১৭ রমজান পেরিয়ে গেলেও কিছুতেই স্বস্তি মিলছে না নিত্যপণ্যের বাজারে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সাধারণ ক্রেতাদের যেন উঠেছে নাভিশ্বাস। রমজানের আগে সরকার ২৯টি পণ্যের দাম র্নিধারণ করে দিলেও দাম কমেনি কোনটির। চাল, ডাল, মাছ, মাংস, তেল, লবণ, ছোলা, চিনি শাক-সবজিসহ সব পণ্যের দামই নাগালের বাইরে। পণ্যের বাজারে রমজান মাসজুড়েই চলছে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। ভোক্তা সাধারণ বলছেন, সরকারের শক্ত কোনো মনিটরিং না থাকায় বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে না। পাইকারি ও খুচরা বাজারের বিক্রেতারা একে অন্যকে দোষারোপ করছেন। টানা চতুর্থবারের মতো নতুন সরকার গঠনের পর ইশতেহারের ঘোষণা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন বাজারব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের ওপর। সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সেই নির্দেশনা পেয়ে কিছুটা তৎপর হতে দেখা গেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোকে। রমজানকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের বাজার মনিটরিংয়ের দায়িত্বে রাখা হয়েছে সরকারের ১২টি সংস্থা। আর এ কাজে রয়েছে প্রায় ৩৫টি টিম। পাশাপাশি বাজার পরিস্থিতির ওপর প্রতিবেদন দিয়ে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়ার কথা টিমগুলোর। কিন্তু সাধারণ ভোক্তা-ক্রেতাদের অভিযোগ, এসব মনিটরিং সংস্থাগুলো যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছে না। আর এই সুযোগে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে; ব্যবসায়ীরা মুনাফা লুটে নিচ্ছে।
একমাত্র জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাজারে অভিযান চালালেও প্রয়োজনের তুলনায় টিম কম হওয়ায় সুফল মিলছে না। এর বাইরেও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, বিএসটিআই, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিং টিমের বাজার তদারকি করার কথা। অথচ বাজারে এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের নাগাল পাওয়া যায় না। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সব সরকারি প্রতিষ্ঠান যদি একসঙ্গে বাজার তদারকি এবং বাজারে অভিযান পরিচালনা করে; তাহলে বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। পাশাপাশি সরকারকে বাজার ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে জোর দেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
প্রতিবছরের মতো এবারও রোজার আগে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল নিত্যপণ্য আমদানির শুল্ক কমানো হয়েছে। দামও কমবে। বাস্তবে হয়েছে উল্টো। তবে গত কয়েক দিন ধরে পিঁয়াজের দাম কিছুটা কমতির দিকে।
রোজায় জনসাধারণকে কিছুটা স্বস্তি দিতে বাজারের লাগাম টানতে সরকার গত ৮ ফেব্রুয়ারি খেজুর, চিনি, সয়াবিন তেল ও চাল আমদানিতে শুল্ক ছাড় দিয়েছিল। সয়াবিন তেল ছাড়া অন্য তিন পণ্যের শুল্ক ছাড়েও দাম কমেনি।
ভ্রাম্যমাণ আদালত, বিএসটিআই, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মনিটরিং টিমের তৎপরতা বাড়িয়ে বাজারে ইতিবাচক কোনো প্রভাব ফেলা সম্ভব হয়নি। সাধারণ ভোক্তারা বলছেন, নিত্যপণ্যের বাজার এখন অনেকটাই অস্থির। মূল্যস্ফীতিও বেশি।
করোনার পর বিশ্বের অন্যান্য দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নানা কার্যকর পদক্ষেপ নিলেও বাংলাদেশ ছিল অনেক পিছিয়ে। ফলে করোনার সময় যে মূল্যস্ফীতি বেড়েছিল, তার আঁচ এখনো রয়ে গেছে। এ পটভূমিতে রোজা কিংবা ঈদের আগে তড়িঘড়ি করে নেওয়া এসব পদক্ষেপ খুব একটা কাজে আসে না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিতে হবে যথাসময়ে। বদলাতে হবে বাজার ব্যবস্থাপনা, বাড়াতে হবে প্রতিযোগীর সংখ্যা।
বাড়তি দামে বিক্রি হতে থাকা মাছ, মাংস, ব্রয়লার মুরগির ধারেকাছেও যেতে পারছেন না নিম্নআয়ের মানুষ। শুক্রবার (২৯মার্চ) নিত্যপণ্যের বাজার ঘুরে দেখা যায়,মাছ,মুরগী,গরুর মাংস,ডাল,ছোলা, পেঁয়াজ, আলুসহ সব পণ্য বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। গরুর মাংস সরকারের বেঁধে দেয়া দাম ৬৬৫ টাকা। কিন্তু ব্যবসায়ীদের খেয়াল খুশি মত ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বয়লার মুরগী ২০০ টাকা, সোনালী ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা এবং দেশী মুরগী ৫২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কাতল মাছ ২৫০ টাকা এবং পাঙ্গাস মাছ ২৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আলু ৪৫ থেকে ৫০ টাকা,পেঁয়াজ ৫৫-৬৫ টাকা,রসুন ১২০ টাকা, আদা ২০০ টাকা। এ ছাড়াও মসুর ডাল (চিকন) ১৪০ টাকা, ছোলা ১০৫-১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে উচ্চ দরে তরমুজ বিক্রির প্রতিবাদ করায় গত কয়েক দিন ধরে তরমুজ কেনা থেকে বিরত থাকছেন অনেকেই। যার একটা প্রভাব পড়েছে তরমুজের বাজারে। কিছুটা দামও কমেছে।
তবে অন্যান্য ফলে যেমন- আপেল, কমলা, আঙ্গুর, সফেদা, বেদানা, পেয়ারা, পেঁপের দাম এখনো আকাশচুম্বী। চাল ও ডালের বাজার তো আরও আগে থেকেই ঊর্ধ্বমুখিতা বজায় রেখেছে। এ জন্য টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে চাল, ডাল, তেল, ছোলা, পিঁয়াজ সরবরাহ করেও বাজারে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি সরকার। তবে সাশ্রয়ী মূল্যে এসব পণ্য সরবরাহ করায় কিছু মানুষের উপকার হয়েছে; যা অস্বীকার করা যায় না। তবে এটা খুবই অপ্রতুল।