ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২১ই নভেম্বর ২০২৪ , বাংলা - 

খালেদা জিয়া কি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছেন ?

স্টাফ রিপোর্টার।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2021-03-21, 12.00 AM
খালেদা জিয়া কি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছেন ?

দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির রাজনীতিতে বেগম খালেদা জিয়া কি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছেন? কেন হারিয়ে যাচ্ছেন? ইচ্ছায় নাকি আইনের প্রতিবন্ধকতায়, নাকি তার দলই চাচ্ছে না তাকে। যদিও এই প্রশ্ন ওঠার কথা নয়। কিন্তু উঠছে এ কারণে যে দলটির পরিপূর্ণ নেতৃত্ব দিচ্ছেন এখন তারেক রহমান। অন্যদিকে সরকারের অনুকম্পায় কারামুক্ত চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গুলশানের ‘ফিরোজা’য় চিকিৎসা নিচ্ছেন। যদিও দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অসুস্থ হলেও বেগম খালেদা জিয়াই হচ্ছেন ‘ঐক্যের প্রতীক’।

তবে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করে, বেগম খালেদা জিয়া আর দলের নিয়ন্ত্রণে ফিরতে পারছেন না। সরকারের নানা শর্ত মেনেই তিনি জেলের বাইরে রয়েছেন। শর্ত ভঙ্গ করে তিনি আবার জেলে যাবার মতো অবস্থায় নেই। অন্যদিকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার অনুসারীরা চাচ্ছেন তাদের মতো করে দলের মধ্যে পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার।

এদিকে বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা এখন তার রাজনীতি থেকে সুস্থতাকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন। ফলে তারা সরকারের কাছে বার বার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করছেন এবং তাকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানোর চেষ্টা করছেন। এই লক্ষ্যে পর্দার অন্তরালে বেগম খালেদা জিয়ার ভাই ও বোন সরকারের বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সূত্র মতে, দলের সিনিয়র নেতারা খালেদা জিয়াকে নেতৃত্বে দেখতে চাইলেও কার্যত তারা ব্যর্থ হচ্ছেন, বরং তারেক রহমানের অনুসারীদের দাপটে তারা অনেকটাই কোণঠাসা। ফলে তারাও মনে করছেন না খালেদা জিয়া আর নেতৃত্বে আসতে পারবেন।

অন্যদিকে তারেক রহমান ভবিষ্যতে নিজের নেতৃত্বকে সুসংহত করতে দলের মধ্যে তার অনুসারীদের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে নানা কাজ করে যাচ্ছেন। তারেক রহমানের অনুসারীরা এখন আর সিনিয়র নেতৃত্বের সঙ্গে কোনো পরামর্শ করার প্রয়োজন মনে করেন না। তারা সরাসরি তারেকের নির্দেশে দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন, জেলা ও উপজেলা কমিটি তৈরি করছেন।

একইসঙ্গে চেয়ারম্যান ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান থাকার ঘটনায় দলের ভেতরে ও বাইরে গুঞ্জন থামছেই না। কারণ তারেক রহমান নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় দল গোছানোর জন্য তৎপরতা শুরু করেছেন।



তিনি চাইছেন, স্থায়ী কমিটিসহ সবাই তার পক্ষে কথা বলুক। এ জন্য পছন্দের লোকদের তিনি ধীরে ধীরে পদায়নের চেষ্টাও চালাচ্ছেন, যা দলের সিনিয়র নেতাদের পাশাপাশি সব স্তরে দৃশ্যমান হচ্ছে। অন্যদিকে দলের বড় একটি অংশও আবার এ কারণে শঙ্কিত হয়ে ভাবছেন যে, তারেক রহমান পুরোপুরি দলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিলে বিএনপিতে তাদের ভবিষ্যৎ নেই। তারা কেউ বা নীরব, আবার কেউ বা খালেদা জিয়াকে দলে সক্রিয় করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

তাদের অনেকের আরেকটি ভাবনা হলো, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এখনো তারেকের তুলনায় খালেদা জিয়াই বেশি গ্রহণযোগ্য। ফলে তাকে সামনে নিয়েই অন্তত আরেকটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষপাতী তারা।

তবে তারেক রহমানের অনুসারীরা যুক্তি দিচ্ছেন, বিদেশিদের সঙ্গে সমঝোতা করতেও তারেক রহমানকেই লাগবে। কারণ দলের অন্য কারো সঙ্গে সমঝোতা হলেও তা কাজে লাগবে না। তা ছাড়া গত তিনটি নির্বাচনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দল পরিচালিত হলেও কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায়নি।

