চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ঘটে গেলে চাকরি হারাবে দেশের ৫৫ লাখ মানুষ। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় চীনের কাছ থেকে তিন হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে সরকার।বলা হচ্ছে, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ঘটে গেলে গতানুগতিক কাজগুলো করবে মেশিন বা রোবট। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় দক্ষতা অর্জনের বিকল্প নেই।বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের পর প্রথম শিল্প বিপ্লব ঘটে ১৭৮৪ সালে, দ্বিতীয়টি ১৮৭০ সালে বিদ্যুৎ আবিষ্কারের পর, আর ১৯৬৯ সালে ইন্টারনেটের আবিষ্কারের পর শুরু হয় তৃতীয় শিল্পবিপ্লব। প্রতিটির প্রভাব মানুষের ওপর সরাসরি পড়েছে।বলা হচ্ছে, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মূলত ডিজিটাল বিপ্লব। এটা বাংলাদেশের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবিলায় ‘ইস্টাবলিশমেন্ট ডিজিটাল কানেক্টিভিটি’ নামের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ৫৭টি সেন্টারে সেন্ট্রাল ক্লাউড প্লাটফর্ম এবং ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি সেন্টার অব এক্সিলেন্স স্থাপন করা হবে। ১ লাখ ৯ হাজার ২৪৪টি ব্রডব্যান্ড অ্যান্ড ইউজার কানেক্টিভিটি স্থাপনের পাশাপাশ ১০ হাজার শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হবে। যাতে করে তরুণ প্রজন্ম চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবিলার পাশাপাশি আইসিটি খাতে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়।
জানা গেছে, সারা দেশে ডিজিটাল সংযোগ স্থাপনে ৩ হাজার ৩৭৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ঋণ দেবে বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী চীন। ঋণের ধরন পারফারেনশিয়াল বায়ার ক্রেডিট।
প্রকল্পের মোট ব্যয় ৫ হাজার ৮৮৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। বাকি ২ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা সরকারি অর্থায়ন থেকে মেটানো হবে।
আইসিটি বিভাগ সূত্র জানায়, প্রযুক্তির প্রসারে ২০২৮ সালের মধ্যে ৮০০ মিলিয়নের বেশি লোক চাকরি হারাবে সারা বিশ্বে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অগ্রসর প্রযুক্তির ফলে ৫৫ লাখ চাকরি চিরকালের মতো হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। অন্যদিকে নতুন ধরনের কাজের সুযোগও তৈরি হবে। চ্যালেঞ্জ হলো একেবারে হারিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে কী করে রূপান্তরিত প্রযুক্তি দিয়ে আরও বেশি লাভজনক কর্মসুযোগ সৃষ্টি করা যায়। করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি ভয়াবহ হুমকির মধ্যে রয়েছে ২০২৮ সালের আগেই। চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি এক ধাক্কায় ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ থেকে ২ থেকে ৩ শতাংশ হবে।
এই জন্য প্রকল্পের আওতায় সরকারের সেবাগুলোকে ই-সেবায় রূপান্তরের মাধ্যমে জনগণের কাছে দ্রুত ও সহজে পৌঁছে দেওয়া এবং সকল ক্ষেত্রে আইসিটির ব্যবহার বৃদ্ধিকল্পে প্রয়োজনীয় আইসিটি অবকাঠামো স্থাপন করা হবে। চলতি সময় থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ।
অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অনুবিভাগ) বিকর্ণ কুমার ঘোষ বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব আমাদের সামনে অন্যতম চ্যালেঞ্জ। এর ফলে অনেক মানুষ চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে থাকবে। এই ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। প্রকল্পটি মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তোলা হবে।
তিনি আরো বলেন, প্রকল্পের আওতায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইসিটি ল্যাব হবে। গ্রাম পর্যায়ে ডিজিটাল ভিলেজ রুপ দিতে ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করা হবে। প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়ানো হবে। এর মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ করে তোলা হবে মূলত কর্মসংস্থানে নিরাপত্তা দেওয়াসহ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য।
আইসিটি বিভাগ সূত্র জানায়, জেলা ও উপজেলা কমপ্লেক্সে আইসিটি অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। নেটওয়ার্ক অপারেশন সেন্টার, প্রশিক্ষণ সুবিধাদি, ৫৫৫টি ডিজিটাল সার্ভিস অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট ট্রেনিং সেন্টার, মাঠ পর্যায়ের ক্লাউট ফাইল সার্ভিস অ্যান্ড ডিজিটাল স্টোরেজের জন্য কেন্দ্রীয় সার্ভার অবকাঠামো স্থাপন করা হবে। আইসিটি ল্যাব, স্মার্ট ভার্চ্যুয়াল ক্লাসরুম এবং ডিসটেন্স লার্নিং প্লাটফর্মসহ প্রয়োজনীয় আইসিটি অবকাঠামো সুবিধাসম্বলিত একটি ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টার স্থাপন করা হবে। সিভিল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস বাস্তবায়নের জন্য সার্ভার স্থাপন করা হবে। মাঠ পর্যায়ে ৫ হাজার ৫০০টি এনরোলমেন্ট অবকাঠামো স্থাপন এবং ১৭ হাজার ৩১৪টি সার্ভিস ডেলিভারি ডিভাইস বিতরণ করা হবে।
আইসিটি বিভাগ সূত্র আরও জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত হবে, প্রান্তিক পর্যায়ে ছাত্র-ছাত্রীসহ সকলের তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কিত জ্ঞন ও সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষায়িত জ্ঞানচর্চা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রকল্পটি সার্বিক অর্থে সকল নাগরিকের জন্য ডিজিটাল সেবা গ্রহণ, জ্ঞানভিত্তিক দক্ষ সমাজ গঠন এবং কর্মসংস্থান ও নতুন কাজ সৃষ্টিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার ‘আমার গ্রাম আমার শহর ও তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের সমৃদ্ধি বাস্তবায়নেও প্রকল্পটি ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। প্রকল্পের আওতায় আইসিটির যথাযথ ও নিরাপদ ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ সকল সর্বনিম্ন স্তরের সরকারি অফিসসমূহের মধ্যে কানেক্টিভিটিসহ ই-লার্নিংয়ের সুযোগ সৃষ্টি এবং সুশাসন নিশ্চিত হবে।