ঢাকা, শনিবার ২৭ই জুলাই ২০২৪ , বাংলা - 

১২টি যুদ্ধজাহাজের মহড়া পড়শির সীমান্তে !

ডেস্ক রিপোটার।। ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2024-05-24, 12.00 AM
১২টি যুদ্ধজাহাজের মহড়া পড়শির সীমান্তে !

তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেওয়ার পরেই লাই চিং-তে চিনের উদ্দেশে এক বার্তা দিয়েছিলেন। তাইওয়ানের বিরুদ্ধে চিনের রাজনৈতিক এবং সামরিক শক্তি প্রদর্শন বন্ধ করার আহ্বান জানান তিনি। কিন্তু তাঁর আহ্বানে যে বেজিং কর্ণপাত করেনি, তা স্থানীয় সময় বুধবার সকালেই স্পষ্ট হয়ে যায়। তাইওয়ানের চারপাশে সামরিক মহড়া শুরু করেছে চিন।চিনা সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, স্থানীয় সময় বুধবার ৭টা ৪৫ মিনিট থেকে চিনের ইস্টার্ন বাহিনী তাইওয়ান সীমান্তে শক্তি প্রদর্শন শুরু করেছে। তাইওয়ান প্রণালী, তাইওয়ানের উত্তর, দক্ষিণ এবং পূর্বে মহড়া দিচ্ছে চিনা বাহিনী। শুধু তা-ই নয়, তাইওয়ানের কিনমেন, মাতসু, উকিয়ু এবং ডঙিন দ্বীপপুঞ্জের চারপাশেও চিনা বাহিনী ঘোরাফেরা করছে।কেন এই মহড়া? বেজিংয়ের দাবি, তাইওয়ানকে ‘শাস্তি’ দিতেই সেনা মহড়া চালানো হচ্ছে। চিনের আরও দাবি, স্বাধীনতার নামে তাইওয়ানে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ কর্মকাণ্ড চলছে। সেই কারণেই তাইওয়ানকে শাস্তি দেওয়ার প্রয়োজন বলে মনে করছে শি জিনপিং সরকার।গত সোমবারই তাইওয়ানের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেন লাই। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট সাই ইং ওয়েনের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন তিনি। তাইওয়ানে দীর্ঘ আট বছর শাসন করেছেন সাই। তাঁর শাসনকালে চিনের সঙ্গে সম্পর্ক অবনতি হয় তাইওয়ানের।সাই বরাবরই গণতন্ত্র রক্ষার পক্ষেই সোচ্চার হয়েছেন। লাই-ও একই পথের পথিক। তাই তাঁর শাসনকালে চিন-তাইওয়ান সম্পর্কের উন্নতির সম্ভাবনা খুবই কম। চিনও জানে সে কথা। আশঙ্কা করা হচ্ছে, লাই জমানায় তাইওয়ানের উপর কর্তৃত্ব শিখিল হতে পারে চিনের। তা বুঝেই বৃহস্পতিবার সেনা মহড়া শুরু করেছে লাল ফৌজ।তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের ভূখণ্ডের অংশ বলে দাবি করে আসছে চিন। বৃহস্পতিবারের মহড়া নিয়ে চিনা সামরিক বাহিনী আরও জানিয়েছে, এটা সমুদ্রপথে যুদ্ধের প্রস্তুতি।তবে কি এ বার চিন তাইওয়ানের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধের পথে হাঁটবে? সে ব্যাপারে বেজিং কোনও মন্তব্য করেনি। যদিও বিশ্ব কূটনৈতিক মহলে এখন থেকেই যুদ্ধের জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। চিনা মহড়া নিয়ে ‘উদ্বেগপ্রকাশ’ করেছে আমেরিকা।তাইওয়ান জানিয়েছে, শুধু সমুদ্রপথে নয়, আকাশপথেও মহড়া চালিয়েছে চিন। ১২টি যুদ্ধজাহাজ এবং একটি বিমান চক্কর খাচ্ছে তাইওয়ানের চারপাশে। তাইওয়ানের জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের (এমএনডি) তরফে এই ঘটনার নিন্দাও করা হয়েছে।