ঢাকা, শনিবার ২৭ই জুলাই ২০২৪ , বাংলা - 

সাভারে রিকশাচালকের পা ভঙ্গলো পুলিশ

এস এম মনিরুল ইসলাম,সাভার:

2024-05-18, 12.00 AM
সাভারে রিকশাচালকের পা ভঙ্গলো পুলিশ

সাভারে লোহার পাইপ দিয়ে পিটিয়ে রিকশাচালকের দুই পা ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে ঢাকা জেলা উত্তর ট্রাফিক বিভাগের র‌্যাকার ড্রাইভার পুলিশ সদস্য সোহেলের বিরুদ্ধে। এসময় বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে র‌্যাকার ইনচার্জ মোস্তফা ওই অটো চালকের কাছ থেকে জোড়পুর্বক সাদা কাগজে সই নেওয়া চেষ্টা চালায় বলেও অভিযোগ করেন ভোক্তভোগি। রিক্সা চালকের উপর এমন নির্যাতনের খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে সকল রিক্সা চালকরা একত্রিত হয়ে একটি আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।শুক্রবার (১৭ মে) সকাল ৭টার টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গেন্ডা কাঁচাবাজার  এলাকায় মো. ফজলুল হক (৩৫) নামের ওই রিকশাচালককে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করে রেকার ড্রাইভার সোহেল। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রিক্সা চালককে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পরার্মশ দেন। পরে আহত রিক্সা চালক ফজলুল হককে সাভার বাজার বাসস্টান্ডের সুপার মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।আহত রিকশাচালক মো. ফজলুল হক দিনাজপুর জেলার হাকিমপুর থানার বনসাপুর এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে। তিনি সাভার পৌরসভার রাজাসন মহল্লার ডেলটার মোড় এলাকার নিজামুদ্দিনের বাড়িতে ভাড়া থেকে অটো রিকশা চালাতেন। 

অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য হলেন ঢাকা জেলা উত্তর ট্রাফিক বিভাগের র‌্যাকার ড্রাইভার মো. সোহেল রানা। শুক্রবার র‌্যাকারচালক সোহেল ও মোস্তফা সাভারে দায়িত্বরত অবস্থায় ছিলেন। তবে এ ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত র‌্যাকার ড্রাইভার সোহেলের মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। ব্যবহ্রত মোবাইল নম্বরটি বন্ধ থাকার কারনে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে র‌্যাকার ইনচার্জ মোস্তফার কাছে জানতে চাইলে মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, ঘটনাটি শুনেছি, আমি ছুটিতে ঢাকায় আছি, সাভারে যেয়ে জানাতে পারবো। তারপর থেকে মোস্তফার ব্যবহ্রত মোবাইলটি খোলা থাকলেও কল রিসিভ করেন নি।


ভুক্তভোগী রিকশাচালক ফজলুল হক বলেন, আমি সকাল ৭ টার দিকে পাকিজার সামনে থেকে এক যাত্রীকে নিয়ে গেন্ডার উদ্দেশ্যে রওনা দেই। এসময় মোটরসাইকেল নিয়ে র‌্যাকারচালক সোহেলসহ দুইজন ধাওয়া করে আমার অটোরিক্সাটি আটক করেই কোন কিছু না বলেই আমার উপর পুলিশ সদস্য সোহেল লোহার রড দিয়ে হামলা করে দুই পা ভেঙে দেয়। এরপর আমি রাস্তায় পড়ে যাই, আর উঠে দাঁড়াতে পারি না। পুলিশের এমন অমানবিক নির্য়াতনের দৃশ্য দেখে স্থানীয়রা এসে ওই পুলিশকে ঘিরে ধরে। তখন অভিযুক্ত সোহেল সবার উদ্দেশ্য বলেন, আমি ভুল করেছি, এখন রিকশাচালককে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। পরে স্থানীয়রা চলে যায়। কিন্তু আমাকে অপর একটি রিকশায় তুলে দিয়ে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে সোহেল পালিয়ে যান। থানা রোডের সাভার প্রেসক্লাবের সামনে ঘটনা শুনে অন্যান্য রিকশাচালকরা বিচারের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। আমার কথা হলো আমার রিকশা নিয়ে যাবে, কিন্তু আমার পা ভেঙে দিল কেন? ভুক্তভোগী ফজলুল হক আরও বলেন, আমার বোনজামাই সরকারি মেডিকেল থেকে সুপার মেডিকেলে নেওয়ার এক থেকে দেড় ঘন্টা পর রেকার ইনচার্জ মোস্তফা এসে আমাকে এক্সরা করাতে বলে। এর কিছুক্ষণ পরে সাদা কাগজ ও কলম নিয়ে এসে আমাকে আর আমার পরিবারকে স্বাক্ষর দিতে চাপসৃষ্টি করেছে।


বিক্ষোভ থেকে রুবেল নামের এক রিকশাচালক বলেন, ভুক্তভোগী ফজলুলকে নিয়ে সরকারি হাসপাতালে যাওয়ার সময় র‌্যাকারচালকদের সঙ্গে থাকা অটোরিকশা আটক করা দুই দালাল আবারও গতিরোধ করেন। পরে অন্যান্য রিকশাচালকরা বিষয়টি জানতে পেরে প্রেসক্লাবের সামনে থানারোড অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। খবর পেয়ে পুলিশ তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। তিনি আরও বলেন, ফজলুল হককে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে কিন্তু ফেরত দেওয়া হয়েছে। পরে তাকে সুপার ক্লিনিকে পাঠানো হয়। আমরা লোকাল রাস্তায় রিকশা চালাই। আমরা গরিব মানুষ, ফজলুর ওপর বর্বরতা দেখে বিচারের দাবিতে সড়কে দাঁড়িয়েছি। র‌্যাকারের এই সোহেল ১ সপ্তাহ যেতে না যেতেই রিকশা ধরে দুই হাজার করে টাকা নেয়।

এঘটনায় অভিযুক্ত সোহেল রানার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে র‌্যাকারচালক মোস্তফা বলেন, আমি ওই রিকশা চালককে মারিনি। তবে আমি আজ র‌্যাকারের দায়িত্বে রয়েছি। আমার নাম তো মোস্তফা, আহতের কাছে জানতে চাইলেই বলবে কে পা ভেঙে দিয়েছে। আমি তো ওর চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। আমি ডিউটিতে এসেই দেখি এসব ঘটনা। সোহেল ডিউটিতে এবং ঘটনাস্থলে ছিলেন। আমি বলেছি আগে চিকিৎসা করো পরে যা হওয়ার হবে। একথা বলে তাকে হাসপাতালে পাঠিয়েছি। এ ব্যপারে জানতে ঢাকা জেলা উত্তর ট্রাফিক পুলিশের অ্যাডমিন হোসেন শহীদ চৌধুরীর সঙ্গে মোবাইলফোনে কল দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।