এই অংশের আরেকটি অভিযোগ হলো, সিনিয়র বেশির ভাগ নেতা তারেকের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য কাজ করেন না, বরং আড়ালে তার সমালোচনা করেন। তাই তারেক রহমানকে সামনে নিয়েই তারা দল পরিচালনার পক্ষে।

বিএনপির একটি অংশের নেতাদের মতে, অসুস্থ হলেও খালেদা জিয়াই এখন পর্যন্ত বিএনপির ঐক্যের প্রতীক। ফলে খালেদা জিয়ার মাইনাস বিএনপির ভবিষ্যৎ অন্ধকার। তিনি না থাকলে বিএনপি ভেঙে যাওয়াও অসম্ভব নয়। তারা মনে করেন তারেক রহমান রক্তের উত্তরাধিকার, সেটি ঠিক আছে; কিন্তু এর আগে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো তিনি খণ্ডন করতে পারেননি। ফলে বিএনপিকে অখণ্ড রাখতে হলে তারেকের মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমানকে এখনই রাজনীতিতে নিয়ে আসা উচিত। দাদি খালেদা জিয়ার কাছ থেকে তিনি রাজনীতি শিখতে পারেন।

রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি এই মুহূর্তে যে বড় সংকটে পড়েছে, ১৯৮২ সালের পর কখনোই সে পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি। সম্প্রতি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিএনপির বছরব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ব্যানারে দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছবি না থাকায় বিএনপি রাজনীতিতে বেগম খালেদা জিয়াকে বাদ দেবারই পরিকল্পনা বলে ভাবছেন অনেকে। আর এটি করার পেছনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানেরও সম্মতি ছিল বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়।

লধমড়হবংি২৪

দলের বিভিন্ন স্তরের নেতৃত্ব মনে করে, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানের ব্যানারে খালেদা জিয়ার ছবি না থাকা তার প্রতি অবজ্ঞাসূচক ও অসৌজন্যমূলক। তারা ধারণা করছেন- খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব, দল ও রাজনীতি থেকে মাইনাস করার ব্যাপারে ক্ষমতাসীন মহল ও সীমান্তের বাইরের শক্তির পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভেতর থেকে কেউ কাজ করছেন। আর এদের নিয়ন্ত্রণ করছেন তারেক রহমান।

খালেদা জিয়ার দলীয় নেতৃত্বের ফিরে আসার প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ও বিএনপির ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমি মনে করি এক্ষেত্রে পরিবার অনেকাংশে দায়ী। কারণ হয়তো তারা এসব শর্ত এগ্রি (রাজি হয়েছেন) করেছে। উনি কোনো রাজনৈতিক মন্তব্য করবেন না, রাজনৈতিক বক্তব্য রাখবেন না। উনার এই জামিনের হয়তো এটা একটা শর্ত।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের জামিনের শর্ত হয়ত তিনি (খালেদা জিয়া) স্বীকার করেছেন এ কারণে এখন মুখ খুলতে পারছেন না।’ কাউন্সিলের মাধ্যমে বয়স্কদের উপদেষ্টা পরিষদে রেখে নতুনদের নেতৃত্ব দিয়ে আন্দোলন চাঙ্গা করার পরামর্শ দেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

খালেদা জিয়ার দলের নেতৃত্বে ফেরার প্রতিবন্ধকতার প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এটাতো দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, এই সরকার এতোদিন একটা মামলায় বন্দি করে রেখেছে। যতোদিন এই সরকার আছে ততোদিন তিনি বন্দী থাকবেন, এটাই তো পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। বর্তমান সরকার কোনো আইন-কানুনের ধারধারছে না। এ দেশ একটি পুলিশি রাষ্ট্র। বর্তমানে গণতন্ত্র দেশ থেকে নির্বাসিত। এ কারণে বেগম জিয়া দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী হওয়ার পরও এতোদিন কারাগারে অন্তরীণ রয়েছেন।’

দলের এই নেতার ভাষ্য, ‘বিএনপি আলস্য ঝেড়ে ভয়কে জয় করে যদি রাজপথে নামতে পারে এবং এই সরকারকে বিদায় করতে পারে তাহলে বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে ফিরে আসার সম্ভাবনা দেখা দেবে।’

খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে প্রসঙ্গে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বক্তব্য দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। তিনি আমাদের নেত্রী। উনি আমাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যেহেতু তিনি আইনি বেড়াজালে আছেন সেহেতু তারেক সাহেব নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এখানে কে কে উঁকি দিল সেটা আমাদের দেখার বিষয় না।’