (গত ১৮ থেকে ২২ এপ্রিল) পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে ২ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা।এরমধ্যে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ২ হাজার ২৪০ কোটি টাকা এবং অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ৭৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা বেশি লেনদেন হয়েছে।
ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৪ হাজার ২৫৯ কোটি ৮৭ লাখ ৪৫ হাজার ৭৮৯ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের সপ্তাহ থেকে ২ হাজার ২৪০ কোটি ৬৫ লাখ ৪৪ হাজার ৮৬৭ টাকা বা ১১১ শতাংশ বেশি হয়েছে। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ১৯ কোটি ২২ লাখ ৯২২ টাকার।
ডিএসইতে গত সপ্তাহে গড় লেনদেন হয়েছে ৮৫১ কোটি ৯৭ লাখ ৪৯ হাজার ১৫৮ টাকার। এর আগের সপ্তাহে গড় লেনদেন হয়েছিল ৫০৪ কোটি ৮০ লাখ ৫০ হাজার ২৩০ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে গড় লেনদেন ৩৪৭ কোটি ১৬ লাখ ৯৮ হাজার ৯২৮ টাকা বেশি হয়েছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১২৪ দশমিক ৮৪ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪৩৫ দশমিক ০৩ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ২৮ দশমিক ৩১ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৬০ দশমিক ৭৩ পয়েন্ট বা ৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়ে যথাক্রমে ১ হাজার ২৩৭ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট এবং ২০৮৭ দশমিক ৫৫ পয়েন্টে।
গত সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল ৪ লাখ ৬২ হাজার ৭৫৪ কোটি ৩৯ লাখ ১২ হাজার টাকা। আর সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে লেনদেন শেষে বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৪ লাখ ৬৮ হাজার ৩১৬ কোটি ৮১ লাখ ৭২ হাজার টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বিনিয়োগকারীরা ৫ হাজার ৫৬২ কোটি ৪২ লাখ ৬০ হাজার টাকা বাজার মূলধন ফিরে পেয়েছে।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৬৯টি প্রতিষ্ঠান শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ২০৬টির বা ৫৫ দশমিক ৮৩ শতাংশের, কমেছে ১০০টির বা ২৭ দশমিক ১০ শতাংশের এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৬৩টির বা ১৭ দশমিক ০৭ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর।
গত সপ্তাহে ডিএসইর টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া ১০ কোম্পানি হলো- বেক্সিমকো, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, বাংলাদেশ ফাইন্যান্স, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো, রবি, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, সামিট পাওয়ার এবং অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ১৯৮ কোটি ৪৬ লাখ ৮২ হাজার ৪৯৪ টাকার। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৭৩ কোটি ৪৪ লাখ ৫০ হাজার ৯৪৪ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন ১২৫ কোটি ২ লাখ ৩১ হাজার ১৫৫ টাকা বা ১৭০ শতাংশ বেড়েছে।
বিদায়ী সপ্তাহটিতে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩৪৪ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ২৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৭২৩ দশমিক ৬০ পয়েন্টে।
সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে ৩০৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১৭১টির দর বেড়েছে ও কমেছি ৮৮টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৬টির।
এদিকে বিনিয়োগকারীর মধ্যে আস্থা ফিরে আসায় বিধি নিষেধের মধ্যেও বাজার স্থিতিশীল রয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসাইন বলেন, গতবছর লকডাউনে পুঁজিবাজার বন্ধ থাকায় বিনিয়োগকারীরা হতভম্ব হয়ে পড়েছিলেন। তবে লকডাউনের মধ্যে ব্যাংকের সঙ্গে সমন্বয় করে পুঁজিবাজার খোলা রাখার বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরেছে। বর্তমান পরিস্থিতি আমরা মানিয়ে নিতে পেরেছি। এ করোনার মধ্য দিয়েই আমাদের চলতে হবে। যা ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে বিনিয়োগকারীরা। এতে করে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অনেকগুণ বেড়েছে বলে তিনি মনে করেন।
সর্বাত্মক বিধি নিষেধে সপ্তাহজুড়ে টানা উত্থান ইতিবাচক বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বর্তমানে বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। বাজারে টানা উত্থানকে স্বাভাবিক হিসেবেই দেখছেন তিনি।
তিনি বলেন, যেহেতু ইনডেক্স ধীরে ধীরে বেড়েছে। তাই টানা সূচক বাড়াটা স্বাভাবিক। বাজারের সক্ষমতা আছে, বাজারে বিনিয়োগ আসছে, তারল্য সংকটও নেই। আমরা আশা করছি পুঁজিবাজার আরও ভালো পর্যায়ে যাবে।