পাহাড়প্রেমীদের কাছে প্রিয় শৈলশহর শিমলা। হিমালয়ের কোলে শিমলার যে কোনও প্রত্যন্ত গ্রামও ছবির মতোই সুন্দর। পাহাড়ি রাস্তার বাঁকে বাঁকে ঘুরলেই মন ভাল হয়ে যায় পর্যটকদের। কিন্তু এই পাহাড়ি রাস্তায় ঘোরার সময় পর্যটক এবং স্থানীয়দের একাংশ এমন ধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন যা ‘ব্যাখ্যাহীন’।হিমাচল প্রদেশের শিমলার পাহাড়ের বুক চিরে এঁকেবেঁকে গিয়েছে কিঙ্গল রোড। এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অভিভূত হয়ে যান পর্যটকেরা। এমনকি স্থানীয়দের মতেও শিমলার সবচেয়ে সুন্দর রাস্তাগুলির মধ্য কিঙ্গল রোড অন্যতম।কিন্তু সন্ধ্যা নামলেই কিঙ্গল রোড সকলের কাছে ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রাণের দায়ে এই রাস্তা দিয়ে ভুল করেও যাতায়াত করেন না কেউ। নেপথ্যে কী কারণ?স্থানীয়দের অধিকাংশের দাবি, সন্ধ্যার পর কিঙ্গল রোড ধরে হেঁটে যাওয়ার সময় তাঁরা হঠাৎ মানুষের চিৎকার শুনতে পান। চিৎকার শুনে মনে হয়, কেউ যন্ত্রণায় ছটফট করছে। অথচ আশপাশে কাউকে দেখতে পান না তাঁরা।কিঙ্গল রোডে যাতায়াতের সময় যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করতে হয় বলে স্থানীয় এবং পর্যটকদের দাবি। সামান্য অন্যমনস্ক হলেই পাহাড়ি রাস্তায় দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে। এমনকি কিঙ্গল রোডে পথ দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানা যায়।স্থানীয়দের দাবি, কিঙ্গল রোডে যাঁরা মারা গিয়েছেন তাঁদের ‘আত্মা’ সেখানেই ঘোরাফেরা করে। সন্ধ্যার পর তাঁদের চিৎকারই শোনা যায় রাস্তার ধারে।শুধু চিৎকারই নয়, স্থানীয়দের দাবি, সন্ধ্যার পর কিঙ্গল রোড ধরে গেলে তাপমাত্রা হঠাৎ করেই এক লাফে অনেকটা কমে যায়। শরীর ভারী হয়ে যায় বলেও দাবি করেছেন অনেকে।সন্ধ্যার পর স্থানীয়েরা কিঙ্গল রোড এড়িয়েই চলেন। তাঁদের ধারণা, ওই রাস্তায় পথ দুর্ঘটনায় যাঁরা মারা গিয়েছেন তাঁদের ‘অতৃপ্ত আত্মা’ ঘোরাফেরা করে। এমনকি রাতে অদ্ভুত ধরনের আলোও দেখা যায় রাস্তায়।স্থানীয়দের দাবি, ঘড়িতে রাত দু’টো বাজলেই কিঙ্গল রোডে অদ্ভুত রকমের আলো জ্বলতে থাকে। কিন্তু সেই আলোর উৎসের সন্ধান খুঁজে পাওয়া যায় না। কয়েক সেকেন্ড জ্বলার পর আবার তা নিভে যায়। সেই আলোগুলি ‘চলন্ত’ বলেও দাবি করেছেন অনেকে।রাতে কোনও প্রয়োজন হলে তবেই কিঙ্গল রোড দিয়ে যাতায়াত করেন স্থানীয় এবং পর্যটকেরা। লোকমুখে শোনা যায়, সাদা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ছায়ামূর্তিও নজরে পড়েছে অনেকের।স্থানীয়দের অধিকাংশের দাবি, কিঙ্গল রোড দিয়ে যাওয়া গাড়িতে বিনা খরচে ভ্রমণ করছিলেন এক মহিলা (সাধারণত ‘হিচহাইকার’ নামে যাঁরা পরিচিত)। শিমলা যাওয়ার পথে কিঙ্গল রোডে পথ দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। মৃত্যুর সময় তাঁর পরনে সাদা পোশাক ছিল।পর্যটক এবং স্থানীয়দের অধিকাংশের দাবি, কিঙ্গল রোডে রাতে যাতায়াতের সময় সাদা পোশাক পরিহিত ছায়ামূর্তিটি মহিলা ‘হিচহাইকার’-এর। রাস্তায় কোনও গাড়ি অতিক্রম করলেই তাঁর ‘প্রেতাত্মা’ দেখা দেয় পর্যটকদের।পর্যটকদের অধিকাংশের মতে, রাতে কিঙ্গল রোড দিয়ে গাড়ি চালানোর সময় তাঁরা এক মহিলাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছেন। অথচ গাড়ি থামানোর পর লক্ষ করে দেখেছেন সেই রাস্তা ফাঁকা। মুহূর্তের মধ্যে নিরুদ্দেশ হয়ে যায় সেই ছায়ামূর্তি।কিঙ্গল রোড দিয়ে যাওয়ার সময় রাতে আলো জ্বলে উঠতেও দেখেছেন পর্যটকদের অধিকাংশ। প্রথমে ভেবেছিলেন ঘুমচোখে ভুল দেখছেন। বিদ্যুতের আলোর ঝলকানিও ভেবেছেন অনেকে। কিন্তু শুকনো আবহাওয়াতেও রাস্তার নানা জায়গায় আলো ভেসে বেড়াতে লক্ষ করেছেন তাঁরা।কিঙ্গল রোড যে ‘ভূতুড়ে’ তা নিয়ে শিমলায় ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদেরও গল্প শোনান স্থানীয়েরা। তাঁদের মনের মধ্যে রাস্তাটি ঘিরে এত ভয় রয়েছে যে তাঁরা বাকিদেরও সেই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে বারণ করেন। তবে কেউ কেউ আবার এগুলি মনগড়া কাহিনি ভেবে উড়িয়েও দিয়েছেন। তবে সব ঘটনার ব্যাখ্যা নেই তাঁদের কাছেও।