এমএনডি একটি বিবৃতি জারি করে জানিয়েছে, ‘‘আমরা কোনও দ্বন্দ্ব চাই না। তবে আমরা আমাদের নিরাপত্তা রক্ষার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।’’ তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই এই মহড়াকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছেন।তাইওয়ান-চিন যুদ্ধ শুরু হলে কি চাপে পড়বে ভারত? অনেকের মতে, ভারত এবং চিনের মধ্যে সীমান্ত-বিরোধ নতুন নয়। দু’দেশই সীমান্তে বাড়তি সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে। কেউ কারও বিরুদ্ধে আক্রমণের পথে না গেলেও একে অপরকে মেপে চলছে।২০২০ সালের ৫ মে প্যাংগং লেক এলাকায় ভারত এবং চিন সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে সংঘাতের পর থেকে পূর্ব লাদাখ সীমান্ত নিয়ে দু’দেশের সম্পর্কে টানাপড়েন বৃদ্ধি পেয়েছে।পরবর্তী কালে অরুণাচল সীমান্ত নিয়েও বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়েছে দু’পক্ষ। সীমান্ত নিয়ে অচলাবস্থা কাটাতে ভারত এবং চিন এখনও পর্যন্ত ২১ দফা সামরিক পর্যায়ের বৈঠকে বসেছে। তবে সে ভাবে কোনও সমাধানসূত্র বার হয়নি।চিন-তাইওয়ান সম্মুখসমরে গেলে আমেরিকা যে তাইওয়ানের পক্ষে থাকবে, তা বলা বাহুল্য। শত্রু চিনকে চাপে ফেলতে তাইওয়ান সরকারকে সাহায্য করবে জো বাইডেন সরকার। এ ব্যাপারে অনেক আগে থেকেই ‘মিত্র’ দেশগুলির থেকে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছে ওয়াশিংটন।চিন তাইওয়ান আক্রমণ করলে দক্ষিণ এশিয়ার অগ্রগণ্য দেশ হিসেবে ভারতের ভূমিকা কী হবে? গত বছর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ভারত সফরের আগে সেই প্রশ্ন উঠেছিল। শুধুই কি বিবৃতি দিয়ে কাজ সারবে নয়াদিল্লি, না কি কোনও পক্ষ অবলম্বন করবে, তা-ও জানতে চেয়েছিল বাইডেন প্রশাসন।তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে আমেরিকা-চিন সংঘাতের প্রেক্ষাপটে এই পরিস্থিতি ভারতের জন্য নিঃসন্দেহে চাপের। গত কয়েক বছর ধরেই আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রশ্নে নয়াদিল্লি নিজস্ব পথ অবলম্বন করে চলেছে। আমেরিকার সঙ্গে কৌশলগত কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে ভারত। তবে আমেরিকার সব কথা মেনে নেওয়ার পক্ষেও নয় তারা।তবে পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা সংলগ্ন অঞ্চলে বছরের পর বছর রয়েছে লাল ফৌজ, ভারতের টহলদারির এলাকায়। জাতীয় মানচিত্রে অরুণাচলকে অন্তর্ভুক্ত করেছে চিন। আর চিনকে চাপে ফেলতে ভারত ক্রমশই চতুর্দেশীয় অক্ষ কোয়াডকে (ভারত-আমেরিকা-জাপান-অস্ট্রেলিয়া) আঁকড়ে ধরছে।তাইওয়ানের ব্যাপারে উল্লেখ্য, ভারত কিন্তু ‘এক চিন নীতি’ অনুসরণ করে। তাইপেইয়ের সঙ্গে ভারতের কোনও সরকারি কূটনৈতিক বন্ধন নেই। তবে তাইওয়ান সীমান্তে চিনের আগ্রাসন বৃদ্ধি হওয়ায় চিন্তায় ভারত।কূটনৈতিক মহলের একাংশের মতে, ভারত যদি তাইওয়ানের পক্ষে দাঁড়ায়, তবে সীমান্তে চাপ বৃদ্ধি করতে পারে লালফৌজ। সে ক্ষেত্রে ভারত কি পাল্টা আক্রমণের পথে হাঁটবে, না কি চিনকে ঠেকাতে নয়া পন্থা নেবে— তা নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা চলছে সাউথ ব্লকে।