ঢাকা, রবিবার ৬ই অক্টোবর ২০২৪ , বাংলা - 

বিমানে ‘পঞ্চরত্ন’ সিন্ডিকেটের চতুরঙ্গ

ষ্টাফ রিপোটার।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2024-09-26, 12.00 AM
বিমানে ‘পঞ্চরত্ন’ সিন্ডিকেটের চতুরঙ্গ

রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে ১৫ বছর ধরে লুটপাট ও নানা অপকর্মে জড়িত সিন্ডিকেট এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে। এই সিন্ডিকেটের সদস্য পাঁচজন কর্মকর্তা। তাদের বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘পঞ্চরতœ’ হিসেবে চেনেন। কেনাকাটা, নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি-পদায়ন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটির সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করেছেন তারা। তাদের সিদ্ধান্তই ছিল ‘শেষ কথা।’ বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারী সূত্র বলছে, শেখ হাসিনার সরকারের আমলে এই পঞ্চরতœ সিন্ডিকেট চরম শক্তিশালী ছিল। প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসা বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থেকে শুরু করে পরিচালক এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিচালনা বোর্ডও তাদের কাছে জিম্মি ছিল। সূত্রগুলো বলছে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও এই পঞ্চরতœ গুরুত্বপূর্ণ পদেই রয়েছেন। সরকার পতনের পর একজনকে অপেক্ষাকৃত শাস্তিমূলক পদে বদলি করা হলেও দেড় মাসের মধ্যেই তিনি আরও গুরুত্বপূর্ণ পদে চলে এসেছেন। কিছুদিন চুপচাপ থাকলেও সময় পার হওয়ার পর সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে এই সিন্ডিকেট। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভেতর ক্ষোভ ও অস্বস্তি বাড়ছে।বিমান সিন্ডিকেটে এই পঞ্চরতেœর সদস্যরা হলেন—লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগের সাবেক ডিজিএম রাশেদ মেহের চৌধুরী, কার্গো বিভাগের মহাব্যবস্থাপক এবিএম নজমুল হুদা, আইটি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক মো. আনোয়ারুল হক, প্রকল্প ও পূর্ত বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক) তারেক আলমগীর এবং করপোরেট সেফটি অ্যান্ড কোয়ালিটির এক মহাব্যবস্থাপক।

বিমানের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এই পঞ্চরতেœর সবুজ সংকেত ছাড়া রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্তই নেওয়া যেত না। বিমানে তারা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের আশীর্বাদপুষ্ট সিন্ডিকেট হিসেবে পরিচিত।অপেক্ষাকৃত মধ্যম সারির পদে থেকেও তারা কীভাবে প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিলেন এবং সিন্ডিকেট চালাতেন, তা জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দুজন কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থেকে শুরু করে একাধিক পরিচালকের পদে প্রেষণে প্রশাসন ক্যাডার থেকে কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তারা এভিয়েশন সম্পর্কে ধারণা রাখতেন না। এই সুযোগে সিন্ডিকেটের সদস্যরা শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিশে যেতেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নানা বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে নিজেরা অপকর্ম করতেন। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিমানে আসা বাইরের কর্মকর্তারাও পঞ্চরতœকে নানা অবৈধ সুযোগ করে দিয়ে অনৈতিক সুবিধা নিতেন। এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা আগের প্রশাসনের শীর্ষ কয়েক কর্মকর্তার ‘টাকা কামানোর মেশিন’ হয়ে উঠেছিলেন।

সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই পঞ্চরতœ তাদের নিজ নিজ বিভাগের সিনিয়র কর্মকর্তাদের চাপ দিয়ে ও অবৈধভাবে বদলি করেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে চাকরিচ্যুত করে সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রধান কর্মকর্তার পদ দখল করেছিলেন। এরপর তারা সিন্ডিকেট গড়ে বিমানে নিয়োগ বাণিজ্য, সফটওয়্যার ক্রয়ে দুর্নীতি, প্রকল্পের ভেন্ডর নিয়োগে দুর্নীতি, অসংখ্যবার অপ্রয়োজনীয় অফিসিয়াল বিদেশ ভ্রমণ, অন্যায় পদোন্নতি, বদলি বাণিজ্য, শ্রমিকের ন্যায্য ওভারটাইম প্রদানে বাধা দেওয়াসহ নানা ধরনের অপকর্ম করে আসছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই পঞ্চরতœ সিন্ডিকেটের মূলহোতা বিমানের লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগের সাবেক প্রধান ডিজিএম রাশেদ মেহের চৌধুরী। এই কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের আমলে বিভাগে তার সিনিয়র তৎকালীন ডিজিএম আজরা নাসরিন রহমানকে চাকরিচ্যুত করান। অপেক্ষাকৃত জুনিয়র কর্মকর্তা হলেও রাষ্ট্রীয় কোম্পানিটির সচিবের পদও দখলে নেন তিনি। এরপর লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠেন। তার কক্ষে ইলেকট্রিক লক লাগিয়ে অফিস করতেন। সেখানে সিনিয়র কর্মকর্তাদের প্রবেশাধিকারও ছিল সংরক্ষিত। অবশ্য ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাকে বিমানের ট্রেনিং সেন্টারে পাঠানো হয়। তবে দেড় মাসের মধ্যেই তিনি প্রশাসন ও মানবসম্পদ পরিদপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ ওঅ্যান্ডএম (সংগঠন ও পদ্ধতি) শাখায় উপমহাব্যবস্থাপক পদে চলে এসেছেন!

বিমানের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, রাশেদ মেহের চৌধুরী সিন্ডিকেটকে সুবিধা পাইয়ে দিতে বিমানের স্বার্থবিরোধী এবং অন্যায় সিদ্ধান্তে আইনি মতামত দিয়ে বৈধতা দিতেন। এই সিন্ডিকেট বিদেশি একটি প্রতিষ্ঠান থেকে পিএসএস সিস্টেম ক্রয় করে হাজার কোটি টাকা ক্ষতি করে বিমানের। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তিতে কোম্পানির স্বার্থবিরোধী বিষয় থাকলেও ইতিবাচক লিগ্যাল ভেটিং প্রদান করে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেন রাশেদ।ওই কর্মকর্তা বলেন, পিএসএস সিস্টেম ক্রয়ে চুক্তির আগে লিগ্যাল ভেটিংয়ের জন্য লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স প্রধান হিসেবে রাশেদ মেহের চৌধুরীর দপ্তরে ফাইল যায়। এতে বিমানের লাভ বাদ দিয়ে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ দেখেন। এরপর কোম্পানি সচিব হিসেবে চুক্তিতে তিনি নিজেই বিমানের পক্ষে স্বাক্ষরও করেন। এতে বিমানের হাজার কোটি টাকার ক্ষতির বিষয়টি সরকারি নিরীক্ষা প্রতিবেদনেও উঠে আসে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিষয়টি নিয়ে চলতি বছরের মে মাসে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান টিম গঠন করে কার্যক্রম শুরু করে। দুদক থেকে নথি চেয়ে বিমানকে চিঠিও দেওয়া হয়। তবে এই সিন্ডিকেট এতটাই শক্তিশালী যে, তখন ওই তদন্ত কার্যক্রম থামিয়ে দেওয়া হয়। সম্প্রতি রাশেদ মেহের চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিমানের একজন কর্মী কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। তাতে বলেন, সাবেক ওই আইন কর্মকর্তার চাহিদা অনুযায়ী টাকা না দেওয়ায় চার বছর ধরে তার ফাইল আটকে রেখেছিলেন তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাশেদ মেহের চৌধুরী বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার কারণে তিনি গণমাধ্যমে কোনো বক্তব্য দিতে পারেন না। কোনো তথ্যের প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বরত কর্মকর্তার কাছ থেকে নিতে হবে।’ ব্যক্তি হিসেবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে বক্তব্য চাওয়া হচ্ছে জানালে তিনি ফের বলেন, গণমাধ্যমে তিনি বক্তব্য দেওয়ার কেউ নন।

সিন্ডিকেটের আরেক প্রভাবশালী সদস্য এবিএম নজমুল হুদা বর্তমানে বিমানের কার্গো বিভাগের মহাব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত। এর আগে তিনি বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ট্রেনিং সেন্টারের (বিএটিসি) অধ্যক্ষ ছিলেন। ২০২২ সালে অন্তত দুজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে তাকে অধ্যক্ষ করেন বিমানের তৎকালীন প্রশাসন। এর আগে ওই বছরের সেপ্টেম্বরে সিনিয়র কর্মকর্তা শাহনূর আহমেদকে বিমানের মুদ্রণ ও প্রকাশনা বিভাগে সরিয়ে দেওয়া হয়। এর পরই প্রশিক্ষণ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক থেকে সরাসরি অধ্যক্ষ পদে পদোন্নতি দেওয়া হয় নজমুল হুদাকে।

