ঢাকা, রবিবার ৬ই অক্টোবর ২০২৪ , বাংলা - 

লেবাননে যুদ্ধবিরতি চায় শক্তিধর ১২ দেশ

আর্ন্তজাতিক রিপোটার।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2024-09-26, 12.00 AM
লেবাননে যুদ্ধবিরতি চায় শক্তিধর ১২ দেশ

লেবাননে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) তাদের মিত্ররা। ইসরায়েল এবং হিজবুল্লাহর মধ্যে তীব্র লড়াইয়ের মধ্যে এ ধরেনর ঘোষণা এলো। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় বুধবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘে ব্যাপক আলোচনার পর এ সিদ্ধান্ত নেয় দেশগুলো। পরে এক বিবৃতিতে ২১ দিনের যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়।বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের সামরিক প্রধান হারজি হালেভির বুধবারের বক্তব্যের পর তড়িঘড়ি করে সভার আয়োজন করা হয়। হারজি হালেভি সৈন্যদের বলেছিলেন, হিজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে লেবাননে ব্যাপক বিমান হামলা তাদের শত্রু অঞ্চলে প্রবেশ করার পথ তৈরি করতে পারে। যেকোনো সময় স্থল অভিযানের জন্য তার সেনাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানোর তালিকায় ১২টি শক্তিশালী দেশের নাম আছে। তারা মনে করে, চলমান সংঘাতের একটি কূটনৈতিক মীমাংসার জন্য সামরিক ফুরসত প্রয়োজন। সে সঙ্গে গাজায় যুদ্ধবিরতিতেও তারা সম্মত। যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য ও কাতার।বলা হয়, পাল্টাপাল্টি হামলা আর ইসরায়েল বা লেবাননের জনগণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটি এখন বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের কারণ। সীমান্ত অঞ্চলে সংঘাত-শত্রুতা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং বৃহত্তর আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধির অগ্রহণযোগ্য ঝুঁকি তৈরি করেছে।এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ পৃথক যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। তারা বলেছেন, ইসরায়েল-লেবানন সীমান্ত সংঘাত মীমাংসার সময় এসেছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে; যাতে বেসামরিক নাগরিকরা তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে পারে। বর্তমান শত্রুতা বিস্তৃত সংঘাত এবং বেসামরিক নাগরিকদের ব্যাপক ক্ষতির হুমকি দিচ্ছে।

মার্কিন প্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, ইসরায়েল বা লেবানন কেউই এই প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। যদিও যুক্তরাষ্ট্র উভয় সরকারের সঙ্গেই যোগাযোগ করছে। তাদের অফিশিয়াল প্রতিক্রিয়া কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।

২১ দিনের যুদ্ধবিরতি টেকসই পর্যায়ে নিতে কাজ করবে বিবৃতিতে সই করা ওই ১২ শক্তি। পরে একটি পূর্ণাঙ্গ চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য দুপক্ষকে নিয়ে আরও আলোচনায় বসবে তারা। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র হিজবুল্লাহর পরিবর্তে লেবাননের সরকারের সাথে আলোচনা করছে। লেবাননের সরকারের দায়িত্ব হবে ‘নন-স্টেট অ্যাক্টরস’-এর সাথে আলোচনা করে বিশ্বশক্তির আহ্বান বাস্তবায়ন করা।

প্রসঙ্গত, ফিলিস্তিনে আগ্রাসনের প্রতিবাদে লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধা হিজবুল্লাহ ইসরায়েলে রকেট হামলা চালিয়ে আসছিল। জবাবে সীমান্ত অঞ্চলে বিক্ষিপ্ত আক্রমণ করে আসছিল নেতানিয়াহুর বাহিনী। সম্প্রতি লেবাননে পেজার বিস্ফোরণের ঘটনায় ইসরায়েলকে দায়ী করে হিজবুল্লাহ। এর জবাবে রকেট ছুড়লে ব্যাপক বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এতে পাঁচ শতাধিক নিহত এবং হাজারো বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়।

এদিকে লেবানন থেকে হিজবুল্লাহর ছোড়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ শহর তেলআবিবে পৌঁছেছে। ইসরায়েল দাবি করেছে, এ ধরনের ঘটনা প্রথমবারের মতো ঘটল। এর আগে কখনো সশস্ত্র গোষ্ঠীটির ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে তেলআবিবে পৌঁছাতে পারেনি।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে হিজবুল্লাহর উৎক্ষেপিত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রটি তেলআবিব এলাকায় পৌঁছে। এটিই প্রথম কোনো হিজবুল্লাহ ক্ষেপণাস্ত্র, যা শহরটির আকাশ সীমায় পৌঁছতে পেরেছে।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী ক্ষেপণাস্ত্রটি তেলআবিবে পৌঁছার বিষয়টি স্বীকার করলেও তারা বলেছে, হিজবুল্লাহ এবারের যাত্রায় সফল হয়নি। আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্ষেপণাস্ত্রটি শনাক্ত করে ধ্বংস করে দেয়। এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তেলআবিব এবং শহরের আশপাশের এলাকা ইসরায়েলের সবচেয়ে জনবহুল নগর এলাকা। এর নিরাপত্তায় ইসরায়েলি বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখে।

এ ছাড়া ইরাক থেকে ইসরায়েলে ড্রোন হামলা হয়েছে। বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ইরাকি সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স ইসরায়েল অধিকৃত গোলান মালভূমিতে সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে। টেলিগ্রামে এক বিবৃতিতে গোষ্ঠীটি এ দাবি করেছে। তারা বলেছে, উত্তর ইসরায়েলের একটি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ড্রোন হামলা করা হয়েছে। তাদের হামলা সফল হয়েছে। এতে যুদ্ধ অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।