এইচএসসি পাস না হলে সভাপতি হওয়া যাবে না। শিক্ষা মন্ত্রাণালয় এ সংক্রান্ত গেজেট থাকলেও কোটালিপাড়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ সিদ্দিক নূর আলম এর স্বাক্ষরিত এক সভায় শৌলদহ মুশুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদে নির্বাচিত করা হয় গুরুদাশ মজুমদার নামের এক ব্যাক্তিকে। তিনি এসএসসি পাস বলে জন্য গেছে। তাকে রাতের অন্ধকারে একটি বাড়িতে উপজেলা শিক্ষা অফিসার যোগাসাজস করে অবৈধভাবে সভাপতি নির্বাচিত করেন বলে দরখাস্তকারীর লিখত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে । ওই ম্যানেজিং কমিটি বাতিল প্রসঙ্গে স্কুলের দাতা সদস্য পলাশ পান্ডে গত ৮ এপ্রিল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এর চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয় পরিদর্শন বরাবর একটি দরখাস্ত করেছেন। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২৮ এপ্রিল উপ-সচিব এ কে এম বিল্লাল হোসেন ভূইয়াকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি সম্প্রতি স্কুল পরিদর্শক করেছেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের 'বিদ্যালয় পরিদর্শন' এর বরাবরে স্কুলের দাতা সদস্য পলাশ পান্ডের লিখত অভিযোগে জানা যায়, গত ৪ মার্চ শৌলদহ মুশুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ সিদ্দিক নূর আলম তড়িঘড়ি করে প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য সদস্যদেরকে তার কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে কমলেশ মজুমদারকে সভাপতি নির্বাচিত করেন। ঠিক এরপরের ৫ মার্চ নবনির্বাচিত ম্যানেজিং কমিটির কতিপয় সদস্য মিলে একটি বাড়িতে বসে রাতের অন্ধকারে নির্বাচিত সভাপতি পদ টি বাতিল করেন ৭ মার্চ পুনরায় শিক্ষা অফিসারের সভাপতিত্বে তার নিজ কক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হয় বলে উল্লেখ করে নিজের স্বাক্ষরিত একটি কাগজে নবনির্বাচিত সভাপতির বাবা গুরুদাস মজুমদারকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ওই দিন ছিলো পবিত্র শবেবরাত। সরকারি ছুটির দিন থাকায় শিক্ষা অফিসার ছুটিতে ছিলেন বলে জানাগেছে।
এ বিষয়ে নবনিযুক্ত সভাপতি কমলেশ মজুমদার বলেন, আমার মতামত ছাড়াই আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। এজন্যই আমি দায়িত্ব গ্রহণ করিনি। পরে তারা আমার বাবাকে সভাপতি নির্বাচিত করেন। এতেও আমি রাজি নই।
লিখিত ওই অভিযোগে আরো জানা যায়, অবৈধ সভাপতির নির্বাচনের রেজুলেশনর একটি কপি প্রিজাইটিং অফিসার পুনরায় স্বাক্ষর করেন এবং প্রতিষ্ঠান প্রধান অবৈধ ভাবে সভাপতি নির্বাচিত গুরুদাস মজুমদার এর নাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এ প্রেরণ করেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে বিষয় টি নিয়ে তদন্ত কমিটি সরেজমিনে স্কুল টি পরিদর্শন করে সাবেক ও বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির বক্তব্য নেয়া হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি প্রতিবেদন দেয়া হবে।
এদিকে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুশীল রায় এর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তিনি দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পেতে নানাভাবে পায়তারা করছেন। বিগত কমিটির সভাপতি তার অনুসারী ছিলেন না বলে গত দুই বছরে দু'বার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলেও বিভিন্ন অজুহাতে নিয়োগ পরীক্ষাসহ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বাতিল করেন তিনি। এমনকি নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করার জন্য একজন ছাত্র অভিভাবক দিয়ে সাবেক সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাও করিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে।
পরবর্তী কমিটি তিনি নিজের মত করে সাজিয়ে প্রধান শিক্ষক পদ সহ অন্যান্য পদে নিয়োগ বানিজ্যের জন্য এই অবৈধ কমিটি তৈরি করার মত ঘৃন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুশীল রায় এর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমার এবিষয়ে কোন হাত নেই। কমিটির গঠন করেছেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার। এক প্রশ্নের জবাব তিনি জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার আগেই ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে। যাকে করা হয়েছে তিনি এসএসসি পাশ। মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে বলেন, আগের প্রধান শিক্ষক আমলে মামলা টি হয়েছে। আর আমি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পেতে কোন প্রকার দরখাস্ত করিনি। আর প্রধান শিক্ষক সহ অন্যান্য পদে নিয়োগ এর বিষয়ে দায়িত্বে থাকা সভাপতি অমৃত বাড়ৈ এবং অন্য সব সদস্যদের নানা মতামতের কারণে লেনদি হয়েছে।
দায়িত্বে থাকা সভাপতি অমৃত বাড়ৈ বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কৌশল করে আগের রেজুলেশন কেটে তার ইচ্ছেমতো গুরুদাস মজুমদারকে সভাপতি নির্বাচিত করেছেন। আমরা চেয়ে ছিলাম কমলেশ মজুমদার সভাপতি হলে স্কুলের পরিবেশ ফিরে আসবে। তাছাড়া তিনি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ এর জন্য আমাকে টাকাও দিতে চেয়েছেন। আমি তার দেয়া প্রস্তাবে রাজি হইনি।
এ বিষয়ে প্রস্তাবিত সভাপতি গুরুদাস মজুমদার বলেন, স্কুলের ৪ জন শিক্ষক এবং ৪ জন সদস্য'র মতামত ও স্বাক্ষরে আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে। শুধু একজন সদস্য আপত্তি জানিয়েছেন।
বিষয় গুলো জানার জন্য কোটালিপাড়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ সিদ্দিক নূর আলম এর ০১৭১৫২০৫৪৬১ নাম্বারে একাধিক বার ফোন করে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।