বিমান সূত্র বলছে, সিন্ডিকেটের জোরেই অপেক্ষাকৃত জুনিয়র কর্মকর্তা হয়েও বিএটিসির অধ্যক্ষ হতে পেরেছিলেন হুদা। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পরই বিমানের নিয়োগ পরীক্ষায় বড় কেলেঙ্কারি হয়। ইলেকট্রিশিয়ান, মেকানিক, ওয়েল্ডার, পেইন্টার, অপারেটর ও টেইলার্স পদে নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল ওই বছরের ২১ অক্টোবর। কিন্তু প্রশ্নফাঁসের তথ্য পেয়ে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য ছিলেন এই নজমুল হুদা।বিমানের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা  বলেন, সিন্ডিকেটের সদস্যরা প্রশ্নপত্র ফাঁস করতেই মূলত অপেক্ষাকৃত জুনিয়র কর্মকর্তা হুদাকে বিএটিসির অধ্যক্ষ পদে বসিয়েছিল। ওই ঘটনায় কয়েক কর্মচারীকে ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তারের পর তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক যাহিদ হোসেন, নজমুল হুদাসহ ঊর্ধ্বতনদের নাম বেরিয়ে আসে। এতে কয়েকজনের চাকরিও যায়। তবে বিমানের পক্ষ থেকে করা তদন্তে রেহাই দেওয়া হয় হুদাসহ সিনিয়র কয়েক কর্মকর্তাকে। ওই তদন্ত কমিটির সদস্য ছিলেন সিন্ডিকেটের আরেক সদস্য রাশেদ মেহের চৌধুরী।

অন্য একজন কর্মকর্তা বলেন, বিএটিসিতে এয়ার ক্র্যাফট মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার কোর্স (এএমই) নামে একটি কোর্স রয়েছে। এভিয়েশন সংশ্লিষ্টদের এই কোর্স সমাপ্ত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু নজমুল হুদা প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিলে পুরো বিএটিসি সিন্ডিকেটের কবজায় চলে যায়। তিনি বিশেষ একটি বেসরকারি এয়ারলাইন্স কোম্পানির সঙ্গে মিলে ওই কোর্সে কোম্পানিটির কর্মীদের টাকার বিনিময়ে সুযোগ দিয়ে সনদ দিতেন। এতে বিমানসহ অন্য এয়ারলাইন্স বা এভিয়েশনকর্মীরা এই কোর্স থেকে বঞ্চিত হতেন।

ওই কর্মকর্তা জানান, সনদে অনিয়ম ও প্রশ্নফাঁসে জড়িত থাকাসহ নানা অনিয়মের কারণে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজিম অধ্যক্ষের পদ থেকে নজমুল হুদাকে সরিয়ে দেন। তাকে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ কার্গো শাখায় মহাব্যবস্থাপক করা হলেও সেখানেও সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। কার্গোতে পছন্দের প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্পেস করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে হুদার বিরুদ্ধে। এতে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে লভ্যাংশ হারাতে হচ্ছে বিমানকে।

নজমুল হুদা  বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের সময়ে তিনি বিএটিসির অধ্যক্ষ ছিলেন। তবে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোর বিষয়ে বক্তব্য চাইলে তিনি তা দিতে রাজি হননি। তিনিও দাবি করেন, ‘অফিসের নির্দেশনা রয়েছে, কোনো বিষয়ে বক্তব্য দেওয়া যাবে না।’পঞ্চরতœ সিন্ডিকেটের আরেক সদস্য আইটি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক মো. আনোয়ারুল হক। তিনিও প্রভাব বিস্তার করে আইটি বিভাগের তৎকালীন এক সিনিয়র কর্মকর্তাকে সরিয়ে ওই পদের নিয়ন্ত্রণ নেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিমানের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের আইটি প্রধান হলেও তিনি এই পদে অদক্ষ। ফলিত পদার্থ বিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও আইটি প্রধানের পদ বাগিয়ে নেন তিনি। তার দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কারণে গত বছর বিমানের ইমেইল সার্ভার সাইবার আক্রমণের শিকার হয়। হ্যাকাররা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্বপূর্ণ এই সার্ভার দখলে নেয়। ওই সময় হ্যাকাররা দাবি করেছিল, কয়েক লাখ ব্যক্তিগত ডকুমেন্ট তারা দখলে নিয়েছে। এখন পর্যন্ত ওই সার্ভার দখলমুক্ত করতে না পারায় বিকল্প সিস্টেমে ইমেইল যোগাযোগ চালু রেখেছে বিমান।

