গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদে কী আছে- এমন প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যে বড় দেশে তাকে (ড. ইউনূস) প্রমোট করে, সে দেশের রাষ্ট্রদূত আমার অফিসে আসেন। আমার অফিসারদের ধমকান। বলেন, এই এমডির পদ না থাকলে এই টাকা (পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন) বন্ধ হয়ে যাবে।’তিনি বলেন, ‘এই এমডি পদের জন্য আমার কাছে তদবির করতে হিলারি ক্লিনটন দুইবার ফোন করলেন। শেরি ব্লেয়ার ফোন করলেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের প্রতিনিধি আসলো। পৃথিবীর অনেকেই আসলো। আমি শুধু জিগ্যেস করলাম, এই এমডি পদে কী মধু আছে?’শুক্রবার (৫ জুলাই) বিকেলে পদ্মা সেতু প্রকল্পের সমাপনী উপলক্ষে সেতুর মাওয়া প্রান্তে আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। ড. ইউনূসের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা পদ। সেটা হলো একটা ব্যাংকের এমডির পদ। এ পদটা নিয়ে যত জটিলতা, যত সমস্যা। এখন ব্যাংকে যদি আইন থাকে, একজন ২০ বছর থাকতে পারবে। এরই মধ্যে তার বয়স ৭০ হয়ে গেছে। অতিরিক্ত সময় (এমডি পদে) থেকে ফেলেছেন। তারপরও তিনি সেখানে থাকেন কী করে? একজন নামিদামি নোবেল বিজয়ী সামান্য একটা এমডি পদের জন্য লালায়িত কেন? এই প্রশ্নের উত্তর কখনো পেলাম না।’তিনি বলেন, ‘এরশাদ ব্যাংক করলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরকে এনে এমডি হিসেবে বসালেন। সেই প্রফেসর আর ওই চেয়ার ছাড়তে চান না। আমাদের অর্থমন্ত্রী মুহিত (আবুল মাল আবদুল মুহিত) ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা গওহর রিজভী উনার কাছে গিয়ে বললেন, আপনি আর এমডি থাকবেন কোন, আপনি বরং এখানে উপদেষ্টা হিসেবে থাকেন। তাতেও তিনি রাজি না। তিনি মামলা করলেন সরকারের বিরুদ্ধে। দুটি মামলা। সবাই ঘাবড়ে গেলো। আমি অ্যাটর্নি জেনারেলকে বললাম, এটা তো তেমন কিছু না। খালি আইনটা উপস্থাপন করবেন। কোর্ট যদি পারে কারও বয়স বাড়াতে বাড়াক। পরে উনি মামলায় হেরে গিয়ে আরও ক্ষেপে গেলেন। আর তার ওই রাষ্ট্রদূতের আনাগোনা তো চলছেই। বার বার পিএমওতে (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে) আসেন আর একই কথা শোনান। পরে একজন আন্ডার সেক্রেটারি আসলেন, ওই একই কথা বললেন। এরপর আমি বললাম, আর কেউ আমেরিকা থেকে আসলে আমি দেখা করবো না, কথা বলবো না। পরে আমি আর কারও সঙ্গে দেখা করিনি।’শেখ হাসিনা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও একই প্রশ্ন। আমি খালি বলেছি, ওই পদে কী মধু আছে? এখন একটা কথা বলি। এমডি পদে যে কী মধু, এখন যদি দেখেন খোঁজ পাবেন। শ্রমিকরা মামলা করলে, গ্রামীণ ব্যাংকের অডিট রিপোর্ট আসলে আরও তথ্য বের হবে।’প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘অনেক ঝড় ঝাপটা পার করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে হয়েছে। সাধারণত কোনো প্রকল্প শেষ হলে সেই শেষ হওয়ার অনুষ্ঠান হয় না। কখনো করা হয় না, শেষ হয়ে যায়। তবে অনেক ঝড় ঝাপটা পার করে, অনেক বাধা অতিক্রম করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতুর সঙ্গে যারা জড়িত, যারা জমি দিয়েছেন, তাদের প্রতি ধন্যবাদ জানাতে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করেছি। এটি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানানোর অনুষ্ঠান।’
দেশের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণের ইতিহাস বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে জাতি রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করলো, সে জাতি কেন মাথা নিচু করে চলবে? অকুতোভয় জাতিকে একেবারেই মর্যাদাহীন করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।’অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এতে আরও বক্তব্য দেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মনজুর হোসেন। প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরেন পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম।অনুষ্ঠানের শুরুতেই পদ্মা সেতুর থিমসং প্রচার করা হয়। এছাড়া পদ্মা সেতুর ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। সুধী সমাবেশে সেতুমন্ত্রী ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান করা হয়।