রাজধানীর উত্তরা ও বাড্ডা এলাকায় পুলিশ ও র্যাবের সঙ্গে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে মোট ৭ জন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।এরমধ্যে রাজধানীর কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে রাখা হয়েছে ৪ মরদেহ। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বিকেলে হাসপাতালটির পরিচালক মিজানুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।মিজানুর রহমান জানান, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চারজনের মধ্যে দুজন শিক্ষার্থী। অন্য দুজনের সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি। উত্তরায় পুলিশ ও র্যাবের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে আরও দুজন নিহত হয়েছেন।উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ একজনের তথ্য জানিয়েছেন।তিনি বলেন, একজন নিহত শিক্ষার্থী দুপুর ১২টার দিকে হাসপাতালে এসেছে। সে শিক্ষার্থী, এটুকু জানি। তবে কোন প্রতিষ্ঠানের তা সঠিক বলতে পারবো না। মৃত অবস্থায় এসেছিল। তার সাথের শিক্ষার্থীরা ‘বাঁচানো যায় কি না’ বলে তাকে ঢামেকে নিয়ে গেছে।এছাড়া শতাধিক শিক্ষার্থী হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন।অন্যদিকে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালের তথ্যে জানা যায়, কয়েক শ শিক্ষার্থী আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ মাহমুদুল হাসান ১ জন নিহত হওয়ার সত্যতা জানিয়েছেন। তবে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অন্যদিকে সকাল থেকে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সামনে চলা সংঘর্ষে কয়েক শ শিক্ষার্থী আহত হন। সেখানে পুলিশের গুলিতে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ড্রাইভার দুলাল মাতবর মারা যান।তার ছেলে সোহাগ জানান, পুলিশের গুলিতে আহত হওয়ার পর বনশ্রীর ফরাজী হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে মারা যান তার বাবা।এছাড়া ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের এইচএসসি ২৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী ফারহান ফাইয়াজ রাজধানীর সিটি হাসপাতালে মারা গেছেন। শিক্ষার্থীর মা নাজিয়া খান তার ফেসবুক পেজে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আহতাবস্থায় মোহাম্মদপুরের সিটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে, সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। এছাড়া সাভারে কোটা সংস্কারের দাবিতে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালনকালে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। ত্রিমুখী সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মো. ইয়ামিন (২৪) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। তিনি রাজধানীর মিরপুরের এমআইএসটির শিক্ষার্থী বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বিকেল ৩টার দিকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।মাদারীপুরে কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনের সময় পুলিশের ধাওয়ায় শকুনি লেকে পড়ে নিখোঁজ শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দুপুর দেড়টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত শিক্ষার্থীর নাম দিপ্ত দে (২১)। তিনি মাদারীপুর সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. মনিরুজ্জামান ফকির মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়া আরও নিহতের তথ্য পাওয়া গেলেও এখনো সেগুলো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে জানা গেছে, কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, নিউমার্কেট, উত্তরা ও রামপুরাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে গুলিবিদ্ধ, ককটেল বিস্ফোরণ ও ইটের আঘাতে আহত হয়ে এ পর্যন্ত ৯০ জন এসেছেন। তাদের মধ্যে ২৭ জনকে ভর্তি দেওয়া হয়েছে।