ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১২ই ডিসেম্বর ২০২৪ , বাংলা - 

মানুষের মৃত্যু ‘দেখতে পায়’ বিড়াল?

ডেস্ক রিপোটার।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2024-05-23, 12.00 AM
মানুষের মৃত্যু ‘দেখতে পায়’ বিড়াল?

প্রাচীন কাল থেকেই বিড়াল মানুষের সঙ্গী। কুকুরের মতো ‘বিশ্বস্ততা’ বা প্রভুভক্তির জন্য তার খ্যাতি নেই বটে, কিন্তু মানুষ তাকে যুগে যুগে পুষে এসেছে, তার খামখেয়াল বরদাস্ত করেছে, তার ছবি এঁকেছে, তাকে নিয়ে কবিতা-গল্পও রচনা করেছে। সর্বোপরি, বিড়ালের উপর যুগে যুগে আরোপিত হয়েছে অতিপ্রাকৃত সব বৈশিষ্ট্য। যার মধ্যে অন্যতম হল, মৃত্যুকে আগাম বুঝতে পারা।বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন সভ্যতায় বিড়ালকে অতিপ্রাকৃত জগতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে গণ্য করা হত। বিড়ালের অতিপ্রাকৃত ক্ষমতা নিয়ে আখ্যান লিখেছেন এডগার অ্যালান পো থেকে এইচপি লাভক্র্যাফট। সাহিত্যের আঙিনার বাইরে গণচৈতন্যেও বিড়ালকে নিয়ে পল্লবিত রয়েছে অসংখ্য কাহিনি, যার নির্যাস তার অতিপ্রাকৃত ক্ষমতার বর্ণনা।বিশ্ব জুড়ে অনেক সভ্যতাতেই বিশ্বাস, বিড়াল মানুষের মৃত্যুর বিষয়টি আগাম বুঝতে পারে। কারও মৃত্যুর আগে নাকি বিড়ালদের আচরণে বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। বিড়ালের এই ‘আশ্চর্য ক্ষমতা’ নিয়ে এক দিকে যেমন বহু কাহিনি প্রচলিত রয়েছে, তেমনই অন্য দিকে বিষয়টির যুক্তিসম্মত ব্যাখ্যাও খুঁজেছেন অনেকে।আধুনিক বিশ্বে বিড়ালের এই আশ্চর্য ক্ষমতা সম্পর্কে যে সব কাহিনি প্রচলিত রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম, টাইটানিক জাহাজের এক বিড়ালের আখ্যান। জানা যায়, জেনি নামে এক বিড়ালকে যখন টাইটানিক জাহাজের মধ্যে নিয়ে আসা হয়, তখনও পর্যন্ত তা বেলফাস্ট হারবারে নির্মীয়মাণ অবস্থায় ছিল। জেনিকে জাহাজে নিয়ে আসার উদ্দেশ্য ছিল, জাহাজে বাসরত ইঁদুর ধ্বংস করা।টাইটানিকের স্টুয়ার্ডেস ভায়োলেট জেসপ ডুবন্ত জাহাজ থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, ১৯১২ সালের এপ্রিল মাসের গোড়ায় জেনি জাহাজেই কয়েকটি বাচ্চার জন্ম দেয়। তখনও টাইটানিক নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে রওনা দেয়নি। জাহাজের কর্মচারী জোসেফ মালহোল্যান্ড জেনি ও তার সদ্যোজাতদের দেখাশোনা করতেন বলে জানা যায়। জাহাজের রান্নাঘরের আশপাশে জেনি তার বাচ্চাদের নিয়ে থাকত।মালহোল্যান্ড লক্ষ করেন, বেলফাস্ট থেকে সাদাম্পটনে চলে আসার পর টাইটানিক থেকে জেনি একে একে তার বাচ্চাদের সরিয়ে নিজেও ডকে নেমে যায়। মালহোল্যান্ড এই ঘটনাকে অশুভ মনে করে নিজেও জাহাজ ত্যাগ করেন। শেষ পর্যন্ত টাইটানিকের পরিণতি কী হয়েছিল, তা সকলেরই জানা আছে।জেনির কাহিনির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু, যাঁরা এই কাহিনিতে বিশ্বাস রাখেন, তাঁরা প্রশ্ন করেন, মালহোল্যান্ড কেন জাহাজ ছেড়েছিলেন? মালহোল্যান্ড ছিলেন জাহাজের ‘ডেলিভারি ক্রিউ’-এর সদস্য। জাহাজ বেলফাস্ট হারবার থেকে সাদাম্পটনে পৌঁছলে তাঁর কাজ শেষ হয়। তিনি মূলযাত্রায় অংশগ্রহণের প্রস্তাব পান। কিন্তু, অজ্ঞাত কারণে তিনি শেষ পর্যন্ত নিউ ইয়র্ক যাত্রায় শামিল হননি।জেনির কাহিনি যদি সত্য না-ও হয়, আর একটি বিড়ালের বিষয়ে বহু সংবাদমাধ্যমেই প্রকাশিত হয়েছে। সেই বিড়ালটির নাম অস্কার। ২০০৫ সালে আমেরিকার রোড আইল্যান্ডের স্টিয়ারহাউস নার্সিংহোম অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে অস্কারকে নিয়ে আসা হয়।