অন্তর্র্বতী সরকারের সংস্কার উদ্যোগ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই এবং পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের সময় পাচার হওয়া বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার অর্থ ফেরাতে বাংলাদেশকে সহায়তা করবে যুক্তরাষ্ট্র।বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কের একটি হোটেলে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থানের কথা জানান দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।ব্লিঙ্কেন বলেন, আমরা বাংলাদেশের ভালো অংশীদার হতে চাই এবং দেশ পুনর্গঠনে সহায়তায় ওয়াশিংটন বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে চায়।মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র অধ্যাপক ইউনূসকে অত্যন্ত সম্মান করে এবং জাতির ক্রান্তিকালে দেশের নেতৃত্ব নেওয়ায় তার প্রশংসা করে। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, দেশ পুনর্গঠনের কাজ হাতে নিয়েছে অন্তর্র্বতী সরকার।প্রধান উপদেষ্টা দেশের অর্থনীতি এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঠিক করতে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, ইউএসএআইডিসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তা চান।ইউনূস বলেন, এটি খুব দ্রুত হতে হবে। গোটা জাতি তার অন্তর্র্বতী সরকারের পেছনে ঐক্যবদ্ধ এবং তারা দেশ পুনর্গঠনের দিকে তাকিয়ে আছে।দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা, শ্রম ইস্যু, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সেক্টর, আইনশৃঙ্খলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অন্তর্র্বতী সরকারের নেওয়া সংস্কার উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা হয় এ সাক্ষাতে।অধ্যাপক ইউনূস বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি অন্তর্র্বতী সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
তিনি বলেন, আগের সরকারের আমলে দেশ দুর্নীতির মহাসাগরে ডুবে গিয়েছিল। এটি আমাদের এক নম্বর সমস্যা।
অধ্যাপক ইউনূস আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন ব্যক্তিদের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার চুরি এবং বিদেশে পাচার করা সেসব অর্থ দেশে ফেরত আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চান।
পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণের কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটি অবিশ্বাস্য রকম বিপুল পরিমাণ অর্থ।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, এ ধরনের দুর্নীতির মহামারি মোকাবিলায় আমাদের অনেক অভিজ্ঞতা আছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার এ বিষয়ে সহায়তা করবে। আমরা সহায়তা করতে পারলে খুশি হবো।
শ্রমিক জীবনমান উন্নত করা অন্তর্র্বতী সরকারের আরেকটি প্রধান লক্ষ্য উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটি আরও বেশি সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের পথ উন্মুক্ত করবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন বলেন, বাংলাদেশের বিদেশি বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় উৎস যুক্তরাষ্ট্র। আশা করি আগামী বছরগুলোতে তা আরও বাড়বে।
জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের সময় ঘটে যাওয়া নৃশংসতা তদন্তে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়েও কথা বলেন তারা।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তার সরকার বাক-স্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সমুন্নত করেছে।
গণমাধ্যমকে যতটা সম্ভব অন্তর্র্বতী সরকারের সমালোচনা করার আহ্বান জানানোর কথা উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধরতে রাখতে অন্তর্র্বতী সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সব বাংলাদেশি মিলে আমরা বড় একটি পরিবার। আমাদের মধ্যে বৈচিত্র্য আছে। কিন্তু আমরা কেউ কারো শত্রু নই।
দুই নেতা রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও আলোচনা করেন। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বেড়ে ওঠা হাজার হাজার তরুণ ও শিশুদের জন্য সহায়তা চান অধ্যাপক ইউনূস।