ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২১ই নভেম্বর ২০২৪ , বাংলা - 

ইজ়রায়েলের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে যাচ্ছে ইরান?

আর্ন্তজাতিক রিপোটার।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2024-04-08, 12.00 AM
ইজ়রায়েলের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে যাচ্ছে ইরান?

যুদ্ধ চলছে ইজ়রায়েলে। প্যালেস্তাইনের সশস্ত্র বাহিনী হামাসের সঙ্গে লড়াই চলছে ইজ়রায়েলি সেনার। কবে এই যুদ্ধে শেষ হবে তা নিয়ে কেউই নিশ্চিত নন। ইজ়রায়েল সরকার বুঝিয়ে দিয়েছে, গাজ়া থেকে হামাসকে নিশ্চিহ্ন করা না পর্যন্ত তারা থামবে না। সেই যুদ্ধে এ বার জড়িয়ে পড়ল ইরানও। শুধু তা-ই নয়, ইজ়রায়েলের সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্বের মধ্যে আমেরিকাকে নাক না গলানোর ‘পরামর্শ’ দিয়েছে ইরান।হামাসের সঙ্গে যুদ্ধের মধ্যেই সিরিয়ায় একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে ইজ়রায়েল। সম্প্রতি, সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসে অবস্থিত ইরানি দূতাবাসে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছিল ইজ়রায়েলের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে। ওই ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় মৃত্যু হয় সাত জনের, যাঁদের মধ্যে ছিলেন ইরানের সামরিক বাহিনীর দুই জেনারেল।এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ তেহরান জানিয়ে দেয়, এই হামলার পর তারা কোনও ভাবেই চুপ করে বসে থাকবে না। ইজ়রায়েলে পাল্টা হামলার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে ইরান। পাশাপাশি, আমেরিকাকে দূরে থাকার ‘পরামর্শ’ও দিয়েছে তারা।ইরানের হুঁশিয়ারির পরই আমেরিকা উদ্বেগপ্রকাশ করেছিল। আমেরিকার কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাইডেন প্রশাসনের এক আধিকারিক দাবি করেন, হামলার আশঙ্কার কথা জানার পরেই ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে ফোন করেছিলেন বাইডেন। সব দিক থেকে ইজ়রায়েলের মানুষের পাশে থাকার কথাও বলেছে আমেরিকা।আমেরিকার বক্তব্য প্রকাশ্যে আসার পর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইরানও। ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসির রাজনীতি বিষয়ক ডেপুটি চিফ অব স্টাফ মহম্মদ জামশিদির দাবি, তাঁদের তরফে ওয়াশিংটনকে বার্তা পাঠানো হয়েছে। সেই বার্তায় বলা হয়েছে, ইজ়রায়েলকে যথাযথ জবাব দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। নিজেদের ক্ষতি এড়াতে এ সবের থেকে যেন দূরে থাকে ওয়াশিংটন।ইরানের হুঁশিয়ারির পর অনেকেই মনে করছেন, খুব শীঘ্রই হামাস-ইজ়রায়েল যুদ্ধ ইরান-ইজ়রায়েল লড়াইয়ে পরিণত হবে। ইরান অনেক আগে থেকেই হামাস-ইজ়রায়েল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। গাজ়ায় হামাসপন্থীদের অস্ত্র সহায়তা করছে ইরান, এমনও খবর প্রকাশ্যে আসে। বিষয়টি ভাল ভাবে নেয়নি নেতানিয়াহু সরকার।হামাসের পাশাপাশি ইরানের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করার ছক কষতে থাকে ই‌জ়রায়েল। অনেকেই মনে করছেন, দামাস্কাসে ইরানি দূতাবাসে হামলা ইজ়রায়েলের এই পরিকল্পনারই অংশ।