ঢাকা, সোমবার ২৪ই জুন ২০২৪ , বাংলা - 

এমপি’র ঘোষণার পরও বন্ধ হয়নি চাঁদাবাজি

এস এম মনিরুল ইসলাম,সাভার:

2024-06-15, 12.00 AM
এমপি’র ঘোষণার পরও বন্ধ হয়নি চাঁদাবাজি

ঢাকা-১৯ আসনের সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম নির্বাচিত হওয়ার পরই সাংবাদিক সম্মেলন করে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু তার ঘোষণাকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে সাভার পৌরসভার পণ্য ওঠানামা কুলি বিট ইজারার নামে বিভিন্ন শাখা সড়কগুলো থেকে ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাভার পৌর এলাকার শাখা সড়কগুলোতে চলাচলকারী পণ্যবাহী ছোট-বড় ট্রাক, পিকআপ, কার্ভাড ভ্যান,বাসাবাড়ির মালামাল বহনকারী ট্রাক থেকে কুলি বিট ইজারার টোল আদায়ের নামে এসব চাঁদাবাজি চলছে। পৌরসভা থেকে কোন ধরণের যানবাহনের ওপর টোল আদায়ের জন্য ইজারা প্রদান না করলেও প্রকাশ্যে ভুয়া ইজারাদার সেজে ব্যাপক চাঁদাবাজি করে লাখ লাখ টাকা লুটে নিচ্ছে একটি চক্র। দিনের পর দিন প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটলেও তা বন্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে এই চক্রটি শুধু যানবাহনে চাঁদাবাজি করে সন্তুষ্ট নয়। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিটি শাখা সড়কে ভাসমান দোকান থেকেও প্রতিদিন চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।জানা যায়, ঢাকা-১৯ আসন, সাভার-আশুলিয়া সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম নির্বাচনের পরই তার এলাকায় সব ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধের ঘোষণা দেন। কিন্তু তাতেও চাঁদাবাজি বন্ধ হচ্ছে না। কোনো ধরনের অনুমতি ও ইজারা না থাকার পরও পৌরসভা কর্তৃক ইজারাপ্রাপ্তির রশিদ ছাপিয়ে পৌরসভার বিভিন্ন সড়ক থেকে পণ্যবোঝাই যানবাহন থেকে চাঁদা তুলছে ওই চক্রটি। চলন্ত যানবাহন থামিয়ে চাঁদাবাজি করায় বিরুলিয়া সড়কের শাহীবাগ চৌরাস্তায় নিত্যদিনই যানজট লেগে থাকে। এতে যাত্রী ও চালকদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। ফলে ভুক্তভোগী যানবাহন চালক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শাহীবাগ চৌরাস্তায় যানবাহন থেকে টোকেন দিয়ে চাঁদাবাজিতে জড়িতদের প্রধান হচ্ছেন মো. হেলাল নামে এক মুরগী ব্যবসাসী। সেই সাথে বিরুলিয়া রোডের দুইপাশে শতাধিক ভাসমান দোকান থেকে প্রতিদিন চাঁদাবাজি হয় তার নেতৃত্বে। এ চাঁদাবাজিতে তার সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন রেজাউল করিম রাজা, সুমন, ইলেকট্রিশিয়ান পারভেজসহ আরও ৬/৭ জন। এই ইলেকট্রিশিয়ান পারভেজের বিরুদ্ধে সাভার বাসস্ট্যান্ডে ফুটপাতের একটি অংশে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে দীর্ঘদিনের চাঁদাবাজিরও অভিযোগ ছিলো। এছাড়াও হেলালের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির এসব অর্থ আদায়ে কিশোর গ্যাং সদস্যদের ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে।  সরেজমিনে সাভার বাসস্ট্যান্ডের বিরুলিয়া সড়কে গিয়ে দেখা যায় শাহীবাগ চৌরাস্তা পর্যন্ত শতাধিক ভাসমান দোকান রয়েছে। ওইসব দোকানের ধরণ ও আকার ভেদে প্রতিদিন ৫০-৩০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয় বলে জানা স্থানীয়দের দাবি।

এছাড়াও নতুন করে ওই সড়কে দোকান বসাতে গেলে চাঁদাবাজদের এককালিন অগ্রিম বাবদ মোটা অংকের চাঁদা দিতে হয় বলেও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে কয়েকজন ভাসমান ব্যবসায়ী বলেন, নতুন এমপি নির্বাচিত হওয়ার কিছুদিন পর চাঁদাবাজির অভিযোগে আব্দুর রাজ্জাক নামের এক চাঁদাবাজকে পুলিশ গ্রেপ্তারের পর বেশ কিছুদিন চাঁদা আদায় বন্ধ ছিলো। কিন্তু নতুন করে আবার হেলাল ওরফে মুরগী হেলাল তার লোকজন দিয়ে চাঁদা আদায় করছে।  স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ বলছেন, সংসদ সদস্য চাঁদাবাজি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ায় তারা অনেক খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু এটার বাস্তবায়ন না হওয়ায় তারা হতাশ। চাঁদাবাজি বন্ধে সংসদ সদস্যের হস্তক্ষেপ কামনা করেন সাভার পৌরবাসি।

এবিষয়ে অভিযুক্ত হেলালের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায় নি।এব্যাপারে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজামান বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়টি আমাদের জানা নেই। কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উল্লেখ্য, গত ২৩ জানুয়ারি মঙ্গলবার রাতে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের ভরসা সুপার মার্কেটের সামনে চাঁদা উত্তোলনের সময় আব্দুর রাজ্জাক (৪৫) নামে এক যুবককে স্থানীয়রা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। তারপর থেকে প্রায় ৫ মাস বন্ধ থাকার পর নতুন করে আবারও চাঁদাবাজি শুরু হয়েছে।