মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে আড়াই মাস ধরে চলা বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ৭৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছে অধিকারবিষয়ক সংগঠন অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি)। কিন্তু এ খবরকে অতিরঞ্জিত বলে দাবি করেছে দেশটির জান্তা সরকার। তাদের দাবি বিক্ষোভে এ পর্যন্ত ২৫৮ জন নিহত হয়েছে।সোমবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় গণ্যমাধ্যমের খবরে এ দাবি করা হয়েছে।গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দল এনএলডির শীর্ষ নেতাদের আটক করে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। ওই অভ্যুত্থান রক্তপাতহীন হলেও এরপর থেকে বিক্ষোভে দেশটির রাজপথে রক্ত ঝরছে। এএপিপি’র হিসাবে, বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় সাংবাদিক, চিকিৎসক, তারকা শিল্পীসহ তিন হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সোমবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় গণ্যমাধ্যমের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে- এএপিপির দেওয়া নিহতের সংখ্যাকে ‘অতিরঞ্জিত’ বলছে জান্তা সরকার। প্রতিবেশী থাইল্যান্ড থেকে পরিচালিত এ সংগঠনকে ‘বেআইনি’ আখ্যা দিয়েছে তারা।
জান্তা সরকার বলেছে, মিয়ানমারের চলমান বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত ২৫৮ জন বেসামরিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২৪০ জন মারা গেছে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে। রাস্তা থেকে অবরোধ সরানোর সময় সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। বিক্ষোভের সময় বাকিরা মারা গেছে বিভিন্ন দুর্ঘটনা ও প্রাকৃতিক কারণে। এমনকি বিক্ষোভ চলার সময় একে অপরকে গুলি করায় তিনজন বেসামরিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
এদের পাশাপাশি চলমান বিক্ষোভ–সহিংসতায় সাতজন সেনাসদস্য এবং ১৫ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন বলেও মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় গণ্যমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে। জান্তা সরকার বলেছে, বিক্ষোভ চলাকালে দেশজুড়ে ৬৩টি পুলিশ স্টেশন, শতাধিক দপ্তর, ১৬টি সেতু ও বিভিন্ন ব্যাংকের ১৩টি শাখায় হামলা চালিয়ে ক্ষতি করা হয়েছে।
মিয়ানমারে সেনাশাসন প্রত্যাহার এবং এনএলডি নেত্রী অং সান সু চির মুক্তি দাবিতে চলা বিক্ষোভ এখনো থামেনি। এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় মিয়াঙ্গান শহরে দুই দিন ধরে সেনাদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে। সোমবার অন্তত চারজন বিক্ষোভকারী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তবে কেউ মারা গেছেন কি না, প্রাথমিকভাবে তা জানা যায়নি।
এদিকে ইয়াঙ্গুনে গত রোববার সন্ধ্যার পর জাপানের সাংবাদিক ইয়োকা কিতাজুমিকে আটক করেছে মিয়ানমারের জান্তা কর্তৃপক্ষ। সোমবার জাপান সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তাঁর মুক্তির দাবি করেছে দেশটি।
রয়টার্স বলছে, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক কিতাজুমিকে তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যান সেনাসদস্যরা। তাকে দুই হাত ওপরে তুলতে বলা হয় এবং একটি মোটরগাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয়।
রাতেই তাকে ইনসেইন কারাগারে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মিয়ানমারে জাপানি দূতাবাসের মুখপাত্র। এএফপিকে তিনি বলেন, দূতাবাসের পক্ষ থেকে আটক সাংবাদিকের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি চাওয়া হয়েছিল, কিন্তু অনুমতি মেলেনি। তার বিরুদ্ধে ভুয়া খবর প্রচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।