অস্কারকে নার্সিংহোমে নিয়ে আসা হয়েছিল ‘থেরাপি ক্যাট’ হিসাবে। ‘থেরাপি ক্যাট’দের কাজ অসুস্থ মানুষদের সঙ্গ দেওয়া। অন্য প্রাণীর সঙ্গে সংযোগ মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় বলে মনে করেন মনোবিদদের এক বড় অংশ।অস্কার সেই নার্সিংহোমে আসার কিছু দিনের মধ্যেই সেখানকার কর্মীরা বুঝতে পারেন তার অদ্ভুত ক্ষমতার কথা। তাঁরা লক্ষ করেন, মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তির মৃত্যুর সময় যত এগিয়ে আসে, অস্কার ততই তার ঘনিষ্ঠ হতে থাকে। যদি তাকে রোগীর ঘর থেকে বার করেও দেওয়া হয়, তা হলে সে দোরগোড়ায় বসে থাকে অথবা দরজা আঁচড়াতে শুরু করে।২০০৭ সালে অস্কারের খবর প্রথম জানান ডেভিড ডোসা নামের এক চিকিৎসক। ‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন’-এ প্রকাশিত একটি নিবন্ধে তিনি জানান, অস্কারের এই ক্ষমতাকে তিনি কিছুতেই কোনও নেতিবাচক অর্থে দেখতে রাজি নন।ব্রাউন ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ডোসা ‘মেকিং রাউন্ডস উইথ অস্কার: দ্য এক্সট্রাঅর্ডিনারি গিফট অফ অ্যান অর্ডিনারি ক্যাট’ নামে একটি বইও লেখেন। সেখানে তিনি জানান মৃত্যুপথযাত্রী রোগীর পরিজন ও তাঁদের পরিচর্যাকারীদের কাছে অস্কারের গুরুত্ব যে বিপুল, সে কথাই তিনি তুলে ধরতে চান।অস্কারের যখন ছ’মাস বয়স, তখন থেকেই সে এমন রোগীদের বিছানায় উঠে ঘুমোতে শুরু করে, যাঁরা কয়েক দিন পরেই মারা যাবেন। অস্কারের এই বৈশিষ্ট্য লক্ষ করেন সেই নার্সিংহোমের এক কর্মী।চিকিৎসক ডোসা তাঁর বইয়ে লিখেছেন, এক বার নার্সিংহোমের এক কর্মী এক মুমূর্ষু রোগীর কাছে অস্কারকে রাখেন। কিন্তু, অস্কার সেখান থেকে নেমে এসে অন্য এক রোগীর বিছানায় গিয়ে ওঠে। দেখা যায়, প্রথম রোগী বেঁচে যান। কিন্তু, দ্বিতীয় ব্যক্তির মৃত্যু হয়।ডোসা লিখেছেন, অস্কারের এই আশ্চর্য ক্ষমতার কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা তাঁর জানা নেই। কিন্তু তাঁর মতে, অস্কার মৃত্যুপথযাত্রী কোনও ব্যক্তির সান্নিধ্যে এলে বিশেষ কোনও গন্ধ পায়। ডোসা আরও জানিয়েছেন যে, অস্কারের এই বিশেষ ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের অবস্থা সম্পর্কে বিভিন্ন রকমের অনুসন্ধান সম্ভব হতে পারে। উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি অস্কারের মৃত্যু হয়।অস্কারের উদাহরণ থেকে অনেকেই বিড়ালের এই ‘বিশেষ ক্ষমতা’ সম্পর্কে অনুসন্ধান শুরু করেন। ‘অ্যাপ্লায়েড অ্যানিম্যাল বিহেভিয়র সায়েন্স’ জার্নালে ২০১৭ সালে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে দেখানো হয় যে, তীব্র ঘ্রাণশক্তি, শ্রবণক্ষমতা ও দৃষ্টিশক্তির বাইরে বিড়ালেরা তাপমাত্রার তারতম্যের ব্যাপারেও অতিরিক্ত মাত্রায় সংবেদনশীল। এমন হতেই পারে যে, মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের দেহে তাপমাত্রাগত পরিবর্তন তারা টের পায়।বিড়াল ও মৃত্যুকে নিয়ে বহু অতিপ্রাকৃত কাহিনি সারা পৃথিবীতেই বহু কাল ধরে প্রচলিত। কিন্তু আজও জানা যায়নি, বিড়ালের এমন ক্ষমতা সত্যিই রয়েছে কি না। আর যদি তা থাকেও, তার নেপথ্যের বৈজ্ঞানিক কারণ সঠিক ভাবে জানা যায়নি। তবে টাইটানিকের জেনি আর রোড আইল্যান্ডের অস্কারের ঘটনা আজও অনুসন্ধানীদের কাছে প্রহেলিকা হয়েই থেকে গিয়েছে।