দেশে করোনা মোকাবিলায় সরকারের লেজেগোবরে অবস্থা বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমন সালেহ প্রিন্স। বুধবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
প্রিন্স বলেন, ‘বাস্তবতা হচ্ছে সরকারি অব্যবস্থাপনায় লকডাউন বা নিষেধাজ্ঞা কোনোটাই মাঠ পর্যায়ে কার্যকর হচ্ছে না, বরং সরকারের পরস্পরবিরোধী পদক্ষেপে মানুষ করোনা ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। সর্বত্রই লেজেগোবরে অবস্থা। নানা দুর্ভোগে জনগণ। সরকারের যারা এ ধরনের সিদ্ধান্ত দিচ্ছে, তাদেরকে বেতন-ভাতা কিংবা সুযোগ-সুবিধা নিয়ে চিন্তা করতে হয় না, কিন্তু তাদের সিদ্ধান্তে জনগণকে পড়তে হয় বিপাকে। আয়-রোজগার, সংসার চালানো কিংবা ভবিষ্যতের চিন্তায় জনগণ আজ দিশেহারা।’
লকডাউন বা নিষেধাজ্ঞা কোনটাই যে কার্যকর হচ্ছে না, তার প্রমাণ-সড়কে দীর্ঘ যানজট বলে উল্লেখ করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার গত ৫ এপ্রিল থেকে সাত দিনের জন্য দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা দেয়। লকডাউনের দুই দিন অতিবাহিত হয়েছে।
কোভিড-১৯-এর ২য় ঢেউ বাংলাদেশে আরও বেশি শক্তি নিয়ে আক্রমণ করেছে। মূলত, গত মাসের ১ম সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ বাড়লেও তা মোকাবিলায় কোনো কার্যকর ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করে নাই সরকার। মাচে শুরু থেকে সংক্রমণ বাড়ার সময় হতেই বিশেষজ্ঞ মহল সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে কার্যকর ও কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করলেও সরকার উৎসব আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত থেকেছে।’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে বিএনপি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও দলীয় কার্যক্রম স্থগিত করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারকে উৎসব আয়োজন স্থগিত করে করোনা মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলাম। সরকার সেই আহ্বানে কর্ণপাত করে নাই। তাদের কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক গতিতে চালিয়ে জনগণকে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে নিক্ষেপ করেছে। বাংলাদেশে সংক্রমণের হার রকেট গতিতে বেড়েই যাচ্ছে। গত এক মাসে সংক্রমণের হার ২ শতাংশ থেকে ৯৬ শতাংশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।’
লকডাউন নিয়ে সরকারের মন্ত্রীদের মধ্যে সমন্বয় না থাকায় জনমনে বিভ্রান্তি হচ্ছে বলে জানান প্রিন্স। তিনি বলেন, ‘সরকারের মন্ত্রীরা লকডাউন বললেও উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন-এটি লকডাউন নয়, কিছু বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। লকডাউন নিয়ে সরকারের মধ্যে দুই রকম বক্তব্যে চরম সমন্বয়হীনতারই প্রমাণ মেলে।’
এমন সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘করোনা মোকাবিলায় সরকার হঠাৎ করে গত ৫ এপ্রিল থেকে সাত দিনের জন্য বাংলাদেশে লকডাউন ঘোষণা দেয়। এমনিতে সরকারের ভ্রান্তনীতির ফলে জনগণের আয়-রোজগার সংকুচিত হয়ে গেছে। সরকারি দলের লোকজনদের সিন্ডিকেটের ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বী। এসব কারণে জনগণ দিশেহারা। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের এই আকস্মিক ঘোষণায় নিম্ন আয়ের মানুষসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ বিপাকে পড়ছে।’
করোনা মোকাবিলায় সরকারের হ-য-ব-র-ল অবস্থা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালগুলোতে অবস্থা বেগতিক। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল করোনা রোগী দ্বারা পরিপূর্ণ। কোনো সিট খালি নেই। নেই পর্যাপ্ত আইসিইউ, ভেন্টিলেটর ও অক্সিজেন। করোনা আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসার জন্য এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটতে ছুটতে পথিমধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। এর দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার গণবিচ্ছিন্ন বলেই করোনা মোকাবিলায় কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না। জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলেই জনগণের দুঃখ-দুর্দশা মোকাবিলায় তারা বরাবরই উদাসীন।’