ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগের ঘটনায় আরও ৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ নিয়ে সহিংসতার ঘটনায় মোট ১৯টি মামলা দায়ের করা হলো। এসব মামলায় ১০৭ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামাসহ প্রায় ২২ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। এত বিপুল সংখ্যক আসামি শনাক্তে ঘটনার দিনের ভিডিও ফুটেজসহ নানা পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে পুলিশ।এ ব্যাপারে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘হামলার সময় বেশ কিছু ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম-ফেসবুক ও গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছে। পুলিশও ভিডিও করেছে। সব ধরনের ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। ভিডিও ফুটেজের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের ডিআইজি বলেন, ‘কোনও দল বা বিশেষ গোষ্ঠীকে টার্গেট করে তদন্ত করা হবে না। তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে যাদের নাম উঠে আসবে, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।’
এদিকে বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) দুপুরে হেফাজতের তাণ্ডবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে পুড়ে যাওয়া বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন শেষে স্থানীয় সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময় করেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। এ সময় তিনি বলেন, ‘দেশের কয়েকটি জেলার মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া একটি। এখানে ৫৭৪টি মাদ্রাসা রয়েছে। ছাত্র সংখ্যা এক লাখ। এ জেলার লোক সংখ্যা ৩২ লাখ। আপনারা ৩২ লাখ লোকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছেন কেন? আপনারা বাসস্ট্যান্ড পুড়িয়ে দিয়েছেন, রেল স্টেশন পুড়িয়ে দিয়েছেন, বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলা করেছেন। আমি মনে করি এগুলো শুভ লক্ষণ নয়।’ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনা পুলিশ কেন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি—সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। পাশাপাশি মাইকিং করে পুলিশের আত্মরক্ষার কৌশলকে অপেশাদার আচরণ বলে উল্লেখ করেন আইজিপি।
তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত হামলার ঘটনার ভিডিও ফুটেজ থাকলেও হামলাকারীদের কাউকে চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ।
উল্লেখ্য, গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবে ধ্বংসের নগরীতে পরিণত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অফিস, হিন্দু সম্প্রদায়ের উপাসনালয়, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সংগীতাঙ্গন ও জেলা প্রেস ক্লাবসহ অসংখ্য স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে তারা। রবিবার সকাল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মুক্তবুদ্ধি চর্চার প্রতিষ্ঠানসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় জেলা পরিষদ ভবন, পৌরসভা ভবন, পৌর মিলনায়তন, সদর উপজেলা ভূমি অফিস, পুলিশ লাইন, সদর থানা, খাঁটি হাতা বিশ্বরোড হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি, শহরের কেন্দ্রীয় মন্দির শ্রী শ্রী আনন্দময়ী কালী বাড়ি, দক্ষিণ কালী বাড়ি, রেলওয়ে স্টেশন, জেলা আওয়ামী লীগ ও সংসদ সদস্যের কার্যালয়, সরকারি গণগ্রন্থাগার, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকারের কার্যালয়, তাঁর নিজের ও শশুরবাড়ি, পানি উন্নয়ন বোর্ড, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মৃতি পাঠাগার চত্বর ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভবন।