ভারতে দ্বিপক্ষীয় সফর অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দিল্লি সফর নিয়ে মঙ্গলবার (২৫ জুন) সকালে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ সফর ছিল সংক্ষিপ্ত, কিন্তু অত্যন্ত ফলপ্রসূ। আমি মনে করি, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করার ক্ষেত্রে এ সফর সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখবে।তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক বিগত ১৫ বছরে অনন্য উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে, যার সুফল দুদেশের জনগণ ভোগ করছে। বিশেষ করে ২০২৩ সালে দুদেশের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সফরে ভারতের নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল নবনির্বাচিত দুটি সরকার কীভাবে সহযোগিতামূলক সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, সে বিষয়ে একটি রূপকল্প প্রণয়ন। যেহেতু নতুন সরকার গঠনের মাধ্যমে ঢাকা ও দিল্লি নতুনভাবে পথচলা শুরু করেছে, সে ধারাবাহিকতায় ‘রূপকল্প ২০৪১’ এর ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা এবং ‘বিকশিত ভারত ২০৪৭’ নিশ্চিত করার জন্য ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করার বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি।তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও নিকটতম প্রতিবেশী, বিশ্বস্ত বন্ধু এবং আঞ্চলিক অংশীদার। ১৯৭১ সালে যে সম্পর্কের সূচনা হয়, তাতে বাংলাদেশ সবসময়ই বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগ ও সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে।
সফরকালে দুই দেশের মধ্যে পাঁচটি নতুন সমঝোতা স্মারক সই ও বিনিময় হয়। তিনটি নবায়িত সমঝোতা স্মারক সই ও বিনিময় হয়। এ ছাড়া দুটি রূপকল্প ঘোষণা সই ও বিনিময় হওয়ার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সফরে দুদেশের মধ্যে নেওয়া কিছু কার্যক্রমের ঘোষণার কথা তুলে ধরেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী জানান, গঙ্গা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি নবায়ন ও বাংলাদেশের তিস্তা নদীর পানি ব্যবস্থাপনা এবং পানি সংরক্ষণের প্রকল্পে ভারতের সহায়তার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ভারতে চিকিৎসার জন্য যাওয়া রোগীদের ক্ষেত্রে ই-ভিসা চালু হবে এবং রংপুরে ভারতের নতুন সহকারী হাইকমিশন প্রতিষ্ঠা করা হবে। এতে মুমূর্ষু রোগীদের ভিসা আগের চেয়ে দ্রুত প্রক্রিয়াকরণ করা যাবে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে ভ্রমণ করা যাবে।
রাজশাহী ও কলকাতার মধ্যে নতুন ট্রেন পরিষেবা চালু হবে। চট্টগ্রাম ও কলকাতার মধ্যে নতুন বাস পরিষেবা চালু এবং গেদে-দর্শনা এবং হলদিবাড়ি-চিলাহাটির মধ্যে দলগাঁও পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রেন পরিষেবা চালু হবে। এতে দুদেশের মধ্যে যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও বাড়বে।অনুদান সহায়তার আওতায় সিরাজগঞ্জে ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) নির্মাণ বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।ভারতীয় গ্রিডের মাধ্যমে নেপাল থেকে বাংলাদেশে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হবে, যার মাধ্যমে আঞ্চলিক বিদ্যুৎ সহযোগিতা আরও বাড়বে।মুক্তিযোদ্ধা প্রকল্পের আওতায় চিকিৎসাপ্রত্যাশী রোগীদের জন্য খরচ সর্বোচ্চসীমা আট লাখ টাকা করা এবং বাংলাদেশের পুলিশ কর্মকর্তাদের জন্য প্রশিক্ষণ চালুর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।ইউপিআইয়ের (ইউনিফাইড পেমেন্ট ইন্টারফেস) ব্যবহার শুরু করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে রুপি কার্ড এবং ভারতে টাকা-পে কার্ড চালু হবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে গত ২১-২২ জুন সে দেশে রাষ্ট্রীয় সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্বিপক্ষীয় এ সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেন।