ঢাকা, বুধবার ৮ই মে ২০২৪ , বাংলা - 

মোদির আগমনে ‘পাল্টে গেছে’ ওড়াকান্দি

কাশিয়ানী (ওড়াকান্দি)জেলা সংবাদদাতা।। ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2021-03-25, 12.00 AM
মোদির আগমনে ‘পাল্টে গেছে’ ওড়াকান্দি

ভারতবর্ষের কোন প্রধানমন্ত্রীর প্রথম চরণ পড়তে যাচ্ছে শ্রীধাম হরিচাঁদ ঠাকুরের তীর্থস্থান ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ‘মুজিব বর্ষ’ ও স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ২৬ মার্চ ঢাকায় আসার কথা রয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। সফরের দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ২৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

সেখান থেকে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দির ঠাকুরবাড়ি পরিদর্শনে যাবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। শুধু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয় একজন ধর্মযাজক হিসেবে মোদির সুখ্যাতি রয়েছে বলে দাবি করেছেন ওড়াকান্দি হরিচাঁদ ঠাকুরের ভক্তকুল।

তাই ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমণের কথা শুনে মতুয়া সম্প্রদায়ের লোক যেন আনন্দে উদ্বেলিত। তেমনি দীর্ঘদিন ধরে ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ির উন্নয়নে কোন সংস্কার কাজ হচ্ছিল না, তার জটও কেটে গেছে। মোদির আগমনে পুরো পাল্টে গেছে ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ির দৃশ্যপট। স্থানীয়দের দাবি- ঠাকুরবাড়ি যাওয়ার সড়কগুলো এক সপ্তাহ আগেও গাড়ি চলাচলের উপযোগী ছিল না। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ‘দৃশ্যপট’ পাল্টে গেছে। এতে এলাকাবাসীও খুশি।
মোদির আগমে প্রস্তুত ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ি

নিজেদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে মতুয়া ভক্ত ধর্মযাজক ও মতুয়া মহাসংঘের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিব গোসাই কে বলেন, জয় হরিচাঁদ, জয় গুরুচাঁদ। আমাদের পূর্ণভূমি ওড়াকান্দি ধামে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসাতে কয়েকশ’ বছর বাংলাদেশ এগিয়ে গেল। এখানে সংখ্যালঘু হিন্দুদের মহাতীর্থ শ্রীধাম ওড়াকান্দিতে ওনার পূজা করতে আসা আমাদের হিন্দু সমাজের গর্বের বিষয়। এর আগে ভারতের কোন প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা কোন মন্ত্রীও এখানে আসেননি। উনি যখন আসবেন আশাকরি ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ি আরো উন্নত হবে।’

তিনি বলেন, লক্ষাধিক মতুয়া ভক্তবৃন্দ মধুকৃষ্ণা মহাবারুণীতে শ্রীধাম ওড়াকান্দিতে মহাবারুণী মেলা হয়। এখানে ভক্তদের থাকার জায়গার অনেক কষ্ট, বাথরুমে যাওয়ার জায়গা ছিল না। এখন সব হয়েছে। ওনার মতো (নরেন্দ্র মোদি) ধর্মপ্রাণ এবং মানবদরদী, গোটা ভারতের শাসক আমাদের প্রিয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে বাংলাদেশে আসছেন-এটা মতুয়া ভক্তবৃন্দের পরম পাওয়া।

প্রতিবছর চৈত্র মাসে মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে ঠাকুরবাড়িতে মহা বারুণী স্নান ও মেলা হয়। এ প্রসঙ্গে মতুয়া ভক্ত ধর্মযাজক ও মতুয়া মহাসঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিব গোসাই কে বলেন, মহা বারুণী স্নানে বহু মতুয়া জাহাজ ডাঙ্কা নিশান নিয়ে ছুটে আসে ওড়াকান্দিতে। এখানে দুধ সাগর ও কামনা সাগরে যার যার অভিপ্রায় অনুযায়ী মানসা মানত করে। তাদের মনোবাসনা পূর্ণ হয়। ভগবান গুরুচাঁদ ঠাকুর আমাদের হিন্দু সমাজের জন্য এই ব্যবস্থা করেছেন। আমরা অনেক অবহেলিত ছিলাম ওনার সান্নিধ্যে নিপেড়িত নিষ্পেষিত মানুষ মুক্তি পেয়েছেন, শিক্ষার অধিকার পেয়েছেন, বাণিজ্য করার অধিকার পেয়েছেন।
মতুয়া ভক্ত ধর্মযাজক ও মতুয়া মহাসংঘের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিব গোসাই

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমনে গুরুচাঁদ ও হরিচাঁদ ঠাকুরের তীর্থস্থান পূর্ণতা পেতে যাচ্ছে বলেও দাবি করেন মতুয়া ভক্তরা। এজন্য দীর্ঘ দিনের সমস্যাগুলোর সমাধান যেমন হচ্ছে তেমনি সেখানে যাতায়তের যে সড়কগুলো সেগুলোও সংস্কার করে নতুন রূপ পেয়েছে। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের কাশিয়ানী উপজেলার তিলছাড়া নামক স্থান থেকে ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ির দূরত্ব প্রায় ৫ কিলোমিটার। এই সড়কটিও সংস্কার করা হয়েছে।

ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ি তিন দিক থেকে যাওয়া যায়- তারমধ্যে রয়েছে তিলছড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ি, রাজপাট থেকে ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ি এবং রামদিয়া থেকে ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ি। মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁর ঠাকুরবাড়ি ও মতুয়া ধাম বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

শ্রীধাম হরিচাঁদ ঠাকুর এর ইতিহাস:

হরিচাঁদ ঠাকুর ছিলেন মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রবর্তক। মতুয়া হচ্ছে সনাতন হিন্দু ধর্মে একটি বিশেষ সম্প্রদায়।  হরিচাঁদ ঠাকুর সমাজের পিছিয়ে পড়া নিম্ন শ্রেণীর মানুষের জন্য কাজ করেছেন। ১৮১২ খ্রিষ্টাব্দের ১১ মার্চ অবিভক্ত বাংলার গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী থানার অন্তর্গত ওড়াকান্দির পার্শ্ববর্তী সফলাডাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন হরিচাঁদ ঠাকুর। তার মাতা-পিতার নাম অন্নপূর্ণা ও যশোমন্ত বৈরাগী। হারিচাঁদ ঠাকুর ১২৮৪ বঙ্গাব্দের ২৩ ফাল্গুন মর্তলোক ত্যাগ করেন। গুরুচাঁদ ঠাকুর ছিলেন হরিচাঁদ ঠাকুরের পুত্র।

বুধবার (২৪ মার্চ) ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ি এলাকা ঘুরে দেখা যায় সেখানে নতুন করে পাবলিক টয়লেট, মতুয়া ভক্তদের থাকার জায়গা ও পুকুর পার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। যে পুকুরে মতুয়া ভক্তরা স্নান করেন।