সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল। ৫ একর জায়গায় নির্মিত হাসপাতালের দুই পাশে দুটি ফটক। ফটকসহ পুরো হাসপাতালের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছেন মাত্র ১০ জন আনসার সদস্য। তবে দুর্ভাগ্য বসত হাসপাতালটিতে নেই আনসার ক্যাম্প, নেই বিশ্রামাগার। ক্যাম্প নির্মাণে জায়গা বরাদ্দ থাকলেও কার্যত তা বনানী থানা পুলিশ ফাঁড়ির দখলে। এ কারণে হাসপাতালের নিরাপত্তা প্রহরীদের (আনসার সদস্যরা) হাসপাতলের সপ্তম তলায় রাখা হয়েছে। এতে অনেকটাই মানবেতর জীবন যাপন কাটাচ্ছে হাসপাতালটির আনসার সদস্যরা।
নিয়ম অনুযায়ী ক্যাম্পে আনসার সদস্যদের থাকার কথা থাকলেও এই হাসপাতালটিতে তা মানা হচ্ছে না। আনসার সদস্যরা বলছেন, ৬ মাসেও আনসার ক্যাম্প নির্মাণ করে দিতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বেতন-ভাতা কিছুই নেই এছাড়াও তাদের খাবারের কোনো সুব্যবস্থা করে দেওয়া হয়নি। এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, হাসপাতালের আনসার ক্যাম্পের জন্য বরাদ্দকৃত জায়গাটি পুলিশ ফাঁড়িল দখলে রয়েছে। তারা ব্যবহার করছে। তাদে সরিয়ে দিয়ে খুব শিগগিরই সেখানে আনসার ক্যাম্প করে দেওয়া হবে।
সরেজমিনে মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতাল ভবনটি সাততলা। ভবনের সামনে রয়েছে একটি চত্বর। পাশে বিশাল খালি জায়গা পড়ে রয়েছে। হাসপাতালের নিচতলায় রয়েছে রোগীদের জন্য দুটি টিকিট কাউন্টার, ভেতরে প্রবেশ করেই বাম পাশে রয়েছে জরুরি বিভাগ। এছাড়াও নিচে রয়েছে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কক্ষ। ভেতরে প্রবেশ করলে বাম কৌনে রয়েছে সিঁড়ি, সামনে রয়েছে দুটি লিফট। তবে একটি বন্ধ থাকতে দেখা গেছে। দ্বিতীয় তলায় কুকুর, বিড়ালসহ বিভিন্ন পশুর কামড়ের ইনজেকশন (র বিস ইমিউনোগ্লোবিউলিন কক্ষ), ল্যাবরেটরি প্যাথলজি, ফার্মেসি ভাণ্ডার, এআরটি সেন্টার। হাসপাতালের তৃতীয় তলায় এইচআইভি পজিটিভ রোগীদের জন্য রয়েছে দুটি (১ ও ২) ওয়ার্ড। চতুর্থ তলায় অবস্থিত ৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড দুটি ধনুষ্টংকার রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য। হাসপাতালের পঞ্চম তলায় ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে হাম, বসন্ত রোগে আক্রান্ত শিশু ও মহিলা রোগী রাখার জন্য ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে এই দুটি ওয়ার্ডে কোনো রোগী থাকতে দেখা যায়নি। ষষ্ঠ তলায় ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রাণীর কামড়ে গুরুতর আহত ও জলাতঙ্কে আক্রান্ত ভর্তি রোগীদের রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়। এদিকে, হাসপাতালের সপ্তম তলায় দুটি ওয়ার্ডেই আনসার সদস্যদের থাকার ব্যবস্থা করেছে হাসপাতল কর্তৃপক্ষ। এই দুটি ওয়ার্ড আনসার সদস্যদের বিশ্রামাগার হিসেবে ব্যবহার হয়। এদিকে, হাসপাতালের প্রতিটি তলায় একটি করে দুই ব্যানারের গ্যাসের চুলা থাকতে দেখা গেছে। হাসপাতালের ষষ্ঠ ও সপ্তম তলায় বিভিন্ন মালামালের স্তুপ থাকতে দেখা গেছে। দুটি ফ্লোরের সিঁড়িতে তা অগোছালোভাবে ফেলে রাখতে দেখা যায়।
সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের নিরাপত্তার জন্য গত বছরের (২০২০ সাল) ১৫ অক্টোবর ১০ জন আনসার সদস্যকে হাসপাতালে আনে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাদের থাকার জন্য স্বাস্থ্যকর কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। এদিকে, দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা বলছেন, হাসপাতালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমাদের এনেছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আমাদের থাকার জন্য কোনো ক্যাম্প করা হয়নি। নিয়ম হলো- হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আগে স্বাস্থ্যসম্মত ক্যাম্প তৈরি করবে। এরপর সেটি সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসে পরিদর্শন করবেন। সব ঠিক থাকলে পরেই নিরাপত্তার জন্য রিকুজিশন অনুযায়ী আনসার সদস্যদের আনা হবে। কিন্তু এখানে তা করা হয়নি।
হাসপাতালের ভেতরে কেন আপনারা বসবাস করছেন জানতে চাইলে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের আসনার ক্যাম্পের ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম বলেন, এই হাসপাতালে আনসার ক্যাম্প নেই। তাই আমাদের অস্থায়ীভাবে এই হাসপাতালের সপ্তম তলায় থাকার জন্য ব্যবস্থা করে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আনসার সদস্যদের জন্য ক্যাম্প তৈরি করা হলে আমাদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে।
তিনি বলেন, আমাদের এখানে নিয়ে আসার সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছিলো ১৫ দিন থেকে ১ মাসের মধ্যে আমাদের ক্যাম্প নির্মাণ করে দেওয়া হবে। তখন আমরা ওই ক্যাম্পে চলে যাবো। কিন্তু দেখ দেখতে ৬ মাস অতিবাহিত হতে চলেছে। এখনও আমরা হাসপাতালের সপ্তম তলায় অবস্থান করছি।
এবিষয়ে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, হাসপাতালের পাশেই আনসার ক্যাম্প নির্মাণের নির্ধারিত জায়গা রয়েছে। তবে সেখাতে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করেছে। আসলে গণপূর্ত অধিদফতর (পিডব্লিউডি) এখনও জায়গাটি ছাড়েনি। এদিকে পুলিশও নিরাপত্তার কাজে এখানে নিয়োজিত রয়েছে। তারা আমাদের কোনো প্রতিপক্ষ নয়। এই বিষয়টি নিয়ে খুব শিগগিরিই আলোচনায় বসবো। বিষয়টি সুরাহা করে সেখানে হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আনসার সদস্যদের জন্য ক্যাম্প নির্মাণ করা হবে। পরে সেখানেই আনসার সদস্যদের নিয়ে রাখা হবে।