ইরান এবং ইজ়রায়েলের মধ্যে শত্রুতা নতুন নয়। অতীতে দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক ছিল। ১৯৪৮ সালে যখন ইজ়রায়েল রাষ্ট্র তৈরি হয়েছিল তাদের স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল ইরান। সে সময় দু’দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক এবং সামরিক সম্পর্কও গড়ে ওঠে।তবে এই বন্ধুত্বের মেয়াদ বেশি দিন ছিল না। ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পর থেকেই ইরান এবং ইজ়রায়েলের সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। ইরানের গদিতে বিপ্লবী সরকার বসার পর তারা প্যালেস্টাইনকে সমর্থন করে। তার পর থেকেই ইরান শত্রু হয়ে ওঠে ইজ়রায়েলের।এর পর ইরান ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির পরিকল্পনা এবং পরমাণু প্রকল্প গ্রহণ করার পর দু’দেশের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকে। কারণ, এই সামরিক সিদ্ধান্তকে হুমকি হিসাবে দেখতে শুরু করে ইজ়রায়েল।মধ্যপ্রাচ্যে শুরু হয় আধিপত্যের লড়াই। লেবাননকে ইরান সরাসরি সহায়তা দেওয়া শুরু করে। লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজ়বুল্লা তৈরির ব্যাপারেও ইরান সাহায্য করেছিল বলে জানা যায়। পাল্টা মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামি জ়িহাদকে সাহায্য করে ইজ়রায়েল। অনেকেই মনে করেন, দু’দেশের সম্পর্ক খারাপ হওয়ার নেপথ্যে এই আধিপত্য বিস্তারের লড়াইও দায়ী।ইরানের সামরিক আগ্রাসনকে সব সময়ই হুমকি হিসাবে দেখেছে ইজ়রায়েল। ইরানের পরমাণু ঘাঁটিতে হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছে তারা। যদিও ইরান দাবি করে, তাদের পরমাণু প্রকল্প কোনও ভাবেই অস্ত্র বানানোর ক্ষেত্রে ব্যবহার করার জন্য নয়।ই‌জ়রায়েলের প্রতিবেশী রাষ্ট্র লেবানন এবং সিরিয়াতে ইরানের প্রভাব বিস্তর। ওই দুই দেশেই মিলিশিয়া বাহিনী তৈরি করেছে তেহরান। অনেকের দাবি, এ বার সরাসরি ইজ়রায়েলে হামলা চালাবে ইরান। দু’ভাবে এই হামলা করতে পারে তেহরান। হিজ়বুল্লার মিলিশিয়া বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে অথবা উচ্চপ্রযুক্তির ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েও আক্রমণ করতে পারে ইরান।গত মাসে ইজ়রায়েলের উত্তর সীমান্তের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটেছিল। লেবানন থেকে এই হামলা চালানো হয়েছিল বলে দাবি করা হয়। সেই হামলার ঘটনায় এক ভারতীয়ের মৃত্যু হয়েছিল। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছিল, ইজ়রায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজ়বুল্লা।ইজ়রায়েল-হামাস যুদ্ধের নেপথ্যে আমেরিকাকে এক এবং অদ্বিতীয় ভাবে দায়ী করেছে হিজ়বুল্লা। হিজ়বুল্লা প্রধান এই যুদ্ধের জন্য আমেরিকাকে দুষে বলেছিলেন, ‘‘গাজ়া এবং সেখানকার মানুষের উপর এই আগ্রাসনের জন্য দায়ী একমাত্র আমেরিকা। ইজ়রায়েল ওদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের একটি অস্ত্রমাত্র।’’ তার পর থেকে উত্তর ইজ়রায়েলে একাধিক বার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। পাল্টা হামলা চালায় ইজ়রায়েলও।পর্যবেক্ষকদের মতে, হিজ়বুল্লা গোষ্ঠীর এই সব হামলার নেপথ্যে পরোক্ষ ভাবে ইরানেরই হাত রয়েছে। যদিও এখনও পর্যন্ত ইরান এবং ইজ়রায়েল সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েনি। তবে পরিস্থিতি যে দিকে গড়াচ্ছে তাতে খুব শীঘ্রই ইরান-ইজ়রায়েল যুদ্ধ শুরু হতে পারে, এমন আশঙ্কা করছেন অনেকেই।