সূত্র বলছে, আনোয়ারুল হক বিভিন্ন সময়ে অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ক্রয় ও মেনটেইন্যান্সের নামে সিন্ডিকেট করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছেন। সফটওয়্যার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত কমিশন নেওয়া ছাড়াও এসব প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্ত করার জন্যও টাকা নেন তিনি। জানতে চাইলে আনোয়ারুল হক বলেন, কেউ চাইলে কোনো পদে জোর করে বসতে পারে না। তা ছাড়া আমার বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। অবশ্য বিমানের ইমেইল সার্ভার হ্যাকড করে তথ্য হাতিয়ে নেওয়া হলেও তা এখনো উদ্ধার করা যায়নি বলে স্বীকার করেন তিনি। এখনো বিকল্প সিস্টেমে কাজ করতে হচ্ছে।

আরেক সদস্য বিমানের প্রকল্প ও পূর্ত বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক তারেক আলমগীর। তার বিরুদ্ধেও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চাপ দিয়ে সিনিয়র কর্মকর্তাকে অন্য বিভাগে বদলি করে পূর্ত বিভাগের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সিন্ডিকেটের সহায়তায় মোটর ট্রান্সপোর্ট বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপকের দায়িত্বও ভাগিয়ে নিয়েছিলেন। এরপর ওই বিভাগকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, মোটর ট্রান্সপোর্ট বিভাগের জন্য গাড়ি ভাড়ায় বড় ধরনের দুর্নীতি করেন তারেক আলমগীর। প্রকল্প ও পূর্ত বিভাগের প্রায় সব কাজে তাকে কমিশন দিতে হয় ঠিকাদারদের। বিমানের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, পদ অনুযায়ী বিমানের সব স্থাপনা রক্ষাণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালনের কথা তারেক আলমগীরের। কিন্তু আওয়ামী সরকারের সময়ে যোগ্য কর্মীদের অন্যত্র বদলি করিয়ে পূর্ত বিভাগে নিজস্ব বলয় গড়ে তুলেছেন। মোটর ট্রান্সপোর্টের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকার সময়ে টেন্ডার না করে গাড়ি ভাড়ার নামে টাকা হাতিয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তারেক আলমগীরও অফিস আদেশের দোহাই দিয়ে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি। অভিযোগগুলো সরাসরি তার বিরুদ্ধে জানালেও তিনি কথা বলতে চাননি।পঞ্চরতœ সিন্ডিকেটের আরেক সদস্য বিমানের করপোরেট সেফটি অ্যান্ড কোয়ালিটি শাখার এক মহাব্যবস্থাপক। এই কর্মকর্তাও তার সিনিয়র একজন কর্মকর্তাকে চাপ দিয়ে মোটর ট্রান্সপোর্ট বিভাগে বদলি করান। এরপর নিজে সেফটি অ্যান্ড কোয়ালিটি বিভাগের পদ বাগিয়ে নেন আওয়ামী লীগের আমলে। বিমান সূত্র জানায়, পদ বাগিয়ে নিলেও কাজ বাদ দিয়ে সব সময় তদবির ও নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন তিনি। সরকার পতনের পর চুপসে গেছেন। তবে এখনো সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন।

বিমানের একাধিক কর্মী জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সরকার পরিবর্তনের পর বিমান পরিচালনা বোর্ডে সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে বিমানের সাবেক দক্ষ কর্মকর্তা ড. মো. সাফিকুর রহমান দায়িত্ব পাওয়ার পর এই সিন্ডিকেট অনেকটা কোণঠাসা হয়ে গেছে। তবে তাদের অনেকেই ভোল পাল্টে সময়ের সঙ্গে তাল মেলানোর চেষ্টায় রয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিমানে প্রেষণে আসা অনেক কর্মকর্তা এখনো পদে থেকে যাওয়ায় এই পঞ্চরতœও নানা সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছেন। সিন্ডিকেটের সদস্যরা এখনো পদে বহাল থাকায় সাধারণ শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।